ড. কামাল সংবিধানপ্রণেতা নন: ডেপুটি স্পিকার

গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন সংবিধানপ্রণেতা নন বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া। তিনি বলেন, ড. কামাল হোসেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অনুকম্পায় সংবিধান প্রণয়ন কমিটির সভাপতি হয়েছিলেন। এই কমিটির ৩৪ জন সদস্য ছিলেন। সংবিধান প্রণয়নে ড. কামালের মতো কমিটির অন্য সদস্যদেরও ভূমিকা ছিল।

রোববার (২৮ অক্টোবর) জাতীয় সংসদে অনির্ধারিত আলোচনায় এই বিষয়ে আলোচনার সূচনা করেন স্বতন্ত্র সাংসদ তাহজীব আলম সিদ্দিকী। তাঁর আলোচনার সূত্র ধরে ডেপুটি স্পিকার এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘আমি বিষয়টি সংসদে রেকর্ড হিসেবে রাখতে চাই।’

ডেপুটি স্পিকার বলেন, ‘আপনারা অনেকেই তাঁকে (ড. কামালকে) সংবিধানের রচয়িতা বলে থাকেন। সেই বিষয়ে আজকে সংবিধান প্রণয়ন প্রতিবেদন পড়েছি। সংবিধান প্রণয়নে গণপরিষদে ৩৪ সদস্যের একটি কমিটি হয়েছিল। ড. কামালকে সেই ৩৪ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির চেয়ারম্যান বানিয়েছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সুতরাং ড. কামাল যদি নিজে বলেন বা কেউ যদি তাঁকে বলার চেষ্টা করেন যে তিনি সংবিধানের প্রণেতা, নো। আই ডোন্ট অ্যাকসেপ্ট ইট। দ্য পিপল শুড নট অ্যাকসেপ্ট ইট, দিস পার্লামেন্ট শুড নট অ্যাকসেপ্ট ইট। হি ওয়াজ দ্য অনলি চেয়ারম্যান। সেখানে আরও ৩৪ জন লোক ছিলেন। তাঁরাও মেম্বার ছিলেন। তাঁদেরও সেখানে অবদান আছে।’

ডেপুটি স্পিকার আরও বলেন, ড. কামাল শুধু বঙ্গবন্ধুর অনুকস্পার কারণেই সেই কমিটির চেয়ারম্যান হতে পেরেছিলেন। চেয়ারম্যান অন্য কোনো ব্যারিস্টারও হতে পারতেন। অন্য কোনো সংসদ সদস্যও হতে পারতেন।

ড. কামাল হোসেনকে ইঙ্গিত করে স্বতন্ত্র এই সাংসদ বলেন, একজন শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তিত্ব, যিনি সংবিধানের অন্যতম প্রণেতাও বটে। তিনি সারা জীবনের লালিত প্রগতিশীল, অসাম্প্রদায়িক ও উদারপন্থী রাজনৈতিক আদর্শ পরিত্যাগ করে ডানপন্থী মৌলবাদী, সাম্প্রদায়িক চেতনা লালনকারীদের সঙ্গে জোট বেঁধেছেন। শুধু রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য নীতি, আদর্শ, রাজনৈতিক ঐতিহ্য—কিছুই তাঁকে আর বেধে রাখতে পারছে না।

প্রসঙ্গত, সংবিধান প্রণয়নের উদ্দেশ্যে ১৯৭২ সালের ১১ এপ্রিল ড. কামাল হোসেনকে সভাপতি করে ৩৪ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। একই বছরের ৪ নভেম্বর গণপরিষদে বাংলাদেশের সংবিধান গৃহীত হয়। কমিটির সদস্যরা হলেন ড. কামাল হোসেন (ঢাকা-৯, জাতীয় পরিষদ), তাজউদ্দীন আহমদ (ঢাকা-৫, জাতীয় পরিষদ), সৈয়দ নজরুল ইসলাম (ময়মনসিংহ-১৭, জাতীয় পরিষদ), এ এইচ এম কামারুজ্জামান (রাজশাহী-৬, জাতীয় পরিষদ), এম আবদুর রহিম (দিনাজপুর-৭, প্রাদেশিক পরিষদ), এম আমীর-উল ইসলাম (কুষ্টিয়া-১, জাতীয় পরিষদ), ক্ষিতীশ চন্দ্র (বাকেরগঞ্জ-১৫, প্রাদেশিক পরিষদ), আবদুল মমিন তালুকদার (পাবনা-৩, জাতীয় পরিষদ), মো. লুৎফর রহমান (রংপুর-৪, জাতীয় পরিষদ), আবু সাইয়িদ (পাবনা-৫, জাতীয় পরিষদ), মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম মনজুর (বাকেরগঞ্জ-৩, জাতীয় পরিষদ), আবদুল মুনতাকীম চৌধুরী (সিলেট-৫, জাতীয় পরিষদ), সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত (সিলেট-২, প্রাদেশিক পরিষদ), খন্দকার মোশতাক আহমেদ (কুমিল্লা-৮, জাতীয় পরিষদ), আবদুর রউফ (রংপুর-১১, ডোমার, জাতীয় পরিষদ), মোহাম্মদ বায়তুল্লাহ (রাজশাহী-৩, জাতীয় পরিষদ), বাদল রশীদ, বার অ্যাট ল, খন্দকার আবদুল হাফিজ (যশোর-৭, জাতীয় পরিষদ), শওকত আলী খান (টাঙ্গাইল-২, জাতীয় পরিষদ), মো. হুমায়ন খালিদ খালিদ, আছাদুজ্জামান খান (যশোর-১০, প্রাদেশিক পরিষদ), এ কে মোশাররফ হোসেন আখন্দ (ময়মনসিংহ-৬, জাতীয় পরিষদ), আবদুল মমিন, শামসুদ্দিন মোল্লা (ফরিদপুর-৪, জাতীয় পরিষদ), শেখ আবদুর রহমান (খুলনা-২, প্রাদেশিক পরিষদ), ফকির সাহাব উদ্দিন আহমদ, অধ্যাপক খোরশেদ আলম (কুমিল্লা-৫, জাতীয় পরিষদ), সিরাজুল হক (কুমিল্লা-৪, জাতীয় পরিষদ), দেওয়ান আবু আব্বাছ (কুমিল্লা-৫, জাতীয় পরিষদ), হাফেজ হাবিবুর রহমান (কুমিল্লা-১২, জাতীয় পরিষদ), আবদুর রশিদ, নুরুল ইসলাম চৌধুরী (চট্টগ্রাম-৬, জাতীয় পরিষদ), মোহাম্মদ খালেদ (চট্টগ্রাম-৫, জাতীয় পরিষদ) ও বেগম রাজিয়া বানু (নারী আসন, জাতীয় পরিষদ)।

আজকের বাজার/এমএইচ