কানাডা থেকে তিনটি উড়োজাহাজ কিনছে সরকার

ফাইল ছবি

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের জন্য নতুন তিনটি টার্বোপ্রপ (ড্যাশ-৮-কিউ ৪০০এনজি) কেনার জন্য চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। কানাডার বিমান নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোম্বার্ডিয়ার ইনকরপোরেশনের কাছ থেকে এই বিমান কেনা হচ্ছে।

বুধবার (০২ আগস্ট) সচিবালয়ে বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে কানাডার বম্বার্ডিয়ার ইনকরপোরেশনের সঙ্গে এই ক্রয় চুক্তি করেছে বাংলাদেশ বিমান।

বিমানের এমডি মোসাদ্দিক আহমেদ ও কানাডিয়ান ইন করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান কার্ল মার্কিটি ক্রয় চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।

অনুষ্ঠানে বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী একেএম শাহজাহান কামাল, মন্ত্রণালয়ের সচিব মহিবুল হক, বিমান বোর্ডের চেয়ারম্যান এয়ার মার্শাল (অব.) ইনামুল বারি, বোম্বারডিয়ায়ের রিজিওনাল ডিরেক্টর রব বারডিকিন উপস্থিত ছিলেন।

সূত্র জানায়, বাংলাদেশের পতাকাবাহী বিমানবহরে উড়োজাহাজের স্বল্পতার কারণে একে একে অনেক রুট হারাতে হয়েছে। উড়োজাহাজ সংকট কাটাতে ৭০ থেকে ৮০ আসন বিশিষ্ট তিনটি টার্বোপ্রপ (ড্যাশ৮-কিউ৪০০এনজি) উড়োজাহাজ ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত ‘বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস লিমিটেড’। এ ধরনের উড়োজাহাজের একমাত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠান কানাডার ‘বম্বারডিয়ের ইঙ্ক’ এই উড়োজাহাজ সরবরাহ করবে। উড়োজাহাজ ক্রয়ে কানাডা সরকার থেকে প্রয়োজনীয় ঋণও নেবে বাংলাদেশ বিমান।

বেসরকারি বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে (জি টু জি) সরাসরি ক্রয় চুক্তির মাধ্যমে এই উড়োজাহাজ তিনটি ক্রয় করা হবে।

মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান তুহিন জানিয়েছেন, বুধবার সকাল ১১টায় বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে কানাডার বোমবারডিয়ার ইনক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে উড়োজাহাজ ক্রয়ের চুক্তি অনুষ্ঠিত হবে।

কানাডার বোমবারডিয়ার ইনক নামের প্রতিষ্ঠানটি প্রতিটি উড়োজাহাজের নিট মূল্য প্রস্তাব করে ২২.৪২২ মিলিয়ন ডলার। সে হিসাবে উড়োজাহাজ ৩টির মোট মূল্য দাঁড়ায় ৬৭.২৬৬ মিলিয়ন ডলার। অবশ্য এ দর উড়োজাহাজ সরবরাহের সময়ে অ্যাসকালেশন ফ্যাক্টর (ধাপে ধাপে বৃদ্ধি) অনুযায়ী পুনর্নির্ধারিত হবে। প্রস্তাবটি পরীক্ষার জন্য সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থার প্রতিনিধির সমন্বয়ে গঠিত ৬ সদস্যের কমিটি করা হয়। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ক্রয়প্রস্তাবে অনুমোদন দেয় মন্ত্রণালয়।

সে অনুযায়ী কানাডা সরকারের কনট্রাকটিং অর্গানাইজেশন হিসেবে কানাডিয়ান কমার্শিয়াল করপোরেশন (সিসিসি) এবং বাংলাদেশ বিমানের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে।

সিসিসি থেকে পাঠানো প্রস্তাব অনুযায়ী উড়োজাহাজের মূল্যের প্রায় ৮০ শতাংশ টাকা দেবে কানাডা সরকারের ফিন্যানসিং অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স এজেন্সি ‘এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট কানাডা (ইডিসি)’। এরপর অর্থ ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে ইডিসির সক্ষমতা যাচাই করতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়। বাংলাদেশ বিমানকে ঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে ইডিসির আর্থিক সক্ষমতা যাচাই করে জরুরি ভিত্তিতে প্রতিবেদন জমা দেয়।

বিমান সূত্রে জানা যায়, বিমান পরিচালনা পর্ষদের ১৭৯তম সভায় এ নিয়ে আলোচনা হয়। সামগ্রিক বিষয় পর্যালোচনার পর বোমবারডিয়ার কোম্পানির উড়োজাহাজ কেনার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়।

প্রসঙ্গত, এর আগে বোয়িং কেনার সময় ডেলিভারি পেমেন্ট বাবদ স্বল্প সুদে ঋণ দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছিল কানাডীয় প্রতিষ্ঠান মারিয়ানা প্রাইভেট লিমিটেড। পরবর্তীতে ঋণ না দেওয়ায় টাকা পরিশোধ নিয়ে বিপাকে পড়ে বিমান কর্তৃপক্ষ। পরিস্থিতি সামাল দিতে তাৎক্ষণিক নিজস্ব উৎস এবং অন্যান্য ব্যাংকের সহায়তা নিতে বাধ্য হয়েছিল সংস্থাটি। তাই এবার ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানের আর্থিক সক্ষমতা যাচাইয়ে বেশি জোর দিয়েছে বিমান কর্তৃপক্ষ।

জানা যায়, বর্তমানে রাষ্ট্রায়ত্ত বাংলাদেশ বিমানের বহরে মোট ১৩টি উড়োজাহাজ রয়েছে। এর মধ্যে ছয়টি বিমানের নিজস্ব, অপর সাতটি ভাড়ায় সংগৃহীত। বিমানের নিজস্ব উড়োজাহাজের মধ্যে চারটি বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআর ও দুটি বোয়িং ৭৩৭-৮০০। ভাড়ায় সংগৃহীত উড়োজাহাজগুলোর মধ্যে একটি উড়োজাহাজ অভ্যন্তরীণ রুটে (ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী, সৈয়দপুর, যশোর, বরিশাল ও কক্সবাজার) এবং একটি উড়োজাহাজ আন্তর্জাতিক রুটে (ঢাকা, কলকাতা, কাঠমান্ডু, ইয়াংগুন) ব্যবহার করা হচ্ছে। এসব রুটে পর্যাপ্ত যাত্রী সেবার সুযোগ থাকায় বাংলাদেশ বিমানের বহরে দীর্ঘ মেয়াদে নিজস্ব উড়োজাহাজ বাড়ানো প্রয়োজন বলে মনে করছে সংস্থাটি।

আজকের বাজার/এমএইচ