‘গভীর প্রেম থেকে যৌন সম্পর্ক ধর্ষণ নয়’

একজন পুরুষ ও একজন নারীর মধ্যে যদি গভীর ভালোবাসা থাকে এবং তারা যৌন সম্পর্ক স্থাপন করেন তাহলে তাকে ধর্ষণ বলা যাবে না। সম্প্রতি একটি ধর্ষণ মামলায় এমন রায় দিয়েছে মুম্বাই হাইকোর্টের গোয়া শাখা।

রায়ে আদালত বলেছে, যদি প্রমাণ পাওয়া যায় ধর্ষিতা ও ধর্ষকের মধ্যে গভীর প্রেম ছিল তাহলে এক্ষেত্রে ধর্ষণ প্রমাণিত হয় না। ফলে ধর্ষককে তখন ধর্ষক হিসেবে গণ্য কর যায় না। এ ঘটনাটি নিয়ে ব্যাপক রসালো আলোচনা চলছে ভারতে।

উল্লেখ, সম্প্রতি একটি ধর্ষণ মামলা হয় আদালতে। সেখানে অভিযোগ করা হয়, বিয়ের প্রলোভন দিয়ে এক যুবতীকে ধর্ষণ করেছে এক ধর্ষক। এ অভিযোগে বিচারিক আদালত ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে ধর্ষণের কারণে ৭ বছরের জেল দেন এবং একই সঙ্গে ১০ হাজার রুপি জরিমানা করেন। তবে আদালতের ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন ওই ‘ধর্ষক’।

আপিল তদন্ত করতে গিয়ে দেখা যায়, ওই ‘ধর্ষক’ ও ‘ধর্ষিতা’ একটি ক্যাসিনোতে কাজ করতেন। তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে ২০১৩ সালে। এর মধ্যে প্রেমিক পুরুষটি হলেন সেখানকার শেফ যোগেশ পালেকার। তিনি তার ওই প্রেমিকাকে তার পরিবারের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্য তার বাড়িতেও নিয়ে যান। ওই সময় তার পরিবারের সদস্যরা বাড়িতে ছিলেন না। ফলে তাদেরকে ওই দিন রাতে ওই বাড়িতেই কাটাতে হয়।

এ সময় দু’জনের মধ্যে যৌন সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এমন সম্পর্ক গড়ার পরের দিন সকালে ওই নারীকে তার বাড়িতে গাড়িতে করে নিয়ে নামিয়ে দিয়ে আসেন যোগেশ। এরপরেও যোগেশের বাড়িতে ৩ থেকে ৪ বার তাদের মধ্যে যৌন সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছে। এক পর্যায়ে ওই নারী যোগেশের ওপর বিয়ের জন্য চাপ সৃষ্টি করেন।

কিন্তু নারীটি নিম্ন জাতের হওয়ার কারণে তাকে বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানান যোগেশ। এর ফলে ওই নারী যোগেশের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ আনেন।

তিনি অভিযোগে বলেন, তাকে বিয়ের প্রলোভন দেওয়া হয়েছিল। তাই তিনি যোগেশের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করেছেন। বিচার চলাকালে দেখা যায়, যোগেশকে আর্থিক সহায়তাও দিতেন ওই নারী। আপিলের এ পর্যায়ে বিচারপতি সি ভি ভাদাং রায় দেন।

তিনি বলেন, সুস্পষ্ট প্রমাণ মিলেছে যে, যোগেশ যে শুধু প্রতিশ্রুতি দিয়ে ওই যৌন সম্পর্ক স্থাপন করেছেন তা বলা যায় না। তবে তাদের দু’জনের মধ্যে ছিল গভীর প্রেমের সম্পর্ক। তাদের মধ্যে এই সম্পর্ক অব্যাহত ছিল। ‘ধর্ষিতা’ দাবি করা নারী যোগেশকে আর্থিক সহায়তা পর্যন্ত করেছিলেন। এর পর তাদের মধ্যে বেশ কয়েকবার যোগেশের বাড়িতেই ওই সম্পর্ক হয়েছে।

এতে সুস্পষ্ট প্রমাণ মেলে যে, তাদের উভয়ের সম্মতিতে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছিল। ওদিকে গোয়াতে ইন্সটিটিউট অব সাইক্রিয়াট্রি অ্যান্ড হিউম্যান বিহ্যাভিয়ারে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন যোগেশ।

এ সময় তার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ প্রত্যাহার করার চেষ্টা করেছিলেন ওই নারী। এক্ষেত্রে তিনি আবেগতাড়িত হয়েছিলেন। নিজেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। এতেও প্রমাণ হয় যে, তাদের মধ্যে গভীর প্রেম ছিল।

এস/