চার জেলায় ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ৫ মাদক ব্যবসায়ী নিহত

ছবি : ইন্টারনেট

সারাদেশে চলমান মাদকবিরোধী অভিযানে র‌্যাব ও পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ৪ জেলায় ৫ মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে। বন্দুকযুদ্ধের সময় র‌্যাব ও পুলিশের ছয় সদস্য আহত হয়েছেন এবং এ সময় ঘটনাস্থল থেকে বিপুল পরিমাণ মাদক, অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করা হয়।

মঙ্গলবার (১০ জুলাই) রাত থেকে বুধবার (১১ জুলাই) ভোর পর্যন্ত এই বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে।

নাটোর:

নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলায় র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ওসমান গণি (৩৮) নামে এক মাদক বিক্রেতা নিহত হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন দুই র‌্যাব সদস্য।

মঙ্গলবার রাত ১১টা ৪০ মিনিটে উপজেলার বাহিমালী এলাকায় এ বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে। ওসমান উপজেলার গুরুমশইল গামের মৃত মনসুর আলীর ছেলে। ওসমান জেলার অন্যতম শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী। তার বিরুদ্ধে জেলার বিভিন্ন থানায় মাদক ও চাঁদাবাজীসহ মোট পাঁচটি মামলা রয়েছে।

র‍্যাব-৫ এর নাটোর ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার মেজর শিবলী মোস্তফা জানান, ঘটনাস্থল থেকে ৭.৬২ মি একটি পিস্তল, ৪টি গুলিভর্তি একটি ম্যাগাজিন, ১টি গুলির খোসা, ৪১০ গ্রাম হেরোইন ছাড়াও ১ হাজার ৪১০ টাকা, ১টি চার্জার ও ২টি গ্যাস লাইট, সিগারেটের প্যাকেট ২টি ও ৭ টি স্যান্ডেল পাওয়া গেছে।

তিনি বলেন, রাতে নাটোর র‌্যাব অফিসের একদল সদস্য নিয়মিত টহলের অংশ হিসেবে বাহিমালী এলাকা দিয়ে যাচ্ছিল। এ সময় পাশের ভাটুপাড়া রাস্তায় কিছু মানুষের উপস্থিতি ও টর্চের আলো দেখা যায়। র‌্যাব সদস্যরা সেদিকে যেতে থাকলে তারা অতর্কিতে গুলি চালায়। এ সময় উভয়পক্ষে প্রায় ৫ মিনিট গুলি বিনিময়ের পর একজন গুলিবিদ্ধ ও অন্যরা পালিয়ে যায়। আহত মাদক ব্যবসায়ীকে উদ্ধার করে বড়াইগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় আহত দুই র‌্যাব সদস্যকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।

কুষ্টিয়া:

কুষ্টিয়ার মিরপুরে র‌্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ফুটু ওরফে মোন্না (৩৫) ও রাসেল আহম্মেদ (৩০) নামে শীর্ষ দুই মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে। এ সময় তাদের দুই সদস্য আহত হয়েছেন। আজ বুধবার ভোর রাত সাড়ে ৪টার দিকে মিরপুর উপজেলার কুর্শা ইউনিয়নের আনান্দ বাজার বালুচর সংলগ্ন জোয়াদ্দারের ইটভাটার কাছে এ ঘটনা ঘটে।

র‌্যাব-১২ কুষ্টিয়া ক্যাম্পের কমান্ডার মোহাই মিনুল জানান, মাদক দ্রব্য ক্রয়-বিক্রয়ের উদ্দেশে একদল মাদক ব্যবসায়ী মিরপুর উপজেলার কুর্শা ইউনিয়নের আনান্দ বাজার বালুচর সংলগ্ন জোয়াদ্দারের ইটভাটার কাছে অবস্থান করছে এমন গোপন সংবাদ পেয়ে র‌্যাব-১২ কুষ্টিয়া ক্যাম্পের একটি আভিযানিক দল ঘটনাস্থলে অভিযান চালায়।

র‌্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে মাদক ব্যবসায়ীরা র‌্যাবকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। জবাবে র‌্যাবও পাল্টা গুলি চালালে ‘বন্দুকযুদ্ধের’ এক পর্যায়ে দুইজন গুলিবিদ্ধ হয় এবং অপর মাদক ব্যবসায়ীরা পালিয়ে যায়। পরে গুলিবিদ্ধ দুইজনকে উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।

