ঢাকায় ৩০ শতাংশ রিকশাচালকই জন্ডিসে আক্রান্ত: গবেষণা

ঢাকার ৯৪ শতাংশ রিকশাচালকই অসুস্থ, তার মধ্যে ৩০ শতাংশ ভুগছে জন্ডিস রোগে। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার রাইটস (বিলস) নামে একটি শ্রমিক অধিকার প্রতিষ্ঠানের জরিপে এমনটা ওঠে এসেছে।

বিবিসি বাংলা জানায়, ঢাকার রিকশাচালকদের নিয়ে এ প্রথমবারের মতো বড় আকারের একটি গবেষণা চালায় বিলস। এতে রিকশাকে ঘিরে ঢাকা শহরের মানুষের জীবিকা, তাদের মাসিক আয় সহ স্বাস্থ্যগত বিষয়টি ওঠে আসে।

ঢাকায় বর্তমানে প্রায় ১১ লাখ রিকশা চলছে বলে তাদের প্রাথমিক রিপোর্টে উঠে এসেছে। এই রিকশাগুলো সাধারণত বিভিন্ন সংস্থার অধীনে নিবন্ধন পেয়ে থাকে।

এসব রিকশার ওপর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অন্তত ২৭ লাখ মানুষের জীবিকা নির্ভর করে বলে জরিপে জানা যায়।

কেননা একটি রিকশা সাধারণত দুই শিফটে চালানো হয়। একজন হয়তো সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চালান, আরেকজন দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত।

সে ক্ষেত্রে রিকশার সংখ্যা যদি ১১ লাখ ধরা হয় তাহলে রিকশা চালকের সংখ্যাই দাঁড়ায় ২২ লাখে।

সেই সঙ্গে, রিকশা মেরামত, রিকশার যন্ত্রাংশ ব্যবসায়ী, গ্যারেজ ব্যবসায়ী সব মিলিয়ে আরও কয়েক লাখ মানুষের জীবিকা এই রিকশার সঙ্গে যুক্ত।

কিন্তু ঢাকার ৯৪ শতাংশ রিকশাচালকই অসুস্থ বলে ভয়াবহ এক চিত্র ওঠে আসে জরিপে। যাদের ৩০ শতাংশই জন্ডিসে আক্রান্ত।

দেখা গেছে, রিকশা চালিয়ে আয় রোজগার আগের চাইতে বাড়লেও তাদের জীবনমানের কোনো উন্নতি হয়নি।

বিশেষ করে তাদের বিশ্রাম, খাবার দাবার, বিশুদ্ধ পানি ও টয়লেটের সংকটে ভুগতে হয় প্রকটভাবে।

এ ছাড়া একজন রিকশাচালকের পক্ষে প্রতিদিন রিকশা চালানোও সম্ভব হয় না।

বিলসের পরিচালক কোহিনূর মাহমুদ বলেন, “এই কাজটি খুবই শ্রমসাধ্য এবং রোদ-বৃষ্টিতে পুড়ে তাদের রিকশা চালাতে হয়। যার একটা বড় ধরনের প্রভাব তাদের স্বাস্থ্যের ওপর পড়ে।”

ফলে বিশেষ করে জ্বর-কাশি, ঠান্ডা, গায়ে ব্যথা, দুর্বলতা তাদের লেগেই থাকে।

তার মধ্যে রিকশা চালকেরা সুপেয় পানি, পুষ্টিকর খাবার ও টয়লেটের তীব্র সংকটে ভোগেন।

রিকশা চালক রিপন মিয়া জানান, তাদের বেশির ভাগ সময় ড্রেনে বা গাছপালার আড়ালে টয়লেটের কাজ সারতে হয়।

এ ছাড়া যে কয়টা মোবাইল টয়লেট বা পাবলিক টয়লেট রয়েছে, সেগুলো ব্যবহারের ক্ষেত্রেও ৫ থেকে ১০ টাকা গুনতে হয় বলে তিনি জানান।

বেশির ভাগ রিকশাওয়ালা তাদের দিনের খাওয়া সারেন বিভিন্ন টংয়ের দোকানে রুটি, কেক ও চা খেয়ে। যাতে তারা ভাত খাওয়ার পয়সা সাশ্রয় করতে পারেন।

এখন রাস্তাঘাটে যদি তাদের কথা ভেবে সস্তায় পুষ্টিকর খাবার বিক্রির ব্যবস্থা রাখা হতো, তাহলে তাদের হয়তো এতটা ভোগান্তির মুখে পড়তে হতো না বলে মনে করছে সংস্থাটি।

সব মিলিয়ে এই রিকশাচালকরা বড় ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকিতে থাকেন বলে জানান কোহিনূর মাহমুদ।

আজকের বাজার/এমএইচ