দিন বদলের অপেক্ষায় ঢাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা

যানজটে  রাজধানীর লাখো মানুষের অবস্থা একেবারেই নাজেহাল। বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনেও বলা হয়েছে, ঢাকায় মোটরযানের গড় গতি ঘণ্টায় সাত কিলোমিটার।  অবস্থার পরিবর্তন না হলে কয়েক দিন পর হেঁটেই গাড়ির আগে গন্তব্যে যেতে পারবে মানুষ। আর যানজটের কারণে বার্ষিক ক্ষতি ৩০ হাজার কোটি টাকা, যা দিয়ে বছরে একটি করে ‘পদ্মা সেতু’ করা যায় (চলমান পদ্মা সেতু প্রকল্পের মোট ব্যায় ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা)। তবে বিশ্বব্যাংকের ওই প্রতিবেদনের সঙ্গে বাস্তবতার বড় একটা মিল খুঁজে পান না যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা। সরকারের নানা উদ্যোগে  বদলে যাচ্ছে ঢাকার এই চিত্র।

তাদের মতে, রাজধানীর সবচেয়ে বড় সমস্যা যানজট নিরসনের লক্ষ্যে একের পর এক তৈরি হচ্ছে ফ্লাইওভার বা উড়াল সেতু। এতে বদলে যাচ্ছে ঢাকা মহানগরের যোগাযোগ অবকাঠামো।

যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন , রাজধানীর যানজটে বছরে পুড়ছে ১২ হাজার কোটি টাকার জ্বালানি। কর্মঘণ্টাও নষ্ট হচ্ছে। এ অবস্থায় যোগাযোগ অবকাঠামোর ওপর নজর দিয়ে সরকার যে পরিবর্তন এনেছে তার সুফল ভোগ করতে শুরু করেছে নগরবাসী। তবে যানজট নিরসনের জন্য একই সঙ্গে অবিরাম ও সবিরাম যানচলাচল নিশ্চিত করার ব্যবস্থা করতে হবে। গত সাত বছরে মহানগরের বিভিন্ন স্থানে বেশ কয়েকটি উড়াল সেতু ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বা উড়াল সড়ক নির্মাণের প্রকল্প নেওয়া হয়। এরইমধ্যে চালু হয়েছে মেয়র হানিফ উড়াল সড়ক, কুড়িল উড়াল সড়ক, বনানী উড়াল সড়ক ও জিল্লুর রহমান উড়াল সড়ক। হয়েছে হাতিরঝিল সমন্বিত প্রকল্প।  অক্টোবরের ২৬ তারিখে উদ্বোধন করা হলো মালিবাগ-মৌচাক উড়াল সড়ক। শান্তিনগর থেকে ঝিলমিল পর্যন্ত নির্মাণ করা হবে আরেকটি উড়াল সড়ক।

ঢাকার সঙ্গে পূর্বাচল নতুন শহরের সংযোগ স্থাপন, বিমানবন্দর সড়ক ও প্রগতি সরণি সংযোগ পয়েন্টে যানজট কমানো, নগরীর উত্তর-পশ্চিম বরাবর যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটাতে নির্মাণ করা হয়েছে কুড়িল উড়াল সড়ক। যাত্রাবাড়ী থেকে গুলিস্তান অংশে মেয়র হানিফ উড়াল সেতু দিয়ে চলাচল দ্রুত হয়েছে।

এদিকে উন্নয়নে বদলে যাচ্ছে ঢাকার গুলশান-বনানী এলাকাও। প্রশস্ত ও দৃষ্টিনন্দন করে গড়ে তোলা হয়েছে সড়ক ও ফুটপাত। আকর্ষণীয় ফুলগাছে সজ্জিত বিভাজকের দুই পাশে পরিচ্ছন্ন সড়ক। পাশে ঝলমলে বহুতল ভবন। সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে আবাসিক এলাকার বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান।

ডিএনসিসি সংশ্লিষ্টরা জানান, ১৯৯ কোটি ৯৭ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয় আড়াই বছর আগে। ইতোমধ্যে এ প্রকল্পের আওতায় গুলশান-বনানী এলাকার রাস্তা, ফুটপাত, মিডিয়ানের সিংহভাগ কাজ শেষ হয়েছে। এ ছাড়া উন্মুক্ত ড্রেন ও পাইপ ড্রেনের কাজও শেষ হয়েছে। আর এর মাধ্যমে ধীরে ধীরে বদলে যাচ্ছে অভিজাত এ আবাসিক এলাকা। এ ছাড়া অন্য প্রকল্পের আওতায় এ এলাকায় আরো প্রায় ১০০ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ করা হয়েছে। নতুন অর্থবছরে আরো কয়েকটি প্রকল্প গ্রহণ করা হবে। ধাপে ধাপে গৃহীত প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হলে সত্যিকারের আদর্শ ওয়ার্ডে রূপান্তরিত হবে ডিএনসিসির ১৯ নম্বর ওয়ার্ড।

ডিএনসিসি ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. মফিজুর রহমান বলেন, আড়াই বছরে এ ওয়ার্ডে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ করা হয়েছে। এতে সড়ক, ড্রেনেজ, ফুটপাত, সড়কবাতিসহ অন্যান্য নাগরিক সুবিধার প্রায় ৭০ ভাগ সমাধান হয়ে গেছে। চলতি বছরের মধ্যে বিদ্যমান অন্য সমস্যার সমাধান হবে।

বাংলাদেশ সেতু বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর বিমানবন্দর থেকে আশুলিয়া পর্যন্ত অংশে নির্মাণ করা হবে দ্বিতীয় ঢাকা উড়াল সড়ক। এই প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই শেষ হয়েছে। এটি নির্মাণ করা হবে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের (পিপিপি) মাধ্যমে। প্রকল্পের অধীনে সড়কের দৈর্ঘ্য হবে ৩৪ কিলোমিটার। রাজধানীর শান্তিনগর থেকে মাওয়া পর্যন্ত যে নতুন উড়াল সেতু নির্মাণ করা হবে সেটি হবে ১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ।

সব প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হওয়ার পর কাজ শুরুর অপেক্ষায় রয়েছে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম রোডের কুতুবপুর পর্যন্ত ২৬ কিলোমিটার উড়াল সড়ক (এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়ে) নির্মাণের কাজ। সেতু বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পটির ভৌত নির্মাণকাজে ব্যয় হবে ৮ হাজার ৭০৩ কোটি টাকা। ব্যয়ের ৭৪ ভাগ বহন করবে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান ইটাল-থাই। তাদের ব্যয় দাঁড়াবে ৬ হাজার ৪৪৪ কোটি টাকা। অন্যদিকে সরকারের ব্যয় হবে ২ হাজার ২৫৮ কোটি টাকা। জমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসন ব্যয় বহন করবে সরকার। এ জন্য ২ হাজার ২০০ কোটি টাকার পৃথক প্রকল্প পরিকল্পনা কমিশনে জমা দেওয়া হয়েছে।

আজকের বাজার:ডিএইচ/এলকে ১৬ নভেম্বর ২০১