দাবানলের কড়াল গ্রাসের শিকার ৫০ কোটি বন্যপ্রাণ

নিউ সাউথ ওয়েলসের বিস্তীর্ণ অঞ্চল, দাবানলের কড়াল গ্রাসে ভিক্টোরিয়া। ১৫ মিলিয়ন হেক্টর এলাকা জুড়ে পুড়ছে দেশের দক্ষিণ-পূর্ব অংশ। ভয়ঙ্কর জাতীয় বিপর্যয়ের সম্মুখীন অস্ট্রেলিয়া। দেশের সবচেয়ে জনবসতিপূর্ণ দুই রাজ্যে দাবানলের লেলিহান শিখায় ক্ষতিগ্রস্থ ১৫০০-রও বেশি ঘর-বাড়ি। এখন পর্যন্ত ২৮ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে বেসরকারী সূত্রের খবর।

তবে দাবানলের ফলে অস্ট্রেলিয়ার বিস্তীর্ণ বনাঞ্চল জুড়ে ছড়িয়ে থাকা বন্যপ্রাণীদের দুর্বিসহ ছবি এবং ভিডিও পৃথিবীর মানুষের কাছে আরও হৃদয়বিদারক হয়ে উঠেছে। সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিদদের একটি সমীক্ষা দাবানলের কারণে হতাহত বন্যপ্রাণের যে সংখ্যা জানিয়েছে, তাতে চোখ কপালে ওঠার জোগাড়। গত সেপ্টেম্বর থেকে দাবানলের কড়াল গ্রাসের শিকার অস্ট্রেলিয়ার ৫০ কোটি বন্যপ্রাণ। তালিকায় রয়েছে কোয়ালা, জাতীয় পশু ক্যাঙ্গারুর মত একাধিক স্তন্যপায়ী, পাখি এবং সরীসৃপ।

দেশের পরিবেশ মন্ত্রী সুসান লে এবিসি রেডিওকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে ভয়ঙ্কর এক পরিসংখ্যান তুলে ধরেছেন। মধ্য নিউ সাউথ ওয়েলস ও রাজ্যের উত্তরাংশ মূলত কোয়ালা প্রজাতির আঁতুড়ঘর। সেখানে মৃত্যু হয়েছে হাজার-হাজার কোয়ালার। দাবানলের কারণে নিউ সাউথ ওয়েলসের প্রায় ৩০ শতাংশ কোয়ালা প্রাণ হারিয়েছে বলে ধারণা করেছেন লে। পাশাপাশি নিউ সাউথ ওয়েলসের মোনারোয় দাবানলের ভয়াল গ্রাস থেকে বাঁচতে ক্যাঙ্গারুদের নিরাপদে আশ্রয় নেওয়ার ছবি ইন্টারনেটে ভাইরাল। লে জানিয়েছেন, ‘আগুন না নেভা পর্যন্ত সঠিকভাবে কোনও তথ্য জানানো সম্ভব নয়।’

ডিসেম্বরেই নিউ সাউথ ওয়েলস গভর্নমেন্ট রাজ্যে স্তন্যপায়ী কোয়ালার সংখ্যা ও তাদের আবাস সম্পর্কিত একটি সেনেটের আয়োজন করে। সেখানে নেচার কনসার্ভেশন কাউন্সিলের এক পরিবেশবিদ জানিয়েছিলেন, আগুন দ্রুত যেভাবে ছড়াচ্ছে তাতে ধীরগতি সম্পন্ন কোয়ালাদের পক্ষে সহজে স্থান বদল করে নিরাপদ আশ্রয় খুঁজে নেওয়া সম্ভবপর নয়। এছাড়া দাবানলের কারণে ওয়েস্টার্ন গ্রাউন্ড প্যারোট ও ক্যাঙ্গারু প্রজাতিও বড়সড় বিপদের মুখে বলে জানিয়েছেন লে।

এছাড়াও পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে স্থানীয় চাষীদের হেক্টরের পর হেক্টর ফসলি জমি। অস্ট্রেলিয়ার বেশ কয়েকটি জায়গায় এই মুহূর্তে হাওয়ার গতিবেগ দাঁড়িয়েছে ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটারের কাছাকাছি। যার জেরে আরও জটিল হচ্ছে পরিস্থিতি। এখনও অনেক জায়গাতেই চলছে ঝোড়ো হাওয়া। এর আগে কখনও অস্ট্রেলিয়ার আবহাওয়া এত উত্তপ্ত হয়নি বলে জানাচ্ছেন পরিবেশবিদরা।

আজকের বাজার/লুৎফর রহমান