খেলাপি ঋণের কারণে ‘ঝুঁকি স্কোরে’ বাড়ছে ব্যাংকের তালিকা

প্রতিদিনই ব্যাংক খাতে কোনো না কোনো ভয়াবহ অনিয়ম, দুর্নীতি প্রকাশিত হচ্ছে। ঋণ জালিয়াতি এখাতকে অস্থির করে তুলেছে। খেলাপি ঋণের লাগাম কোনোভাবেই টেনে ধরা যাচ্ছে না। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, ঋণ জালিয়াত ও খেলাপিদের বিরুদ্ধে শক্ত ব্যবস্থা নেয়ার যেন কেউ নেই।

জানা যায়, বর্তমানে ৫৭টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মধ্যে ১৮টিরও বেশি ব্যাংক নানাভাবে আর্থিক ঝুঁকিতে রয়েছে। এর মধ্যে এক ডজনেরও বেশি ব্যাংকের অবস্থা খুবই নাজুক। বাকিগুলো ‘ঝুঁকি স্কোরে’ আসা-যাওয়ার মধ্যে আছে। এভাবে দীর্ঘদিন থেকে আর্থিক খাতে বড় ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে। এ অবস্থায় সবচেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন ব্যাংকগুলোর লাখ লাখ আমানতকারী। শেয়ারবাজারের বিনিয়েগাকারীরাও শঙ্কার মধ্যে রয়েছেন। কারণ ঝুঁকির মধ্যে থাকার অন্তত ৮টি ব্যাংক শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত। সবারই এক প্রশ্ন- আর্থিক খাতের এ অস্থিরতার দায় কার ?

পর্যবেক্ষক মহলসহ এমন প্রশ্ন এখন সবার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। এ প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে ব্যাংকিং বিশ্লেষকদের কয়েকজন জানিয়েছেন, অবশ্যই এ দায় অর্থ মন্ত্রণালয় তথা অর্থমন্ত্রী এড়াতে পারেন না। কারণ দেশে একটি সরকার আছে। আছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও ব্যাংক নিয়ন্ত্রণকারী বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সরকারের অনেক নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান। শুধু সরকারি নয়, বেসরকারি ব্যাংকের এসব লুটপাটের দায় সরকারের দায়িত্বশীলরা এড়াতে পারবেন না। কেননা ব্যাংকের অনুমোদন তো রাস্তার কেউ দেয়নি।

ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ এ বিষয়ে বলেন, বেসরকারি খাতের যেসব ব্যাংকের মালিক রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের পাশে অর্থ মন্ত্রণালয়কে থাকতে হবে। তা না হলে লুটপাট বন্ধ হবে না। এছাড়া সরকারি ব্যাংকে অনিয়মের দায় কিছুতে অর্থ মন্ত্রণালয় এড়াতে পারে না। মূলত পুরো ব্যাংকিং খাতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটা প্রভাব প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বিরাজমান।

এদিকে বেসরকারি খাতের ফারমার্স এবং এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের অনিয়ম ও দুর্নীতির ঘটনায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছে অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। রোববার সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভায় উত্থাপিত ফারমার্স ও এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের ঋণ জালিয়াতিসহ নানা অনিয়মের প্রতিবেদন পড়ে সভাপতিসহ উপস্থিত প্রত্যেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। অবিলম্বে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি ড. আবদুর রাজ্জাক সাংবাদিকদের বলেন, ‘ব্যাংকগুলো যেসব অনিয়ম করেছে তা পড়লেই গা শিউরে ওঠে। এসব অনিয়মের দায় পরিচালনা পর্ষদকে নিতে হবে। তারা এ অনিয়মের দায় এড়াবে কিভাবে?’

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ব্যাংকিং খাতে দুর্নীতি-অনিয়মের দায় প্রথমে পরিচালনা পর্ষদসহ সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে নিতে হবে। এরপর এ দায় এড়াতে পারবে না বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়। অর্থাৎ সব পক্ষকে কমবেশি দায় নিতে হবে। একপক্ষীয় কোনো অনিয়ম হয় না।

ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ফারমার্স ও এনআরবিসির ব্যাপারে অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি যে সুপারিশ করেছে তা কোনোভাবে ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। সুপারিশগুলো অবশ্যই বাংলাদেশ ব্যাংককে বাস্তবায়ন করতে হবে। তা না হলে ব্যাংকিং খাতের লুটপাট বন্ধ হবে না।

আজকের বাজার:এলকে/এলকে ১ নভেম্বর ২০১৭