চালকের আসনে আর বসতে পারেনি দিয়ার বাবা

জাবালে নূর পরিবহনের বাসচাপায় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের নিহত দুই শিক্ষার্থী আবদুল করিম রাজীব ও দিয়া খাতুন মিম হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করা হবে আজ।

রবিবার (১ ডিসেম্বর) ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশ এ রায় ঘোষণা করবেন।

রায়ে আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করে মামলার বাদী নিহত দিয়ার বাবা জাহাঙ্গীর আলম কালু বলেন, আমার মেয়েকে ইচ্ছাকৃতভাবে চাপা দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এটা দুর্ঘটনা নয়, হত্যাকাণ্ড। গাড়ি একটু স্লো করলে মেয়েকে হারাতে হতো না। তাকে হারিয়ে আজ আমি নিঃস্ব। মেয়ের আত্মা শান্তি পাবে এমন রায় চাই। রায়ে যেন আমরাও শান্তি পাই।

জাহাঙ্গীর আলম ছিলেন পেশায় বাসচালক। বাসচাপায় মেয়েকে হারিয়ে বলেছিলেন, ‘যে বাস আমার মেয়েরে চাপা দিল, সেই বাস আর আমি চালামু না।’ প্রায় দেড় বছর পরও কথায় অটল থেকেছেন দিয়ার বাবা।

সড়ক দুর্ঘটনায় মেয়েকে হারানোর পর কথামতো বাস চালানো ছেড়ে দিয়েছেন তিনি। এখন তিনি মহাখালী বাস টার্মিনালের পাশে চা-নাশতার দোকান দিয়েছেন। মেয়ের স্মৃতি ছিল যে বাড়িতে, সেই বাড়িতেও তিনি থাকতে পারেন না, তাই বাসাও বদল করেছেন। মেয়ের ছবি নিজের মোবাইলের ওয়ালে রেখে দিয়েছেন। মেয়েকে প্রতি মুহূর্তেই মনে পড়ে তার। মেয়ের পাশে থাকতে কবরও দিয়েছেন মহাখালী রহিম মেটাল মসজিদের পাশের কবরস্থানে। মেয়ের স্মৃতি ধরে রাখতে দিয়ার স্কুলেই ছেলে রিয়াদুল ইসলামকে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি করেছেন জাহাঙ্গীর। আর আরেক মেয়ে রোকেয়া কানন রিয়া এইচএসসি প্রথম বর্ষে পড়ছে।

আবেগাপ্লুত হয়ে জাহাঙ্গীর বলেন, ‘মেয়ে বেঁচে থাকলে ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে উঠত। এখন এমন জায়গায় গেল আর কোনোদিন আইব না। আমারে আর কোনোদিন সালাম দিব না।’

সম্প্রতি আলাপকালে জাহাঙ্গীর বলেন, ‘যে বাসের ড্রাইভার আমার মেয়েরে মারছে, ওরা ড্রাইভারগো মানসম্মান নষ্ট করছে। আপনি দেখেন যারা দক্ষ ও জ্যেষ্ঠ চালক, তারা বেশি দুর্ঘটনা ঘটায় না। কিছু পোলাপান বাস চালাইতে জানে না। হালকা যানের লাইসেন্স নিয়া ভারী যান চালায়, ওরাই বেশি দুর্ঘটনা ঘটায়।’

ঢাকার রাস্তায় এখনো শৃঙ্খলা আসেনি, এ নিয়ে আক্ষেপ করে জাহাঙ্গীর বলেন, ‘দিয়ার মৃত্যুর পর ছাত্ররা রাস্তায় নামলো, রিকশা, কার, বাস চলার আলাদা লেন করে দিল। কতো আন্দোলন হইল, এখন আর তা নাই। অথচ এটা হইলে ঢাকায় দুর্ঘটনা কমে আসত।’

জাহাঙ্গীর বলেন, সরকার যেন ভালোভাবে প্রশিক্ষণ দিয়ে চালকের হাতে লাইসেন্স দেয়। টাকা নিয়ে যেন সবার হাতে হাতে লাইসেন্স না দেয়।

প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের ২৯ জুলাই দুপুরে কালশী ফ্লাইওভার থেকে নামার মুখে এমইএস বাস স্ট্যান্ডে ১৫/২০ জন শিক্ষার্থী দাঁড়িয়ে ছিল। তখন জাবালে নূর পরিবহনের একটি বাস ফ্লাইওভার থেকে নেমে সেখানে দাঁড়ায়। এ সময় পেছন থেকে জাবালে নূরের আরেকটি বাস দ্রুতগতিতে ওভারটেক করে সামনে আসতেই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। এতে পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যায় রাজীব ও দিয়া। এ ঘটনায় আরও বেশ কয়েকজন আহত হয়।

আজকের বাজার/আরিফ