জয়পুরহাটে বেগুন, শসা, করলাসহ অন্যান্য সবজির দাম কমেছে

খাদ্য উৎপাদনে উদ্বৃত্ত জেলা জয়পুরহাটের হাটবাজারগুলোতে আমদানি বেশি হওয়ায় বেগুন, শসা, করলাসহ অন্যান্য সবজির দাম কমতে শুরু করেছে। বাজারে এগুলোর দাম এখন এতই কম যে বিক্রি করে হাটের খাজনা ও ভ্যান ভাড়া উঠছে না কৃষকদের। ফলে লোকসানের মুখে পড়ছেন জেলার কৃষকরা।
জেলা শহরের নতুনহাট সবজির পাইকারি বাজারে পণ্য বিক্রি করতে আসা কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অন্যান্য ফসলের দাম কিছুটা পাওয়া গেলেও  বেগুন, শসা, করলার বাজার দর এখন খুবই নি¤œমুখি। সবজি বিক্রির পাইকারি নতুনহাটে কথা হয় সদর উপজেলার ধারকী চৌধুরী পাড়ার মফিজুল ইসলামের সাথে। তিনি জানান  এবার ১৫ শতাংশ জমিতে শসা চাষ করেছেন। নতুনহাটে একমণ শসা বিক্রি করেন ১০০  টাকায়। যা কেজি হিসেবে পড়ে আড়াই টাকা। হাটে শসার গুণগত মান অনুযায়ী প্রকার ভেদে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা মণ পর্যন্ত  পাইকারি বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বাজারে ভোক্তা পর্যায়ে সেই শসা বিক্রি হচ্ছে এখন ১০ থেকে ১৫ টাকা কেজি। দোগাছী ইউনিয়নের চকভারুনিয়া গ্রামের কৃষক আব্দুল লতিফ  জানান, শসা  বিক্রি করে পুরো লোকসান গুনতে হচ্ছে। লেবার, পরিচর্যা ও অন্যান্য খরচসহ প্রতি বিঘা জমিতে ৩০/৩৫ হাজার টাকা খরচ পড়লেও বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২২ হাজার টাকা। বর্তমানে শসা বাজারে নিয়ে গেলে ভ্যান ভাড়াও উঠছে না বলে মন্তব্য করেন কৃষক শহিদুল ও আব্দুল লতিফ।  পাঁচবিবি উপজেলার কাঁশড়া গোবিন্দপুর গ্রাম থেকে আসা কৃষক দিলিপ কুমারের সঙ্গে কথা হয়। তিনি জানান, এবার উন্নত মানের নবাব জাতের করলা চাষ করেছেন ২৫ শতাংশ জমিতে। সেই করলা এনে পাইকারি বিক্রি করেন ৫শ’ টাকা মণ। যা কেজি হিসেবে সাড়ে ১২ টাকা। খুচরা বাজারে ভোক্তা পর্যায়ে সেই করলা  বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি। সদর উপজেলার চকমোহন গ্রামের কৃষক শহিদুল ইসলাম জানান, একমণ বেগুন পাইকারি বিক্রি করেন ৮০ টাকা। যা কেজি হিসেবে পড়ে ২ টাকা।  বাড়ি থেকে হাটে আসা ভ্যান ভাড়া ৬০ টাকা এবং হাটের খাজনা দিতে হয়েছে ২০ টাকা। নিজের শ্রমের কোন দামই নেই বলে আক্ষেপ করেন তিনি। খুচরা বাজারে ভোক্তা পর্যায়ে এই বেগুন বিক্রি হচ্ছে এখন ২০ টাকা কেজি। বর্তমানে পাইকারি বাজারে পটলও প্রতিমণ ৫৬০ টাকা বিক্রি হওয়ায় কৃষকরা লোকসান গুনছেন বলে জানান, পটল চাষী বিষ্ণুপুর গ্রামের এনামুল হক। বুধবার সবজি বাজার ঘুরে দেখা যায়, বর্তমান বাজারে ভোক্তা পর্যায়ে সবজিসহ অন্যান্য পণ্য  বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা কেজির বেগুন ২০ টাকা, ১০০ টাকার পটল ৬০ টাকা, ৭০ টাকার করলা ৩৫/৪০ টাকা, লাউ প্রতি পিস ২৫/৩০ টাকা, ৬০ টাকার গাজর ৩০ টাকা, ৮০ টাকার টমেটো ২০ টাকা, ৭০ টাকার ঢেঁড়স ৩০/৪০ টাকা, ৮০ টাকার বরবটি ৬০ টাকা, ৬০ টাকার তরই ৪০ টাকা, ৫০ টাকার পেঁপে ৪০ টাকা, ৮০ টাকার কাকরোল ৬০ টাকা , ৭০ টাকার লতিরাজ কচু ৪০/৫০ টাকা, ৪০ টাকার মিস্টি লাউ ২৫/৩০ টাকা , ১০০ টাকার কাঁচা মরিচ ৫০ টাকা কেজিসহ  আলু পাকরী ৫৫ টাকা, আলু স্টিক ৫০ টাকা, আদা ২৪০ টাকা, রসুন ১৬০ টাকা ও পেঁয়াজ ৫০ টাকা কেজি বিক্রি করতে দেখা যায়। গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে সবজির দাম কমছে বলে জানান বিক্রেতারা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র  জানায়, রোপা আমন ধান কাটা-মাড়াইয়ের সঙ্গে সঙ্গে ২০২৩-২৪ রবি মৌসুমে  শাক সবজি চাষের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেন জেলার পাঁচ উপজেলার কৃষকরা। জেলায়  ৫ হাজার  হেক্টর জমিতে শাক সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। যার মধ্যে আগাম জাতের সবজিও রয়েছে। এতে সবজির উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ১০ হাজার  মেট্রিক টন। যা জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের অন্যান্য জেলায় সরবরাহ করা সম্ভব হয়ে থাকে।  জয়পুরহাট জেলার হাট বাজার গুলোতে করোলা, শসা ও বেগুণের অতিরিক্ত আমদানি হওয়ার কারনে দাম কমেছে বলে মন্তব্য করেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক  কৃষিবিদ রাহেলা পারভীন । (বাসস)