র‌্যাব জানতে পারে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত দুই ব্যাক্তি তালিকা ভুক্ত শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী। আহত দুই র‌্যাব সদস্যকে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে একটি বিদেশী নাইম এমএম পিস্তল, একটি দেশী ওয়ান শুটারগান, দুটি কার্তুজ, ১২ রাউন্ড গুলি ও ৪০ লিটার চোলাই মদ, ১৫০০ পিস ইয়াবা ও ২৩০ বোতল ফেন্সিডিল উদ্ধার করা হয়।

মোন্না রাজারহাট মোড় এলাকার মৃত আহম্মদ আলীর ছেলে ও রাসেল একই এলাকার রবিউল ইসলামের ছেলে। র‌্যাব দুই মাদক ব্যবসায়ীর লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্ত করতে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করেছে।

লক্ষ্মীপুর:

লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে সোহেল রানা ওরফে সুরাইয়া সোহেল নামে এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে। সে দেনায়েতপুর গ্রামের রায়পুর পৌরসভা অফিস সংলগ্ন সর্দার বাড়ির মৃত আবদুল মুনাফের ছেলে। রায়পুর-চাঁদপুর সড়কের সিংয়েরপুলে বুধবার ভোররাতে এ বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে।

পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার বিকেলে লক্ষ্মীপুরের ঝুমুর সিনেমা হল এলাকা থেকে পুলিশের তালিকাভুক্ত ২২ মামলার পলাতক আসামি সোহেল রানাকে গ্রেফতার করে। পরে তার দেয়া তথ্য অনুযায়ী রাত ৩টায় রায়পুর-চাঁদপুর সড়কের সিংয়েরপুল এলাকার একটি পরিত্যক্ত ঘরে ইয়াবা উদ্ধারে পুলিশ অভিযানে গেলে সোহেলের সহযোগীরা তাকে পুলিশের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয়ার জন্য পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। সোহেল পালিয়ে যাওয়ার সময় তার সহযোগীদের গুলিতে আহত হয়।

পুলিশ গুলিবিদ্ধ সোহেলকে রায়পুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার উন্নত চিকিৎসার জন্য সদর হাসপাতালে প্রেরণ করেন। পরে সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক সোহেলকে মৃত ঘোষণা করেন।

রায়পুর থানার অফিসার ইনচার্জ আজিজুর রহমান ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, সন্ত্রাসীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি চালালে আত্মরক্ষার্থে পুলিশও ৩ রাউন্ড ফাঁকা গুলি করে। এ সময় দুই পুলিশ কর্মকর্তাও আহত হন। তাদেরকে রায়পুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।

সোহেলের বিরুদ্ধে রায়পুর ও চাঁদপুরের হাইমচরসহ অন্যান্য থানায় অস্ত্র, মাদক, ডাকাতি, চাঁদাবাজি, নারী নির্যাতনসহ বিভিন্ন অপরাধে ২২টি মামলা রয়েছে।

যশোর

যশোরের মণিরামপুরে দুই দল ডাকাতের মধ্যে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ অজ্ঞাত এক যুবক নিহত হয়েছে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে অস্ত্র, গুলি ও বোমা উদ্ধার করেছে।

বুধবার সকাল ৬টার দিকে যশোর-রাজগঞ্জ সড়কের কোদলাপাড়া জামতলা এলাকায় এই বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে। তবে নিহত যুবকের (৩২) নাম পরিচয় এখনো জানা যায়নি।

যশোরের মণিরামপুর থানার ওসি মোকাররম হোসেন জানান, খেদাপাড়া ফাঁড়ি পুলিশ বুধবার ভোরে যশোর-রাজগঞ্জ সড়কের কোদলাপাড়া জামতলা এলাকায় রাস্তার পাশ থেকে গুলিবিদ্ধ একটি মরদেহ উদ্ধার করেছে।

ধারণা করা হচ্ছে দু’দল ডাকাতের বন্দুকযুদ্ধে ওই যুবক মারা গেছে। তবে তার নাম পরিচয় এখনো জানা যায়নি। পুলিশ তার মরদেহ উদ্ধার করে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে।

ওই যুবকের পরনে জিন্সের প্যান্ট ও নীল রংয়ের গেঞ্জি এবং কোমরের ওপর একটি গামছা ছিল। তার মাথায় গুলি লেগেছে।

আরএম/