তারেক রহমানের দিকনির্দেশনায় চলবে বিএনপি

দলীয় গঠণতন্ত্র অনুযায়ী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদার জিয়ার অবর্তমানে সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানই দলটির হাল ধরতে যাচ্ছেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দলীয় সূত্রে এ সিদ্ধান্তের কথা জানা গেছে। খুব শিগগিরই বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হতে পারে।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারপারসন তারেক রহমানকে সাজা দিয়েছেন আদালত। বৃহস্পতিবার রাজধানীর পুরান ঢাকার বকশীবাজার আলিয়া মাদ্রাসায় স্থাপিত বিশেষ আদালত-৫ এর বিচারক ড. আখতারুজ্জামান এই রায় ঘোষণা করেন।

রায়ে খালেদা জিয়াকে ৫ বছর দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে তারেক রহমানসহ বাকি আসামিদের ১০ বছর কারাদণ্ড এবং ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা অর্থদণ্ড দেয়া হয়েছে।

রায় ঘোষণার পর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের ডে-কেয়ার সেন্টারে রাখা হয়েছে। আর তারেক রহমান দীর্ঘদিন ধরে লন্ডনে অবস্থান করছেন। তিনি আরও একটি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত।

বিএনপির ২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর সংশোধিত দলীয় গণতন্ত্র অনুযায়ী খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। তবে দলের নেতারা চান, চেয়ারপারসনের চূড়ান্ত রায় পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নয়, আপদকালীন দায়িত্ব চালিয়ে যান তারেক রহমান।

গঠনতন্ত্রে সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যানের কর্তব্য, ক্ষমতা ও দায়িত্ব সংক্রান্ত (গ) (২) (৩) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘চেয়ারম্যানের সাময়িক অনুপুস্থিতে তিনি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।’ (৩) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘যে কোনো কারণে চেয়ারপারসনের পদ শূন্য হলে সিনিয়ির ভাইস চেয়ারম্যান অবশিষ্ট মেয়াদের জন্য চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।’

এদিকে, দলের গঠনতন্ত্রের ৭ ধারা ২০১৬ সালের ১৯ মার্চে কাউন্সিলরদের সর্বসম্মতিক্রমে বাতিল করেছে বিএনপি। দলটির গঠনতন্ত্র সংশোধন বিষয়ক কমিটির প্রধান নজরুল ইসলাম খান এ তথ্য জানান।

গঠনতন্ত্রের ৭ নম্বর ধারায় বলা ছিল, ‘কমিটির সদস্যপদের অযোগ্যতা- নিম্নোক্ত ব্যক্তিগণ জাতীয় কাউন্সিল, জাতীয় নির্বাহী কমিটি, জাতীয় স্থায়ী কমিটি বা যে কোনো পর্যায়ের যে কোনো নির্বাহী কমিটির সদস্যপদের কিংবা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের প্রার্থী পদের অযোগ্য বলে বিবেচিত হবে। (ক) ১৯৭২ সালের রাষ্ট্রপতির আদেশ নং ৮-এর বলে দণ্ডিত ব্যক্তি; (খ) দেউলিয়া; (গ) উন্মাদ বলে প্রমাণিত ব্যক্তি; (ঘ) সমাজে দুর্নীতিপরায়ণ বা কুখ্যাত বলে পরিচিত ব্যক্তি।’

দীর্ঘদিন পর গত ২৮ জানুয়ারি নির্বাচন কমিশনে সংশোধিত গঠনতন্ত্র জমা দেয় বিএনপি। মূলত, বিএনপি চেয়ারপারসন ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় সাজার আশঙ্কা থেকে আগেই এই সংশোধনী আনা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

দলের দুই শীর্ষ নেতার সাজা হওয়ার পর দলের নেতৃত্বে কার হাতে থাকবে এমন প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘শীর্ষ নেতৃত্ব বলে কিছু নেই। নেতৃত্ব বেগম খালেদা জিয়া দিচ্ছেন। ম্যাডামের সঙ্গে তো আমাদের যোগাযোগ আছেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘দলের স্থায়ী কমিটি আছে, আরও সিনিয়র নেতারা আছেন, তাদের সঙ্গে সমন্বয় করেই দল চলবে। এর কোনো ব্যত্যয় ঘটবে না।’

আজকের বাজার: সালি / ০৮ জানুয়ারি ২০১৭