ঘুষ কেলেঙ্কারি: এনামুল বাছির গ্রেপ্তার

চল্লিশ লাখ টাকার বেশি ঘুষ কেলেঙ্কারির ঘটনায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাময়িক বহিষ্কৃত হওয়া পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছিরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

দুদক জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রণব কুমার ভট্টাচার্য জানান, সোমবার রাত সোয়া ১০টার দিকে রাজধানীর দারুস সালামের নিজ বাসভবন থেকে দুদকের একটি দল তাকে গ্রেপ্তার করে।

তিনি জানান, গ্রেপ্তারের পরে বশিরকে সারা রাত রমনা থানায় রাখা হয়।

ঘুষ কেলেঙ্কারির ঘটনায় দুদক কর্মকর্তা বাছির ও সাময়িক বরখাস্ত হওয়া পুলিশের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে দুদকের মামলার ছয়দিনের মাথায় এ গ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটল।

গত মঙ্গলবার দুদক পরিচালক ও অনুসন্ধান টিমের দলনেতা শেখ মোহাম্মদ ফানাফিল্যা সংস্থার ঢাকা-১ সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে মামলাটি দায়ের করেন।

এর আগে দুদক প্রধান কার্যালয় থেকে ডিআইজি মিজান ও সংস্থার পরিচালক বাছিরের বিরুদ্ধে মামলার অনুমোদন দেয়া হয়।

গত ৯ জুন একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে প্রচারিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধে পরিচালিত দুর্নীতির অনুসন্ধান থেকে তাকে দায়মুক্তি দিতে দুদক পরিচালক বাছির ৪০ লাখ টাকা ঘুষের বিনিময়ে সমঝোতা করেন। ডিআইজি মিজান বিষয়টি রেকর্ড করে ফুটেজ ওই চ্যানেলকে দিয়ে দেন।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, দুদকের এ পরিচালক রাজধানীর রমনা পার্কে বাজারের ব্যাগে করে ডিআইজি মিজানের কাছ থেকে ২৫ লাখ টাকা গ্রহণ করেন এবং বাকি ১৫ লাখ পরবর্তী এক সপ্তাহের মধ্যে দেয়ার কথা বলেন। সেই সাথে তিনি ছেলেকে স্কুলে আনা-নেয়ার জন্য একটি গ্যাসচালিত গাড়ি দাবি করেন। এছাড়া তিনি কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য অবৈধভাবে পাচার করেন।

এ প্রতিবেদন প্রচারিত হওয়ার পর দুদক সংস্থার সচিব মুহাম্মদ দিলোয়ার বখতকে প্রধান করে তিন সদস্যের উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করে এবং কমিটি ১০ জুন প্রতিবেদন জমা দেয়। প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে পরিচালক বাছিরকে দুদকের তথ্য অবৈধভাবে পাচার, চাকরির শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও সর্বোপরি অসদাচরণের অভিযোগে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে কমিশন। সেই সাথে ডিআইজি মিজানের দুর্নীতি বিষয়ে অনুসন্ধান কর্মকর্তা হিসেবে ১২ জুন নিয়োগ পান দুদকের আরেক পরিচালক মো. মঞ্জুর মোরশেদ।

অন্যদিকে, ২০১৮ সালে একটি জাতীয় দৈনিকে ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধে এক সংবাদ পাঠিকাকে জোর করে বিয়ে করার সংবাদ প্রকাশের পর বিষয়টি ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি করে। ওই ঘটনায় পুলিশ সদর দপ্তরসহ দুদকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

এরপর নানা জল্পনা-কল্পনা শেষে বিতর্কিত ডিআইজি মিজানকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনারের পদ থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ সদরদপ্তরে সংযুক্ত করা হয়। পরে ২৫ জুন তাকে সাময়িক বরখাস্তের কথা সাংবাদিকদের জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

দুদক পরিচালক মঞ্জুর মোরশেদ তিন কোটি ২৮ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও তিন কোটি সাত লাখ টাকার সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে ডিআইজি মিজানসহ চারজনের বিরুদ্ধে ২৪ জুন বাদী হয়ে মামলা করেন। এ মামলায় ১ জুলাই বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি এসএম কুদ্দুস জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ ডিআইজি মিজানের জামিন নামঞ্জুর করে তাকে শাহবাগ থানায় হস্তান্তর করে।

আজকের বাজার/এমএইচ