দ্বিতীয় দিনেই চালকের আসনে শ্রীলংকা

বাংলাদেশের বিপক্ষে ঢাকা টেস্টের দ্বিতীয় দিন শেষেই চালকের আসনে বসেছে সফরকারী শ্রীলংকা। ২ উইকেট হাতে নিয়ে ৩১২ রানে এগিয়ে আছে লংকানরা। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশকে ১১০ রানে গুটিয়ে দিয়ে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে দিন শেষে ৮ উইকেটে ২০০ রান করেছে লংকানরা। প্রথম ইনিংসে সফরকারীদের সংগ্রহ ছিল ২২২ রান।

মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে প্রথম দিনই শ্রীলংকাকে গুটিয়ে দিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিলো বাংলাদেশ। কিন্তু দিন শেষে সেই স্বস্তি, অস্বস্তিতে রূপ নেয়। কারণ লংকানদের ২২২ রানের জবাবে ৪ উইকেটে ৫৬ রান তুলে দিন শেষ করেছিল বাংলাদেশ। তামিম ইকবাল ৪, ইমরুল কায়েস ১৯, মোমিনুল হক ০ ও মুশফিুর রহিম ১ রান করে ফিরেন। নাইটওয়াচম্যান মেহেদি হাসান মিরাজকে নিয়ে প্রথম দিন শেষ করেন লিটন দাস। লিটন ২৪ ও মিরাজ ৫ রান নিয়ে অপরাজিত ছিলেন।

নিজের ইনিংসটা দ্বিতীয় দিন বড় করতে পারেননি লিটন। মাত্র ১ রান যোগ করে ২৫ রানে থামেন তিনি। এরপর ক্রিজে মিরাজের সঙ্গী হন অধিনায়ক মাহমুুদুল্লাহ রিয়াদ। রানের চাকা সচল রেখেছিলেন তারা। তাই বাংলাদেশের স্কোর তিন অংকে পা রাখে। ১০০ রানের কিছুক্ষণ পরই বাংলাদেশ শিবিরে আঘাত অভিষেক ম্যাচ খেলতে নামা আকিলা ধনঞ্জয়া। ২টি চারে ১৭ রান করা মাহমুদুল্লাহকে প্রথম শিকার বানান তিনি।

দলীয় ১০৭ রানে ষষ্ঠ ব্যাটসম্যান হিসেবে মাহমুদুল্লাহর বিদায়ের পর শেষ চার উইকেটে আর মাত্র ৩ রান যোগ করতে পারে বাংলাদেশ। এজন্য মাত্র ২২ বল হাত ঘুড়াতে হয়েছে শ্রীলংকার বোলারদের। সাব্বির রহমান শুন্য ও আব্দুর রাজ্জাক ১ রান করে ধনঞ্জয়ার শিকার হন। ১ রান করে তাইজুল ইসলাম ফিরলেও শেষ ব্যাটসম্যান মুস্তাফিজুর রহমান রানের খাতা খোলার আগেই শ্রীলংকার অফ-স্পিনার দিলরুয়ান পেরেরার বলে আউট হন। তবে অন্য প্রান্তে সতীর্থ যাওয়া আসা দেখেছেন মিরাজ। তখন নামের পাশে ছিলো ৩৮ রান।

শ্রীলংকার পক্ষে লাকমল-ধনঞ্জয়া ৩টি করে এবং পেরেরা ২টি উইকেট নেন।

মধ্যাহ্ন-বিরতির কিছুক্ষণ আগে বাংলাদেশকে গুটিয়ে দিয়ে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নামে শ্রীলংকা। বিনা উইকেটে ৯ রান নিয়ে মধ্যাহ্ন-বিরতিতে যায় লংকানরা।

মধ্যাহ্ন-বিরতির পরই বাংলাদেশকে প্রথম সাফল্য এনে দেন চার বছর টেস্ট খেলতে নামা বাঁ-হাতি স্পিনার আব্দুর রাজ্জাক। প্রথম ইনিংসে ৪ উইকেট নেওয়া রাজ্জাক দ্বিতীয় ইনিংসে কুশল মেন্ডিসকে ৭ রানে থামিয়ে দেন। প্রথম ইনিংসে রাজ্জাকের শিকার হবার আগে ৬৮ রান করেছিলেন মেন্ডিস।

এরপর দ্বিতীয় সাফল্যের জন্য বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে হয় বাংলাদেশকে। দলীয় ১৯ রানে প্রথম উইকেট শিকারের পর ৫৩ রানে শ্রীলংকার দ্বিতীয় উইকেট তুলে নেয় বাংলাদেশ। ২৮ রানে থাকা ধনঞ্জয়া ডি সিলভাকে শিকার করেন আরেক বাঁ-হাতি তাইজুল ইসলাম। ফলে কিছুটা চাপে পড়ে যায় শ্রীলংকা।

শ্রীলংকার সেই চাপ আরও বাড়ে ১২ রানের ব্যবধানে দুই উইকেট হারানোয়। দানুস্কা গুনাথিলাকাকে ১৭ রানে মুস্তাফিজুর রহমান এবং ওপেনার দিমুথ করুনারত্নকে ৩২ রানে শিকার করেন মিরাজ। এরপর রোশেন সিলভাকে নিয়ে শ্রীলংকাকে চাপমক্ত করার চেষ্টা করেন অধিনায়ক দিনেশ চান্ডিমাল। সফলই হয়েছেন তারা। পঞ্চম উইকেটে ৫১ রানের জুটি গড়েন তারা।

এই জুটি আরও বড় হবার আগেই বিচ্ছিন্ন করেন মিরাজ। ৫৪ বলে ৩০ রান করা চান্ডিমালকে নিজের দ্বিতীয় শিকার বানান মিরাজ। চান্ডিমালের বিদায়ে উইকেটে গিয়ে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি উইকেটরক্ষক নিরোশান ডিকবেলা। তাইজুলের শিকার হয়ে ১০ রানে থেমে যান তিনি। এই শিকারের মাধ্যমে দেশের মাটিতে নিজের ৫০ উইকেট পূর্ণ করেন তাইজুল।

এরপর শেষ বিকেলে শ্রীলংকার লেজ কেটে ফেলার পথ তৈরি করে ফেলেন বাংলাদেশের কাটার মাস্টার মুস্তাফিজুর রহমান। নিজের দশম ওভারের দ্বিতীয় ও তৃতীয় বলে শ্রীলংকার দিলরুয়ান পেরেরা ও আকিলা ধনঞ্জয়াকে বিদায় দেন ফিজ। পেরেরা ৭ ও ধনঞ্জয়া শুন্য রানে আউট হন। ফলে হ্যাট্টিকের সম্ভাবনা তৈরি হয় মুস্তাফিজুরের সামনে। কিন্তু পরের ডেলিভারিটি লেগ-স্টাম্পের বেশ বাইরে দিয়ে যাওয়ায় হ্যাট্টিকের সুযোগ হাতছাড়া করেন ফিজ। তবে পঞ্চম ডেলিভারিতে স্লিপে থাকা সাব্বির রহমানের ক্যাচ মিসে আরও এক উইকেট শিকার থেকে বঞ্চিত হন ফিজ। তাই জীবন পেয়ে দিন শেষে ৭ রানে অপরাজিত থাকেন সুরাঙ্গা লাকমল। তার সঙ্গী রোশেনের সংগ্রহ ৫৮ রান।

বাংলাদেশের মুস্তাফিজুর ৩টি, তাইজুল-মিরাজ ২টি করে এবং রাজ্জাক ১টি উইকেট নেন।