ক্যাঙ্গারু দ্বিগুণ হলেও,চারগুণ কমেছে বাঘ

প্রকৃতির কোনো অবস্থা বদলে যাওয়ার জন্য সাত বছর দীর্ঘ সময় না হলেও,তবে এ সময়ে পৃথিবীর দুইটি দেশের প্রকৃতিতে ঘটে গেছে বিপরীতমুখী দুই ঘটনা। ঘটনা দুইটি অতি সম্প্রতি ক্রিকেটে একটি টেস্ট সিরিজ ড্র করা দুই দেশের।

কয়েকদিন আগে ঢাকা ও চট্টগ্রামের ক্রিকেট মাঠে টাইগার আর ক্যাঙ্গারুরা মুখোমুখি হয়। ১১ বছর পরে ক্রিকেটের মাঠের লড়াইয়ে টাইগার আর ক্যাঙ্গারুরা সমান নৈপূণ্য দেখালেও, বনাঞ্চলে তাদের বিচরণ ও সংখ্যার চিত্র অনেক বেশি বিপরীতমুখী।

২০১০ সালের পরে থেকে বাংলাদেশের বনাঞ্চলে, যেখানে জাতীয় পশু বাঘের সংখ্যা কমেছে চারগুণেরও বেশি, সেখানে অস্ট্রেলিয়াতে দেশটির জাতীয় পশু ক্যাঙ্গারুর সংখ্যা বেড়েছে দ্বিগুণ।

বাংলাদেশ বন বিভাগের তথ্য মতে ২০১০ সালে দেশে মোট বাঘ ছিল ৪৪০টি। সাত বছর পরে ২০১৭ সালে জাতীয় পশুর সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ১০৬টিতে।

বিপরীতে অস্ট্রেলিয়ার বন বিভাগের তথ্য বলছে ২০১০ সালে তাদের দেশে জাতীয় পশু ক্যাঙ্গারুর সংখ্যা ছিল আড়াই কোটি, সেখানে মাত্র ছয় বছরের ব্যবধানে ২০১৬ সেই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪ কোটি ৫০ লাখে।

বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিচরণ ও প্রজননে বাধাগ্রস্ত হয়েই বাঘের সংখ্যা দিন দিন কমছে। এছাড়া চোরাচালানও বাঘের সংখ্যা কমার অন্যতম কারণ।

সুন্দরবনে বাংলাদেশ অংশের ৬ হাজার বর্গকিলোমিটারের মধ্যে ৪ হাজার ৮৩২ বর্গকিলোমিটার এলাকায় বাঘ বিচরণ করে। এদের বিচরণের প্রধান ক্ষেত্র বাগেরহাটের কটকা, কচিখালী ও সুপতিসহ খুলনার নীলকমল, পাটকোষ্টা ও গেওয়াখালী এবং সাতক্ষীরার মুন্সিগঞ্জ, দোবেকি ও কৈখালী এলাকা। ওই সব এলাকার কাছাকাছি দিন দিন সব ধরনের ভারী শিল্প ও কলকারখানা তৈরির হার

বাড়ছে। বাড়ছে নৌযান চলাচল সংখ্যাও। এসবের কারণে বাঘের বিচরণ বিঘ্নিত হচ্ছে।

বনের ঘনত্ব কমে আসায় প্রজনন প্রক্রিয়া ব্যঘাত ঘটছে। কারণ নির্জন স্থান ছাড়া বাঘ প্রজনন ক্রিয়ায় অংশ নেয় না।

এছাড়া বাঘের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ এখনও সনাতনী ওষুধ, শ্যাম্পু ও টনিকের জন্য বিশাল বাজার আছে কয়েকটি দেশে। এ কারণে বাঘ শিকারের প্রতি এক শ্রেণীর মানুষের আগ্রহ আছে। তারা বাঘ শিকার করে বাঘের চামড়া, হাড় পাচার করে।

অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়ার অনুকূল পরিবেশ, আইনের বাস্তবায়ন ও জনসচেতনার কারণে ক্যাঙ্গারুর সংখ্যা বেড়েছে বলে বলছে বিদেশি সংবাদমাধ্যম। দেশটির পরিবেশবিদদের বরাত দিয়ে বিবিসি বলছে, অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতে খাদ্য উৎপাদনও হয়েছে প্রচুর। আর এ কারণে উল্লেখযোগ্য হারে ক্যাঙ্গারুর বংশবৃ্দ্ধি হয়েছে। এছাড়া অস্ট্রেলিয়ায় পশু শিকারের বিধিনিষেধ নিয়ে প্রত্যেকটি রাজ্যে নিজস্ব আইন ও কোটা রয়েছে। ব্যবসার জন্য লাইসেন্সতো রয়েছে,পাশাপাশি বাণিজ্যিকভাবে পশু শিকার ও বিক্রির বিষয়টিও কর্তৃপক্ষ নিয়ন্ত্রণ করে।

আরেকটি কারণ আছে অজিদের জাতীয়তাবাদী চেতনা। ক্যাঙ্গারু দেশটির জাতীয় পশু হওয়ায়, তা অনেকেই খায় না। অথচ মাংসের স্বাস্থ্যগুণ অনেক বেশি।

বাংলাদেশের বাঘ কমার বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মনিরুল এইচ খানের মতে, বাঘ রক্ষায় শিকার ও পাচার বন্ধ করা জরুরি। এ জন্য স্থানীদের এ বিষয়ে সচেতন করে তুলতে হবে।

তিনি ইন্টারপোলের এক প্রতিবেদনের বারত দিয়ে জানান, সুন্দরবনে বাঘ হত্যা ও পাচারের সঙ্গে স্থানীয় অনেক প্রভাবশালী নেতা জড়িত।

এদিকে অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অব অ্যাডিলেডের অধ্যাপক ড্যাভিড প্যাটন এবিসি নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তাদের ওখানে এতো দিন ক্যাঙ্গারুর মাংস খাওয়ার বিষয়ে সকলেই নেতিবাচক ছিল বলেই এটি এতো বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া তাদের দেশের অনুমোদন নিয়ে ক্যাঙ্গারু শিকার করলেও, তার মাংস ও চামড়াসহ অন্যান্য অংশগুলো কিভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে সে গুলোতে কঠোর নজরদারি থাকে।

আজকের বাজার : এলকে/এলকে ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৭