বিশ্ব ম্যালেরিয়া দিবস আজ

ঝুঁকিতে দেশের পৌনে ২ কোটি মানুষ

আজ বিশ্ব ম্যালেরিয়া দিবস। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘ম্যালেরিয়া নির্মূলে প্রস্তুত আমরা।’ বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হচ্ছে। এ উপলক্ষে বেলা সাড়ে ১১টায় রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম দিবসটির উদ্বোধন করবেন। দিবসটি উপলক্ষে মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার উদ্যোগে এবং ব্র্যাকের সহযোগিতায় সেমিনারের আয়োজন করা হয়। এ ছাড়া আজ (বুধবার) দেশের সব জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে বিশেষ কর্মসূচি পালন করা হবে।

এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমরা যে ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি তাতে নির্দিষ্ট সময়ে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হবে। এর মধ্যে ২০২১ সালের মধ্যে ১৩টি ম্যালেরিয়াপ্রবণ জেলার বার্ষিক সংক্রমণের হার হাজারে শূন্য দশমিক ৪৬-এর নিচে নামিয়ে আনা। একই সময়ে ১৩টি ম্যালেরিয়াপ্রবণ জেলার আটটিতে ম্যালেরিয়া সংক্রমণ রোধ করা। ২০২১ সালের মধ্যে ৫১টি জেলাকে ম্যালেরিয়ামুক্ত নিশ্চিত করা। তিনি বলেন, ২০০৮ সালের তুলনায় বর্তমানে ম্যালেরিয়া রোগীর সংখ্যা কমেছে ৬৫ শতাংশ এবং মৃত্যুহার কমেছে ৯২ শতাংশ।

দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে দক্ষিণ এবং উত্তর-পূর্ব সীমান্তবর্তী ১৩টি জেলার ৭১টি উপজেলায় ম্যালেরিয়া রোগের মারাত্মক প্রাদুর্ভাব রয়েছে। এর মধ্যে পার্বত্য রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি ম্যালেরিয়াপ্রবণ এবং কক্সবাজার মধ্য ম্যালেরিয়াপ্রবণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত। এসব এলাকার প্রায় এক কোটি ৭৫ লাখ মানুষ ম্যালেরিয়া ঝুঁকিতে রয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের ম্যালেরিয়া নির্মূল কর্মসূচির তথ্য মতে, দেশের মোট ম্যালেরিয়া আক্রান্তের ৯৩ শতাংশই তিন পার্বত্য জেলায়। ২০১৭ সালের ম্যালেরিয়া রোগীদের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ৮৫ শতাংশ রোগীই ফ্যালসিপেরাম জীবাণুঘটিত। যা পরে মারাÍক ম্যালেরিয়া এবং এ রোগে মৃত্যুর জন্য দায়ী।

ম্যালেরিয়া নির্মূল কর্মসূচি থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ২০১৫ সালে দেশে ৩৯ হাজার ৭১৯ জন ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়, যার মধ্যে ৯ জনের মৃত্যু ঘটে। ২০১৬ সালে ২৭ হাজার ৭৩৭ জন ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয় এবং ১৭ জনের মৃত্যু ঘটে। ২০১৭ সালে ২৯ হাজার ২৩৭ জন আক্রান্ত হয় এবং ১৩ জনের মৃত্যু ঘটে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. সানিয়া তহমিনা বলেন, ম্যালেরিয়া মশাবাহিত রোগ। বাহকবাহিত যে কোনো রোগ সম্পূর্ণ নির্মূল করা কঠিন। এ ক্ষেত্রে ধৈর্য ধরতে হবে। ব্যবস্থাপনা যত কার্যকর হবে পরিস্থিতি ততই উন্নত হবে। ২০৩০ সালের মধ্যে ম্যালেরিয়া নির্মূলের লক্ষ্যেই আমরা কাজ করছি।

এদিকে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা প্রকাশিত ২০১৭ সালের নভেম্বরে সর্বশেষ বিশ্ব ম্যালেরিয়া রিপোর্ট অনুযায়ী ২০১৬ সালে ২১ কোটি ১০ ??লাখের বেশি মানুষ ম্যালেরিয়া আক্রান্ত হন। এর মধ্যে চার লাখ ৪৫ হাজার জনের মৃত্যু ঘটে। যদিও এর আগের বছর এ রোগে মৃতের সংখ্যা ছিল চার লাখ ৪৬ হাজার। ম্যালেরিয়া একটি বাহকবাহিত রোগ। পৃথিবীর প্রায় অর্ধেক মানুষ ম্যালেরিয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। ২০১১ সালে বিশ্বের ৯১টি দেশে ম্যালেরিয়ায় আনুমানিক ২১৬ মিলিয়ন মানুষ আক্রান্ত হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ‘ওয়ার্ল্ড ম্যালেরিয়া রিপোর্ট-২০১৭’-তে তথ্য প্রকাশিত হয়েছে।

২০১২ সালে আফ্রিকায় প্রায় ৯ শতাংশ মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হয়। তার মধ্যে ৯১ শতাংশ মৃত্যুবরণ করে। বিশ্বে ম্যালেরিয়া নির্মূলে ২০১৬ সালে আনুমানিক ২ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ব্যয় হয়। ২০১২ সালে বিশ্বের জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকই ম্যালেরিয়া ঝুঁকিতে ছিল। আফ্রিকায় ম্যালেরিয়ায় মৃত্যুহার বেশি।

এস/