বাজার ধরতে পারছে না নকিয়ার স্মার্টফোন

বাংলাদেশের বাজারে ঢাক-ঢোল পিটিয়ে আসলেও বাজার ধরতে পারছে না এক সময়ের জনপ্রিয় মোবাইল ফোন ব্যান্ড নকিয়া। ধীরে ধীরে সংকুচিত হচ্ছে নকিয়ার বাজার। আগের বাজার ধরতে জন্মের ১৭ বছর পর নকিয়া ৩৩১০ মডেলের পুনর্জন্ম হলেও এর দাম নিয়ে গ্রাহকদের অসন্তোষ রয়েছে।

বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান কাউন্টার পয়েন্ট সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বাংলাদেশের হ্যান্ডসেট বাজারের ২৯ শতাংশ শুধু চীনা ব্র্যান্ডের দখলে রয়েছে। যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৩ শতাংশ বেশি। চীনের ব্র্যান্ডগুলোও এখন ব্যবহারকারীর চাহিদা বিবেচনা করে স্থানীয় ব্র্যান্ডগুলোর সঙ্গে একধরনের প্রতিযোগিতায় নেমেছে। তবে এখনো স্থানীয় ব্র্যান্ড হিসেবে বাংলাদেশে সিম্ফনি এক নম্বর অবস্থানে রয়েছে। সিম্ফনি দেশের স্মার্টফোন বাজারের ২৬ শতাংশ দখল করে আছে। আর ১৪ শতাংশ বাজার শেয়ার ধরে রেখে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে দক্ষিণ কোরিয় প্রতিষ্ঠান স্যামসাং। তবে এরই মধ্যে দেশে তৃতীয় অবস্থানে উঠে এসেছে চীনা ব্র্যান্ড হুয়াওয়ে। ব্র্যান্ডটি দেশের স্মার্টফোন বাজারে ৮ দশমিক ৫ শতাংশ বাজার শেয়ার দখল করেছে। শীর্ষ পাঁচে রয়েছে বাংলাদেশি আরেক ব্র্যান্ড ওয়ালটন। যারা সম্প্রতি দেশেই স্মার্টফোন তৈরি শুরু করেছে। তারা ৮ দশমিক ৩ শতাংশ বাজার শেয়ার ধরে রেখেছে।

চীনের আরেকটি ব্র্যান্ড আইটেল দেশে অল্প সময়ে বড় একটি বাজার দখল করে ফেলেছে। ব্র্যান্ডটি দেশে স্মার্টেফোনের ৬ দশমিক ৯ শতাংশ বাজার শেয়ার দখল করেছে। এ তালিকায় নকিয়ার অবস্থায় পাওয়া যায়নি।

এছাড়া সম্প্রতি বাজারে ছাড়া নকিয়ার হ্যান্ডসেটগুলোতে বেশ দুর্বলতা দেখা দিয়েছে। পাঁচ ইঞ্চি ডিসপ্লের নকিয়া-২ এর কালার, ব্রাইটনেস বা কন্ট্রাস্ট-সবকিছুই সাধারণ মানের। একই মূল্যের অন্যান্য ফোনের চেয়ে কোনো দিক থেকেই উন্নতমানের নয়। ফোনটির পারফরমেন্সের ব্যাপারে হতাশা ছাড়া আর কোনো শব্দ ব্যবহার করা যায় না। মোবাইল দুনিয়া ২০১৪ সাল থেকেই ৬৪বিটে হাঁটলেও ২০১৭তে এসে ৩২বিট, কর্টেক্স এ৭ প্রসেসর সমৃদ্ধ ফোন বাজারে আনা একবারেই স্বল্প বুদ্ধির কাজ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। কর্টেক্স এ৭ কোয়াডকোর প্রসেসর হালকা থেকে মাঝারি গেইমিং সামলে নিতে পারলেও ভারী কোনো কাজই করতে পারে না। আজকাল স্মার্টওয়াচেও ১ জিবি র‌্যাম ব্যবহার করা হলেও নকিয়া-২ ব্যবহার করা হয়েছে ১ জিবি র‌্যাম। এইচডি ভিডিও চালাতে গেলে র‌্যামের স্বল্পতা ভোগাবে ব্যবহারকারীকে। সব মিলিয়ে পারফরমেন্সে হতাশ করেছে নকিয়া-২। এই মূল্যে চীনা ফোনগুলো প্রায় সব দিক থেকেই ছাড়িয়ে যাবে নকিয়াকে। বেশ কয়েকজন ব্যবহারকারী জানান ভোগান্তির আরেক নাম নকিয়া লুমিয়া। এর মধ্য আবুল কালাম আজাদ নামে জাতীয় পত্রিকার একজন সাংবাদিক বলেন, আমি নোকিয়ার একটি উইন্ডোজ ফোন ব্যবহার করেছি। উইন্ডোজের চেয়ে অ্যান্ড্রয়েড ফোন অনেক ভাল। বর্তমানে নোকিয়ার সেই আগের কোয়ালিটি নেই।

