গাজার আল শিফা হাপাতালের পরিস্থিতি ‘নরকের চেয়েও ভয়াবহ’

গাজা উপত্যকার অবরুদ্ধ বৃহত্তম হাসপাতালের চারপাশে বহু দিনের ইসরায়েলি অভিযানে ফিলিস্তিনিরা ক্রমাগত বোমাবর্ষণ, গণগ্রেপ্তারের পাশাপাশি রাস্তায় ময়লা, মৃতদেহ ও আবর্জনার ট্যাংক দেখা থেকে কোনো প্রকার নিস্কৃতি মিলছে না।
হামাসের সাথে যুদ্ধরত ইসরায়েলি বাহিনী সোমবার গাজা নগরীর আল-শিফা হাসপাতালও এর আশপাশে অভিযান চালায়। ইসরায়েলি বাহিনী জানায় হামাসের সিনিয়র অপারেটিভরা বিস্তৃত হাসপাতাল কম্পাউন্ডে অবস্থান করছিল। খবর এএফপি’র।
সামরিক বাহিনী অনুসারে, অভিযান চালানোর পর থেকে প্রায় ১৫০ ফিলিস্তিনি যোদ্ধা নিহত ও আরো শতাধিককে গ্রেপ্তার বা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। পাঁচ দিন পরও ইসরায়েলি বাহিনী পিছু হটার কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি।
আল-শিফা থেকে প্রায় ৫শ’ মিটার দূরে বসবাসকারী ৫৯ বছর বয়সী মোহাম্মদ বলেন, ‘প্রত্যেকেরই মৃত্যুদ- কার্যকর বা গ্রেপ্তার হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’
তিনি এএফপি’কে বলেন, ‘আমি মনে করি গাজা নরকের আগুনের চেয়েও ভয়াবহ হয়ে উঠেছে।’ ‘আমি আল-শিফার রাস্তায় অনেক লাশ দেখেছি। ট্যাঙ্কগুলো হাসপাতালের দিকে যাওয়ার রাস্তা বন্ধ করে রেখেছে। আমি আল-শিফার পাশের একটি বাড়িতে আগুন  দেখেছি।’
মোহাম্মদ বলেন, অবশিষ্ট মাত্র অল্প কিছু বাসিন্দার বসবাসের আশপাশের এলাকার আল-রিমাল পাড়া ও আল-শাতি শরণার্থী শিবির ‘ভূতের শহরে’ পরিণত হয়েছে।
ভূ-খন্ডের উত্তরাঞ্চল গাজা নগরীর অবস্থান থেকে অনেক ফিলিস্তিনি ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে হামাসের হামলাকে কেন্দ্র করে শুরু হওয়া এ যুদ্ধের প্রাক্কালে দক্ষিণে পালিয়ে যায়।
আল-শিফায় গত নভেম্বরে ইসরায়েলের সামরিক অভিযান আন্তর্জাতিক ক্ষোভের জন্ম দেয়ার পর সর্বশেষ অভিযানে নিরাপত্তার জন্য আরো বেশি সংখ্যক সৈন্য প্রেরণ করেছে।
এএফপি’র ফুটেজে বৃহস্পতিবার হাসপাতালের হামলা থেকে বাঁচতে গাজার উপকূল বরাবর দক্ষিণে লোকজনকে পালিয়ে যেতে দেখা গেছে।
আল-রিমালে বসবাসকারী ৫০ বছর বয়সী মাহমুদ আবু আমরা বলেন, ইসরায়েলি সেনারা ‘নারী ও শিশুদের পশ্চিমে উপকূলের আল-রশিদ সড়কে ও গাজা উপত্যকার দক্ষিণে যেতে বাধ্য করেছে।’
জাতিসংঘের মতে উত্তর থেকে যাওয়া প্রায় তিন লাখ মানুষ মৌলিক সরবরাহের ঘাটতিতে ভয়ানক পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে।
আবু আমরা বলেন, শুক্রবার ভোরে তিনি গাজা নগরীর পশ্চিমে ইসরায়েলি বাহিনীকে বাড়িঘর ও আবাসিক ভবনে হামলা চালাতে দেখেছেন। তিনি বলেন ‘এই বাহিনী সমস্ত বাসিন্দাকে বাস্তুচ্যুত করে এবং ১৬ বছরের বেশি বয়সী সমস্ত পুরুষদের শুধুমাত্র তাদের অন্তর্বাস ব্যতিরেকে সম্পূণরূপে বস্ত্রহীন হতে বাধ্য করে।’ তারা তাদের বেঁধে রেখে রাইফেলের বাট দিয়ে মারধর করে। তাদের অপমান করে এবং জিজ্ঞাসাবাদ ও আটকের জন্য আল-শিফা হাসপাতালের কাছের এক স্কুলে নিয়ে যায়।’
ইসরায়েল বলেছে তাদের পদক্ষেপগুলো আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী মানা হচ্ছে।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী এএফপি’কে বলেছে, ‘সন্দেহভাজনরা কোনো বিস্ফোরক ভেস্ট বা অন্যান্য অস্ত্র লুকিয়ে রাখছে কি-না তা নিশ্চিত করার জন্য প্রায়শই তাদের পোশাক বদল করার প্রয়োজন ছিল। বাহিনী আরো জানায় পরবর্তিতে যখন সম্ভব হয়েছে তারা বন্দিদেরকে তাদের কাপড় ফেরত দিয়েছে। ইসরায়েল দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছে যে, ফিলিস্তিনি রোগী ও কর্মীদের পাশাপাশি বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের আশ্রয়স্থল আল-শিফা হাসাপাতালটিতে হামাস কমান্ড সেন্টারের একটি ভূ-গর্ভস্থ ঘাটি আছে। তবে হামাস হাসপাতালটিকে সামরিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করার কথা অস্বীকার করেছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী শুক্রবার বলেছে, সৈন্যরা আল-শিফা হাসপাতাল এলাকায় সুনির্দিষ্ট অপারেশনাল কার্যকলাপ চালিয়ে যাচ্ছে এবং বেসামরিক নাগরিক, রোগী, চিকিৎসক দল ও চিকিৎসা সামগ্রীর ক্ষতি প্রতিরোধ করছে।’
হামাস শাসিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অনুসারে হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের সামরিক অভিযানে গাজায় কমপক্ষে ৩২ হাজার ৭০ জন নিহত হয়েছে। এদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।
সরকারি পরিসংখ্যান ভিত্তিক এএফপি’র সমীক্ষা অনুসারে, ৭ অক্টোবরের ইসরায়েলে হামলার ফলে প্রায় ১ হাজার ১৬০ জন নিহত হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক। (বাসস ডেস্ক)