জিদানের ২ মিনিটের সেই বক্তৃতা

২০১৭ সালের ৩ জুন, কার্ডিফের মিলেনিয়াম স্টেডিয়ামে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেই ফাইনালের স্মৃতি টাটকাই থাকার কথা। ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো জাদুতে কি নিদারুণভাবেই না জুভেন্টাসকে বিধ্বস্ত করেছিল রিয়াল মাদ্রিদ। জুভেন্টাসকে ৪-১ গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের রেকর্ড দ্বাদশ শিরোপা ঘরে তুলে রিয়াল। রক্ষণ নির্ভর জুভেন্টাসের বিপক্ষে রিয়ালের ৪-১ গোলের বড় জয়ে রিয়ালকে সবচেয়ে বেশি অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল কোচ জিনেদিন জিদানের ২ মিনিটের জ্বালাময়ী বক্তৃতা!

হ্যাঁ, সত্যিই তাই। ম্যাচ শেষে রিয়ালের খেলোয়াড়েরাই বলেন অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে কোচ জিদানের বক্তৃতার কথা। ম্যাচ শুরুর আগে ড্রেসিংরুমে খেলোয়াড়দের উদ্দেশ্যে ছোট্ট একটা বক্তৃতা দেন জিদান। বক্তৃতাটা ছিল মাত্র ২ মিনিটের। সেই বক্তৃতাই মাঠে রিয়ালের খেলোয়াড়দের সবচেয়ে বেশি উজ্জীবিত করে বলে দাবি করেন অধিনায়ক সার্জিও রামোস।

তবে ছোট্ট সেই বক্তৃতায় জিদান কি বলেছিলেন, রামোস তখন বলেননি। শুধু বলেছিলেন বক্তৃতাটা ছিল জ্বালাময়ী। যা রিয়ালের প্রতিটি খেলোয়াড়ের জয়ের ক্ষুধা বাড়িয়ে দিয়েছিল।

এতোদিন পর কোচ জিদানের সেই জ্বালাময়ী বক্তৃতা আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়েছে স্প্যানিশ ক্রীড়া দৈনিক মার্কা। ‘গোল করতে পারি না পারি, কিন্তু খাব না’, এটাই ইচ্ছে ইতালিয়ান ক্লাবগুলোর প্রধান দর্শন। জুভেন্টাসকে বলা যায় এই দর্শনের স্বার্থক পুজারি। জুভেন্টাসের রক্ষণদূর্গ ভেদ করে জাল খুঁজে পাওয়া দুনিয়ার সবচেয়ে কঠিনতম কাজগুলোর একটি।
এটা গত মৌসুমেই হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছিল বার্সেলোনা। চ্যাম্পিয়ন্স লিগেরই কোয়ার্টার ফাইনালে দুই লেগ মিলিয়ে জুভেন্টাসের রক্ষণভেদ করে জাল খুঁজে পাননি মেসি-সুয়ারেজ-নেইমাররা। (উল্লেখ্য, নেইমার তখন বার্সেলোনায় ছিলেন।)

সেই জুভেন্টাসের বিপক্ষে ৪-১ গোলের জয় চাট্টিখানি কথা নয়। রামোস দাবি করেন, কোচ জিদানের জ্বালাময়ী বক্তৃতায় অনুপ্রাণিত হয়েই রোনালদো-কাসেমিরো-এসেনসিওরা তা সম্ভব করতে পারেন। খেলোয়াড়ী জীবনে জিদান দীর্ঘ সময় খেলেছেন জুভেন্টাসে।

ইতালিয়ান ক্লাবটির দর্শন, কৌশল সবই তার জানা। নিজের সেই বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকেই শিষ্যদের কানে তুলে দিয়েছিলেন দুটি গরম কথা। বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, শক্ত দেয়াল গুঁড়িয়ে দিতে হলে চালাতে হবে বুলডোজার। মাঠে থাকতে হবে প্রচণ্ড আক্রমণাত্মক, ‘আমরা সবাই জানি, এটা কঠিন ম্যাচ। মনে রাখতে হবে তাদের জন্যও একই রকম কঠিন। জুভেন্টাসের রক্ষণ কতটা শক্তিশালী আমরা সবাই জানি। কাজেই আমাদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, তাদের প্রতিহত করতে মাঠে থাকতে হবে আগ্রাসী। তবে এমন আগ্রাসী হওয়া যাবে না, যাতে হলুদকার্ড পেতে হয়।’

ছোট্ট সেই বক্তৃতায় ম্যাচের ট্যাকটিকস নিয়েও কথা বলেন জিদান। মাঠে যার যে দায়িত্ব, বুঝিয়ে দেন নিখুঁতভাবে। জিদানের সেই জ্বালাময়ী বক্তৃতা আর পরামর্শ কতটা কাজে দেয়, সেটা তো ম্যাচের ফলেই প্রমাণিত।

আজকের বাজার : সালি / ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