পুঁজিবাজারে কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়ার আহবান জানিয়েছে সিএসই

পুঁজিবাজারের তারল্য সঙ্কটের সমাধানের স্বার্থে কালো টাকাকে বিনাশর্তে বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়ার আহবান জানিয়েছেন চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম ফারুক।

রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় সিএসইর ঢাকা অফিসে ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ আহবান জানান।

এসময় তিনি বলেন, বাংলাদেশের কালো টাকা বা অপরিদর্শিত আয় বিদেশে পাচার হওয়ার আশঙ্কায় সরকার কয়েকটি খাতে বিনিয়োগের সুযোগ দিয়েছে এগুলোর সাথে পুঁজিবাজারকে বিবেচনা করা যেতে পারে। পুঁজিবাজারে কালোটাকা বিনিয়োগের সুযোগ দিলে বাজারের তারল্য প্রবাহ বাড়বে সঙ্কট কমবে।

শেয়ারবাজারের টেকসই উন্নয়ন এবং গুণগত সম্প্রসারণের জন্য চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মাধ্যমে সরকারের কাছে ৮টি প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেছে। এর মধ্যে করমুক্ত লভ্যাংশের সীমা প্রস্তাবটি আংশিকভাবে গ্রহণ করা হয়েছে। সিএসইর বাকি প্রস্তাবনার বিষয়গুলো পুনর্বিবেচনার জন্য সিএসইর পক্ষ থেকে অর্থমন্ত্রীকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

তিনি বলেন, এবারের বাজেটে অপ্রদর্শিত আয় নির্দিষ্ট করা প্রদানের সাপেক্ষে বৈধ করণের বিধান রাখা হয়েছে যা ফ্ল্যাট, জমি কেনা এবং ইকোনমিক জোনে বিনিয়োগ করা হবে। এক্ষেত্রে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের জন্য কোন বিশেষ সুবিধা দেয়া হয়নি। পাচার রোধ করা ও বিনিয়োগের স্বার্থে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনা প্রশ্নে নির্দিষ্ট পরিমান কর দেয়া সাপেক্ষে শেয়ারবাজারেও বিনিয়োগের সুযোগ দেয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন সিএসইর কোম্পানি সচিব রাজীব সাহা, ডিজিএম হাসনাইন বারী প্রমুখ।

