খালেদা আপিল করতে পারবেন: আইনমন্ত্রী

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানিয়েছেন, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলায় যে রায় দেয়া হয়েছে, এ রায়ের বিরুদ্ধে তার আপিলের সুযোগ রয়েছে। বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে রায় পরবর্তী প্রতিক্রিয়ায় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, ‘আইনে পরবর্তী কি প্রক্রিয়া হবে সেটা আমি বলতে পারি। উনারা কি করবেন সেটা তো আমি বলতে পারব না। আইনে এর পরের প্রক্রিয়া হচ্ছে, তারা নিশ্চয় মামলার আপিল করার সুযোগ পাবেন। তারা যদি আপিল করতে চান, হাইকোর্টে আপিল করবেন।’

তিনি বলেন, ‘তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ২০০৮ সালের ৩ জুলাই এজাহার দাখিল করে। সেটার তদন্ত হয়। স্বাধীন দুর্নীতি দমন কমিশন তদন্ত করে। তারপরে এ মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করে দুর্নীতি দমন কমিশন। এ মামলার বিচারকার্য শুরু হবার পর তারা অনেক বিচারপতির প্রতি অনাস্থা দেন। উনাদের পছন্দমতো একজন বিচারক পাওয়ার পর এ বিচার সম্পন্ন করতে দেন। আজকে তিনি দোষী প্রমাণিত হলেন।’

‘দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা আছে, কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়, সেটা এবারও প্রমাণ হলো’, বলেন তিনি।

আইনমন্ত্রী বলেন, ‘এ রায়ে প্রমাণ হলো, বাংলাদেশে বিএনপির আমলে অপরাধীদের যে স্বর্গ ছিল তার অবসান হয়েছে। এখন এটাই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, অপরাধ করলে তার বিচার হয়। এবং সুষ্ঠু বিচার হওয়ার পর তার শাস্তি হয়। এ মামলা আমি যতদূর জানি দুর্নীতি দমন কমিশন কাগজপত্রে প্রমাণ করেছে। সেজন্যই আজকে এ সাজা।’

তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, বাংলাদেশে দুর্নীতির যে একটা আখড়া ছিল, সেখান থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার প্রচেষ্টা ছিল, তার একটা সাফল্য এটা। একজন রাজনীতিবিদ ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতি করার পর সাজাপ্রাপ্ত হয়েছেন, এটা আমাদের ভাবমূর্তি খুব বেশি উজ্জ্বল করে না। তবুও আমি বলব, আমরা অন্ততপক্ষে পৃথিবীর কাছে বলতে পারব, যারা দুর্নীতি করেন তাদের এদেশে বিচার হয়।’

সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘২০০৮ সালের জুলাই মাস থেকে শুরু হবার পর সাড়ে নয় বছর মামলাটা চলেছে। সেটা যদি খুব অল্প সময় হয়ে থাকে আমার কিছু বলার নেই। সাড়ে নয় বছর পর এবং আইনে উনি যা যা বেনিফিট পাওয়ার কথা সেগুলো দেয়ার পর আজকে মামলা শেষ হয়েছে। সেটা আমার মনে হয় না তড়িঘড়ি করা হয়েছে।’

খালেদা জিয়া কি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন-সাংবাদিকদের করা এমন প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সংবিধানে বলা আছে, নৈতিক স্খলনের জন্য দুই বছরের অধিক যদি কারো সাজা হয় তাহলে তিনি সংসদ নির্বাচন করতে পারবেন না। আর দ্বিতীয় কথা হলো, হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টে দুটো রায় আছে। যেখানে এ ব্যাপারে কিন্তু সুনিশ্চিতভাবে বলা হয়েছে, আপিল যতক্ষণ পর্যন্ত শেষ না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত এ মামলাটা পূর্ণাঙ্গ স্থানে যাবে না এবং সেজন্য দণ্ডপ্রাপ্ত হলেও নির্বাচন করতে পারবেন।’

‘আবার আরেকটা রায় আছে, সেটাতে পারবেন না। এখন উনার ব্যাপারে আপিল বিভাগ এবং স্বাধীন নির্বাচন কমিশন কি সিদ্ধান্ত নেবেন সেটা তাদের ব্যাপার’, বলেন তিনি।

সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি যতদূর জানি উকিল হিসেবে, আজকেই উনাকে কারাগারে যেতে হবে। মামলার রায়ের সার্টিফাইড কপিটা পাওয়ার পর তারা আপিল করতে পারে। এরপর আপিল করার সাথে সাথে বেল পিটিশনও দিতে পারে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আপিল ৬০ দিনের মধ্যেই করতে হয়। যে মুহূর্তে রায় দেয়া হয় সে মুহূর্ত থেকে সময় গণনা শুরু হয়। যে মুহূর্তে সার্টিফাইড কপির জন্য দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি দরখাস্ত করে, সে মুহূর্তে সময় গণনা বন্ধ হয়ে যায়, যতক্ষণ পর্যন্ত না সার্টিফাইড কপি প্রস্তুত হয়। যে মুহূর্তে ওই কপি প্রস্তুত হবে সে মুহূর্তে আবার সময় গণনা শুরু হবে।’

সার্টিফাইড কপি কবে পাওয়া যাবে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘৬৩২ পাতার রায়, আজকে পাবেন কি করে? সেটা তো সম্ভব নয়।’

আজকের বাজার: সালি / ০৮ জানুয়ারি ২০১৭