ধর্ষণবিরোধী প্রতিবাদ: শেকল ভাঙার অঙ্গীকারে মধ্যরাতে রাজপথে নারীরা

ধর্ষণ ও সহিংসতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে কয়েকশ নারী মঙ্গলবার মধ্যরাতে ঢাকায় একটি মশাল মিছিল এবং সমাবেশ করেছেন।

সারা দেশে ধর্ষণ বন্ধে এবং অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে তারা প্রতিবাদ সমাবেশে ১২ দফা দাবি তুলে ধরেন।

বিক্ষোভকারীরা ধর্ষণবিরোধী ফেস্টুন এবং প্ল্যাকার্ড নিয়ে ‘শেকল ভাঙার পদযাত্রা’ ব্যানারে মশাল নিয়ে এই কর্মসূচি শুরু করেন । রাত ১১টা ৫৯ মিনিটে শাহবাগ থেকে এই পদযাত্রা শুরু হয় যাতে সর্বস্তরের নারীরা অংশ নেন।

এ সময় বেশ কয়েকজন পুরুষকেও প্রতিবাদে অংশ নিতে দেখা গেছে।

তারা সারাদেশে ধর্ষণের নিন্দা জানিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দেন।

১২-দফা দাবি

বিক্ষোভকারীদের প্রথম দাবি হলো, সারাদেশে অব্যাহত ধর্ষণ-যৌন সহিংসতার সাথে জড়িতদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে দৃষ্টান্তমূলক ও ন্যায্য শাস্তি নিশ্চিত করা।

তারা ধর্ষণ মামলার ক্ষেত্রে সাক্ষ্য আইন-১৮৭২ এর ১৫৫(৪) ধারা বিলোপ করে এই মামলার ডিএনএ আইনকে সাক্ষ্য প্রমাণের ক্ষেত্রে কার্যকর করার দাবি জানান।

তাদের অন্যান্য দাবির মধ্যে রয়েছে নারী ও শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, ক্ষতিগ্রস্তদের হয়রানির সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ, প্রাথমিক পর্যায়ে যৌন শিক্ষার প্রবর্তন করে শিক্ষাব্যবস্থায় প্রয়োজনীয় সংস্কার আনা এবং গ্রামীণ নারীদের যৌন সহিংসতা বন্ধে সহায়তা করার জন্য একটি হটলাইন ব্যবস্থা চালু করা।

এছাড়াও নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক আইন বাতিল করা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নারী নির্যাতন প্রতিরোধ কেন্দ্র গঠন এবং তা কার্যকর করে তোলা, ধর্মীয় বক্তব্যের অজুহাতে অনলাইনে বা অফলাইনে নারীদের বিরুদ্ধে আপত্তিকর মন্তব্যের অবসান এবং দ্রুত ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে ৯০দিনের মধ্যে শিশু ধর্ষণের মামলার বিচার কাজ শেষ করার দাবি জানান তারা।

সম্প্রতি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে গৃহবধূর শ্লীলতাহানির ঘটনার ভিডিও চিত্র ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার পর ধর্ষণবিরোধী বিক্ষোভে সারাদেশ উত্তাল হয়ে ওঠে। গত ২ সেপ্টেম্বর উপজেলার একলাশপুর ইউনিয়নের জয়কৃষ্ণপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

এছাড়া গত ২৫ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় স্বামীর সাথে বেড়াতে গিয়ে এমসি কলেজে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন এক তরুণী।

স্থানীয় মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্য অনুযায়ী, এ বছরের প্রথম ৯ মাসে প্রায় এক হাজার ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে, যার মধ্যে ২০০টিরও বেশি সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা রয়েছে।

এদিকে, ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে সংশোধিত ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০’ অধ্যাদেশ আকারে জারি করা হয়েছে।

মঙ্গলবার রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০০০’ জারি করেন।