প্রস্তাবনার মধ্যে রয়েছে : তালিকাভুক্ত কোম্পানিসমূহের বিদ্যমান কর হার ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ কা হলে ভালো কোম্পানিসমূহ শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হবে, যা শেয়ারবাজারকে সমৃদ্ধ করবে এবং স্বচ্ছ কর্পোরেট রিপোটিং এর মাধ্যমে রাজস্ব আদায়ও বৃদ্ধি পাবে; নতুন তালিকাভুক্ত কোম্পানিসমূহের আয় তিন বছর করমুক্ত রাখা হলে অতালিকাভুক্ত কোম্পানিসমূহ তালিকাভুক্ত হতে উৎসাহিত হবে। এতে শেয়ারবাজারে গুণগত মানসম্পন্ন শেয়ারের যোগান বাড়বে যা বাজারে লেনদেন বৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতা আনয়নে ভূমিকা পালন করবে; প্রস্তাবিত বাজেটে এসএমই কোম্পানিসমূহের করমুক্ত আয় সীমার জন্য বার্ষিক লেনদেন ৩৬ লক্ষ থেকে ৫০ লক্ষ টাকা বাড়ানো হয়েছে। স্টক এক্সচেঞ্জের নতুন প্রবর্তিত এসএমই বোর্ড বাস্তবায়ন, একটি মানসম্মত কর্পোরেট কাঠামো এবং রিপোর্টিং এর মাধ্যমে প্রত্যক্ষ কর বাড়গানোর জন্য এসএমই কোম্পানিসমূহকে ৩ বছর শূন্য হার কর নির্ধারণ করার প্রস্তাব পুন:ব্যস্ত করছি; ঘোষিত বাজেটে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত লভ্যাংশ আয়কে করমুক্ত রাখার প্রস্তাব কবরা হয়েছে, যা আমাদের প্রস্তাবিত সীমা ১ লক্ষ টাকায় উন্নীত করার জন্য অনুরোধ করছি; দেশের অর্থনীতির আকার এবং ব্যাংকিং খাতের অস্থিরতার প্রেক্ষিতে একটি শক্তিশালী বন্ড মার্কেট তৈরির লক্ষ্যে সকল প্রকার বন্ড থেকে প্রাপ্ত আয়কে করমুক্ত রাখা এবং জিরো কূপন বন্ড থেকে প্রাপ্ত আয়য়ের করমুক্ত সুবিধা ব্যাংক, ইন্স্যুরেন্স ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ সকল করদাতাকে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব পুন:বিবেচনার আহবান করছি; ২০১৩ সালের অর্থ আইন অনুযায়ী ৫৩ বিবিবি ধারা থেকে বন্ড ডিলিট করা হয়। কিন্তু অন্যান্য আইনে সিকিউরিটিজ এর সংজ্ঞায় বন্ড অন্তর্ভুক্ত থাকা”য় বন্ড লেনদেনের উপর ০.০৫ শতাংশ হারে উৎসে কর কর্তন কা হয়। একটি শক্তিশালী এবং পৃথকত বন্ড মার্কেট গঠনের লক্ষ্যে স্পষ্টভাবে উক্ত ধারা থেকে বন্ড লেনদেনেকে অব্যহতি রাখা প্রয়োজন বলে মনে করছি; এডিবি ও বাংলাদেশ সরকারের মদ্যে সম্পাদিত ঋণ চুক্তির শর্ত হিসেবে প্রণীত ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন আইন দ্রুত বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমরা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছি। ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন প্রক্রিয়া বাস্তবায়নের সরকারও আমাদের সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করে আসছে; বর্তমানে সিএসই ক্রমহ্রাসমান হারে আয়কর প্রদান করে, যা এই অর্থবনছরে শেষ হবে। এক্সচেঞ্জ ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন আইন ২০১৩ এর বিধান অনুযায়ী মোট ইস্যুকৃত শেয়ারের শতকরা পঁচিশ ভাগ কৌশলগত বিনিয়োগকারীরর নিকট বিক্রয় করতে হবে। সিএসই এখনো আইন অনুযায়ী কৌশলগত বিনিয়োগকারীয় নির্ধারণ করতে পারেনি। কৌশলগত বিনিয়োগকারীর নিকট শেয়ার বিক্রিয়ের জন্য চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জকে (সিএসই) পাঁচ বছরে জন্য কর অব্যহতির সুবিধা দেয়া হলে ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন আইন অনুযায়ী কৌশলগত বিনিয়োগকারী পেতে সহায়ক হবে এবং একই সাথে তুলনামূলক ছোট এক্সচেঞ্জ হিসেবে দেশের শেয়ারবাজারে যথাযথ ভূমিকা পালনে সক্ষম হবে এবং স্টক ব্রোকারদের উৎসে কর কর্তনের হার পুন: নির্ধারণের জন্য বারংবার অনুরোধ সত্ত্বেও এই হার পূর্ববর্তী ০.০৫ শতাংশ বহাল রাখা হয়েছে। অধিকাংশ ব্রোকিং হাউজ বর্তমানে লোকসানী প্রতিষ্ঠানে পরিবর্তিত হওয়া সত্ত্বেও এসকল ব্রোকারেজ হাউজগুলো থেকে ক্রম বর্ধমান হারে কর আদায় আয় করের মৌলিক নীতিরও পরিপন্থী বলে আমরা মনে করি। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে স্টক ব্রোকারদের উৎসে কর কর্তনের হার ২০০৬ সালে চালুকৃত হারে অর্থাৎ ০.০১৫ শতাংশে পুন: নির্ধারণের জোর দাবি জানাচ্ছি।