গ্রিন লাইনে চাকরির প্রস্তাবে রাসেলের ‘না’

বাসচাপায় পা হারানো রাসেল সরকারকে চাকরি ও এককালীন অর্থ দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছে গ্রিন লাইন পরিবহন কর্তৃপক্ষ। তবে সে প্রস্তাব নাকচ করেছেন রাসেল সরকার।

রোববার (২ ফেব্রুয়ারি) এ সংক্রান্ত রুলের শুনানিকালে বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চকে চাকরির প্রস্তাবের বিষয়টি জানান গ্রিন লাইনের আইনজীবী অ্যাডভোকেট হারুনর রশিদ।

তখন রাসেলের আইনজীবী খন্দকার সামসুল হক রেজা আদালতকে জানান, ‘আমরাও আপস করতে চাই। এই আপসের নামে গত দুই মাসে গ্রিন লাইন পরিবহন কোনও কিস্তির টাকা দেয়নি। এতে রাসেলের চিকিৎসা ব্যাহত হচ্ছে। অন্ততপক্ষে আগে একটা কিস্তি পরিশোধ করুক। তখন আলোচনায় বসা যাবে।’

তখন আদালত বলেন, ‘রাসেলের তো চিকিৎসা দরকার। কেন আপনারা অর্থ দিচ্ছেন না?’ এ সময় গ্রিন লাইন পরিবহনের আইনজীবী বলেন, ‘কিছু টাকা দেয়ার পরে আপসের আলোচনা কতটুকু ফলপ্রসূ হবে, সেটা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে।’

এরপর আদালত উভয় পক্ষের আইনজীবীকে বলেন, ‘আপনারা কালকেই আলোচনায় বসুন। বৃহস্পতিবার এ বিষয়টি আদেশের জন্য রাখছি। আপস হলে সবাই উপকৃত হবে।’

পরে রাসেল সাংবাদিকদের বলেন, ‘গ্রিন লাইন চাকরির যে প্রস্তাব দিয়েছে, তাতে আমি রাজি নই। কারণ, আমি এই মামলা করার কারণে গ্রিন লাইন পরিবহন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমাকে চাকরি দিলেও পরবর্তীতে নানা কারণ দেখিয়ে আমাকে বরখাস্ত করতে পারে, এ আশঙ্কা করছি। এ কারণে সেখানে চাকরি করতে আমি আস্থা পাচ্ছি না।’

এর আগে রাসেল সরকারকে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। এর মধ্যে ১০ লাখ টাকা পরিশোধ করেছে গ্রিন লাইন কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে হাইকোর্টে এ মামলার রুল শুনানি চলছে।

২০১৯ সালের ২৮ এপ্রিল মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারে কথা কাটাকাটির জেরে গ্রিন লাইন পরিবহনের বাসচালক প্রাইভেটকার চালক রাসেল সরকারের (২৩) ওপর দিয়েই গাড়ি চালিয়ে দেন। তাকে বাঁচাতে একটি পা কেটে ফেলতে বাধ্য হন চিকিৎসকরা।

পা হারানো রাসেলের বাবার নাম শফিকুল ইসলাম, গ্রামের বাড়ি গাইবান্ধার পলাশবাড়িতে। ঢাকার আদাবর এলাকার সুনিবিড় হাউজিং এলাকায় তার বাসা। ওই দুর্ঘটনার পর সরকারি দলের সংরক্ষিত আসনের সাবেক এমপি আইনজীবী অ্যাডভোকেট উম্মে কুলসুম স্মৃতি একই বছরে ১৪ মে হাইকোর্টে ক্ষতিপূরণ চেয়ে একটি রিট আবেদন করেন।

রিটের শুনানিতে ৬ মার্চ রাসেল আদালতকে বলেছিলেন, ‘পা হারানোর পর এখন পর্যন্ত গ্রিন লাইন কর্তৃপক্ষ তাকে একটি টাকাও দেয়নি। খোঁজখবর নেয়নি, চিকিৎসার ব্যয়ও বহন করেনি।’ ওই রিটের শুনানি নিয়ে রাসেলকে কেন এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট।

এ ঘটনায় রাসেলের বড় ভাই আরিফ সরকার বাসচালক কবির মিয়ার বিরুদ্ধে যাত্রাবাড়ী থানায় গত বছরের ২৮ এপ্রিল মামলা করেন।

আজকের বাজার/এমএইচ