উল্লেখ্য, ২০১০ সালের পর অ্যাপলের আইওএস এবং এন্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমের উত্থানের কারণে সিম্বিয়ান পিছিয়ে পড়তে থাকে। সামসাং, সনি এরিকসন এন্ডয়েডে চলে যায়। নকিয়া তখন মাইক্রোসফটের সাথে যুক্ত হয়ে উইন্ডোজ প্লাটফর্মে স্মার্টফোন বাজারে আনার সিদ্ধান্ত নেয়। ২০১১ সালে বাজারে আসে লুমিয়া-৮০০। যা নকিয়ার প্রথম উইন্ডোজ ফোন। কিন্তু সিম্বিয়ানের ভরাডুবিতে নকিয়ার যে পতন হচ্ছিলো তা লুমিয়া বাঁচাতে পারেনি। ২০১২ সালের মাঝামাঝি নকিয়া প্রায় দেউলিয়া কোম্পানিতে পরিণত হয়। সেই বছরই লুমিয়া ৯২০ সেটের ঘোষণা দেয় প্রতিষ্ঠানটি। এতো কিছুর পরও তাদের ভরাডুবি থামানো যাচ্ছিলো না। অবশেষে ২০১৩ সালে নকিয়া ঘোষণা দেয় তাদের মোবাইল ও ডিভাইস ডিভিশন মাইক্রোসফটের কাছে বিক্রি করে দেবে। সেই বছরই নকিয়ার মোবাইল ডিভাইস ও সার্ভিস ইউনিট ৭.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার কিনে নেয় মাইক্রোসফট। নকিয়ার মূল স্মার্টফোন ডিভিশন কিনে নিয়ে নিজেদের উইন্ডোজ ফোন অপারেটিং সিস্টেমের সাথে একে আরো গভীরভাবে যুক্ত করে মাইক্রোসফট। প্রতিষ্ঠানটি নিজেদের নামেই স্মার্টফোন বাজারজাত শুরু করে। কিন্তু অ্যান্ড্রয়েড এর যুগে খুব একটা সুবিধা করতে পারে না উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের ফোন। এরই মধ্যে নকিয়ার সাবেক কিছু কর্মী এইচএমডি গ্লোবাল নামে নতুন একটি কোম্পানি খুলে নকিয়ার কাছ থেকে ব্র্যান্ড লাইসেন্স ‘নকিয়া’ কিনে নেয়। বর্তমানে তারাই নকিয়ার ফোন বাজারজাত করছে।

নকিয়ার মতোই নানা উদ্যোগে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছিল কানাডার প্রতিষ্ঠান ব্ল্যাকবেরি। কিন্তু ব্ল্যাকবেরির ফোন জনপ্রিয় হয়নি। এখন শুধু সফটওয়্যারের দিকে ঝুঁকেছে তারা। কিন্তু নকিয়া মরিয়া হয়ে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বাজার ধরতে। তবে সে সম্ভাবনা কতোটুকু তা সময়ই বলে দেবে।

আজকের বাজার : এলকে/ ৩০ ডিসেম্বর ২০১৭