কুড়িগ্রামে ভয়াবহ ভাঙনে শতাধিক বসতঘর ব্রহ্মপুত্রের পেটে

কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নে বন্যার পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে ভয়াবহ ভাঙন শুরু হয়েছে। গত এক সপ্তাহের ভাঙনে শতাধিক বসতঘর ব্রহ্মপুত্রের পেটে চলে গেছে। আতঙ্কের মধ্যে বসবাস করছেন হাতিয়ার লক্ষাধিক মানুষ।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এই ইউনিয়নে হুমকির মুখে রয়েছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ, ইউনিয়ন পরিষদ ভবন, ৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ৩টি মসজিদ, ১টি কমিউনিটি ক্লিনিকসহ ১টি বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র। ভাঙন কবলিত এলাকার মানুষজন পরিবার ও গবাদিপশু নিয়ে পার্শ্ববর্তী এলাকায় আশ্রয় নিচ্ছেন। অথচ কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

প্রায় ২০ দিন বন্যার সাথে যুদ্ধ করে বেঁচে আছে ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, ধরলা, দুধকুমারসহ ১৬টি নদ-নদী অববাহিকার ৯ লাখ ৫৮ হাজার বানভাসি মানুষ। এলাকাবাসী আশঙ্কা করছে, ব্রহ্মপুত্র নদের বাঁধ ভেঙে গেলে উলিপুর ও চিলমারী উপজেলার বেশির ভাগ এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়বে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, জেলা শহর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে উলিপুর উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়ন। এই ইউনিয়নের পাশ দিয়ে ছুটে চলেছে খরস্রোতা ব্রহ্মপুত্র নদ। ভয়াবহ ভাঙন শুরু হয়েছে এই হাতিয়া ইউনিয়নে। গত ৩-৪ বছরের ভাঙনে এই ইউনিয়নের তিন ভাগের দুই ভাগ এলাকা ব্রহ্মপুত্র নদের করাল গ্রাসে বিলীন হয়ে গেছে।

উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নের নয়াডারা, কামারটারী, পালের ভিটা, হাতিয়া ভবেশ গ্রামসহ ভাঙন কবলিত প্রায় ৩ কিলোমিটার এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ভাঙন কবলিত এলাকার মানুষজন তাদের বাড়ি-ঘর অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন।

ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত ৬০ বছরের বৃদ্ধ আবুল কাশেম বলেন, ‘সউগ গেলো রে বাবা, এ্যালা হামরা কটে যে থাকমো আল্লায় জানে’। ব্রহ্মপুত্র নদের দিকে তাকিয়ে বিষন্ন চোখে তিনি আরও বলেন, নদের ওই খানে বাপ-দাদার কবর ছিলো। সেসব এখন শুধুই স্মৃতি।

নয়াদাড়া গ্রামের আব্দুল হাকিম বলেন, চার একর ধানি জমি ছিল, এখন সবকিছু হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছি। রাস্তা কিংবা অন্যের জায়গায় আশ্রয় নিয়ে বাকি জীবনটা কাটাতে হবে। এছাড়া সৈয়দ আলী, মেহের আলী, নুরুজ্জামান সহ এলাকার সবারই একই অবস্থা।

হাতিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আবুল হোসেন বলেন, ভাঙনের কবল থেকে রক্ষা পেতে ব্রহ্মপুত্র নদের ডান তীরে বাঁধ নির্মাণ করা হয়। এখন সেটিও নদী গর্ভে চলে যাচ্ছে। এভাবে নদী ভাঙন অব্যাহত থাকলে মূল বাঁধসহ ইউপি ভবন ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো রক্ষা করা সম্ভব হবে না।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম বলেন, ভাঙন রোধে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।

সূত্র – ইউএনবি