খাদ্য সহায়তা না পেয়ে ইলিশ ধরা বন্ধ করছে না কুড়িগ্রামের জেলেরা

ইলিশ প্রজনন মৌসুমে মাছ ধরার সাথে সংশ্লিষ্ট কুড়িগ্রামের জেলেরা কোন খাদ্য সহায়তার আওতায় আসছেনা। জেলা মৎস্য অফিস থেকে মন্ত্রণালয়ে আবেদন করলেও সেখান থেকে কোন সাড়া মেলেনি বলে অফিস সুত্রে জানা গেছে।

ইলিশের নিরাপদ প্রজননের লক্ষ্যে কুড়িগ্রাম জেলাসহ দেশের ৩৭ জেলার সকল নদ-নদীতে ২২দিনের জন্য সব ধরনের মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। কিন্তু কুড়িগ্রামের নদ-নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহকারী প্রায় ১৮হাজার জেলেকে খাদ্য সহায়তা দেওয়ার কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ফলে প্রথমবারের মত ইলিশ জোন হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া কুড়িগ্রাম জেলার নদ-নদীতে মা ইলিশ শিকার বন্ধ নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।

মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহকারী কয়েকজন জেলের সাথে কথা বলে জানা যায়, জেলেদের খাদ্য সহায়তা না দিয়েই নদীতে মাছ ধরার ওপর ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে প্রশাসন। সেকারণে জেলার নদ-নদীতে ইলিশ শিকারের প্রস্তুতি চলছে তাদের।

এদিকে জেলা ত্রাণ ও পুণর্বাসন সুত্রে জানা যায়, ইলিশ ধরা নিষেধাজ্ঞা উপলক্ষে জেলার জেলেদের জন্য এখন পর্যন্ত কোনও বিশেষ বরাদ্দের নির্দেশনা পাওয়া যায়নি। এ অবস্থায় জেলেদের খাদ্য সহায়তা না দিয়ে ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।
চিলমারী উপজেলার নয়ারহাট ইউপি চেয়ারম্যান আবু হানিফা জানান, গত বছর এ অঞ্চলে যে বিপুল পরিমাণ ইলিশ ধরা পড়েছে সেই ধারাবাহিকতায় এবছরও আমার ইউনিয়নের জেলেরা ইলিশ শিকারের জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে। পেশাদার জেলেদের পাশাপাশি অপেশাদার জেলেরাও ইলিশ শিকারের জন্য জাল ও নৌকা প্রস্তুত করছে। এক সপ্তাহের মধ্যে ব্রহ্মপুত্র নদে ইলিশের আগমন ঘটলে তারা ইলিশ শিকার করবে। খাদ্য সহায়তা না দিলে তারা কোনও নিষেধাজ্ঞা মানবে না।

উলিপুর উপজেলার বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের এক জেলে জানান, সরকার যদি আমাদের খাবার যোগান না দিয়া জাল মারতে নিষেধ করে তাহলে আমরা বৌ-বাচ্চাগো কি খাওয়ামু। পেটের দায়ে আমাদের মাছ ধরাই লাগে। ২২ দিন না দেউক সরকার যদি ১০/১২ দিনের খাবারও দিত তাও আমরা জাল ফেলা বন্ধ রাখতাম।

উলিপুরের বেগমগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান বেলাল হোসেন জানান, আমার ইউনিয়ন পুরোটাই ব্রহ্মপুত্র নদ বেষ্টিত। এখানকার ২ শতাধিক জেলে পরিবারের সবাই হতদরিদ্র, মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে। গত বছর অনেক নিষেধ করেও ইলিশ ধরা বন্ধ করতে পারি নাই। এবারও জেলেরা ইলিশ শিকারের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা অফিস সূত্রে জানা যায়, এ জেলায় ১৭হাজার ৬ শ’ ৪৩ জন নিবন্ধিত জেলে রয়েছে। গত বছর ইলিশের প্রজনন মৌসুমে নিষেধাজ্ঞা চলাকালিন সময়ে নদ-নদীতে প্রচুর পরিমাণ ইলিশ ধরা পড়ায় এবছর কুড়িগ্রাম জেলাকেও ইলিশ জোন হিসেবে ঘোষণা করে সরকার। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ থেকে জেলার জেলেদের জন্য কোনও বিশেষ সহায়তা পাওয়া যায়নি।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. জিল্লুর রহমান জানান, ইলিশের প্রজনন মৌসুমে ইলিশ ধরার নিষেধাজ্ঞা মেনে চলার জন্য আমরা সংশ্লিষ্ট উপজেলাগুলোতে প্রচারণা চালাচ্ছি।

এ ব্যাপারে কথা হলে জেলা প্রশাসক মোছা: সুলতানা পারভীন জানান, গত কয়েকদিন আগে মৎস্য সচিব স্যার কুড়িগ্রামে আসলে বিষয়টি তাকে জানানো হয়। তিনি খাদ্য সহায়তার আশ্বাস প্রদান করেছেন। আশা করি জেলেদের এ সহায়তা দেয়া সম্ভব হবে।

আজকের বাজার/এমএইচ