দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে নীল মণির চেষ্টায় ৩ সন্তানের শিক্ষা গ্রহণ

জেলার  ফুলবাড়ী উপজেলার পল্লীতে  গত ১৮ বছর পূর্বে নীলমণির  স্বামী মারা গেছে। নিজে শিক্ষিত না হলেও ৩ সন্তানকে দিনমজুরি করে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলেছেন ।
সরজমিন খোঁজ নিয়ে সম্প্রতি দিনাজপুর ফুলবাড়ী উপজেলার ফরিদাবাদ গ্রামের মৃত রমেন মুর্মূর স্ত্রী নীল মণি এ তথ্য জানায় । তিনি জানান , গত ২০০৬ সালে দুই ছেলে ও এক মেয়ে রেখে তার স্বামী মারা যায় । এরপর থেকে শুরু হয় নীল মণির জীবন সংগ্রাম। স্বামী মারা যাওয়ার সময় বড় ছেলে জীবন মুর্মূ  এসএসসি পরীক্ষার্থী। ছোট ছেলে ইলিয়াস মুর্মূ পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র। মেয়ে রোজিনা মুর্মূ তখন কোলের শিশু। স্বামী মারা যাওয়ার পরে সন্তানদের মানুষ করতে পিছপা হয়নি নীল মণি। রোদ-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে দিনমজুরের কাজ করে শিক্ষিত করে তুলেছেন তাদের। অভাবের কারণে একাধিক বার বড় ছেলের লেখাপড়া বিঘœ ঘটে। এরপরও বিএ পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে আর পরীক্ষা দেওয়া হয়নি। মায়ের পাশে তাকে দাঁড়াতে হয়েছে। বর্তমানে ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। ছোট ছেলে ইলিয়াস মুর্মূ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গত ২০২০ সালে পালি অ্যান্ড বুদ্ধিস্ট স্টাডিজ বিভাগ থেকে অনার্স ও মাস্টার্স করেছেন। সে বর্তমানে ঢাকায় থেকে চাকরির চেষ্টা করছেন। এরই মধ্যে মায়ের ইচ্ছাতে এক বছর পূর্বে বিয়ে করেছেন। তার স্ত্রী ফুলবাড়ী সরকারি কলেজে স্নাতকে অধ্যয়নরত। তার একমাত্র মেয়ে রোজিনা মুর্মূ ফুলবাড়ী সরকারি কলেজে অনার্সে অধ্যয়নরত অবস্থায় গত ২০১৯ সালে মারা গেছে। ছেলেরা থাকেন ঢাকায়, একা হয়ে গেছেন নীল মণি। নিজের একাকিত্ব ঘোঁচাতে অভাবের সংগ্রামী জীবনে দেবরের মেয়ে প্রিয়াং মুর্মূকে দত্তক নিয়ে পড়াশোনা করাচ্ছেন। প্রিয়াংকা চলতি বছর এসএসসি পরীক্ষা দিবে।
নীল মণি সরেন বলেন, স্বামী মারা যাওয়ার পর পুরো সংসারের দায়িত্ব  পড়ে তার কাঁধে। ঘরে ৩ সন্তান। নেই কোনো জমি। নিজের বলতে স্বামীর রেখে যাওয়া ৫ শতাংশ বাড়ীর জমি।
ওই জমিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষিত আশ্রয়ণ  প্রকল্পের জমি আছে বাড়ি নাই  ওই প্রকল্পের অর্থানে ফুলবাড়ী উপজেলা পরিষদ থেকে তাকে সরকারী ভাবে দুটি ঘর করে দিয়েছেন। সেখানে নীলমণি  বসবাস করেন। স্বামী মারা যাওয়ার পর ৪০ টাকা মজুরীতে কাজ শুরু করেন। পরবর্তীকালে অন্যের   জমিতে দিনমজুরি করে প্রতিদিন ৩০০ টাকা মজুরি পান।  তা দিয়েই কষ্ট করে সন্তানদের লেখাপড়া খরচসহ সংসার চালান। তিনি  বলেন, এমন হয়েছে অনেক সময়  সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ চালাতে গিয়ে না খেয়ে থাকতে হয়েছে। তবু সন্তানদের লেখাপড়া বন্ধ করতে দেননি। তিনি বলেন  ‘আমার কষ্ট হয় হোক, আমার সন্তানদের যেন কষ্ট না হয়। তাদের কষ্ট করে লেখাপড়া শিখিয়েছি, যাতে তারা লেখাপড়া শিখে মানুষের মতো মানুষ হয়ে চাকরি করে সুখী জীবন যাপন করবে এটা তার প্রত্যাশা ।
গত ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস ছিল, এ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি একজন মূর্খ মানুষ, ওই সব কিছু জানি না। কাজ করি সংসার ও সন্তানদের সঙ্গে ভালো বিষয়  নিয়ে চিন্তা করি।
ফুলবাড়ী উপজেলার চকমথুরা (সিএম) নিকেতনের প্রধান শিক্ষক আসাদুজ্জামান কনক বলেন, জীবন মুর্মূ, ইলিয়াছ মুর্মূ ও রোজিনা মুর্মূ আমাদের স্কুল থেকে এসএসসি পাস করেছে। তারা লেখাপড়ায় অত্যন্ত আগ্রহী ছিল।  তার মা নীলমণি  দিনমজুরের কাজ করে সন্তানদের লেখাপড়া শিখিয়েছেন।  সমাজে এটি একটি বাস্তবমুখী  দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে এ সংগ্রামী  নৃ ক্ষুদ্র গোষ্ঠীর নারী। (বাসস)