নতুন সংসদের জন্য নেপালি জনগণ ভোট দিচ্ছে আজ

বয়স্ক রাজনৈতিক অভিজাতদের প্রতি জনসাধারণের হতাশা এবং দেশটির বিধ্বস্ত অর্থনৈতিক পরিস্থিতির প্রতি উদ্বেগের মধ্যে দিয়ে একটি নতুন সংসদের জন্য নির্বাচনী লড়াইয়ে নেপালি ভোটাররা রোববার ভোট দিতে শুরু করেছে।
ক্ষমতার সুবিধা ভোগীদের বেশিরভাগই যারা এক বছরেরও কম সময় দায়িত্বপালনের সুযোগ পেয়েছেন, এমন প্রধানমন্ত্রীদের বারবার সুবিধা নেয়ার প্রবণতা এবং নির্বাচনী বেচাকেনার সংস্কৃতির কারণে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে যে নেপালের সংকট সমাধানের বিষয়টি উপেক্ষিতই থেকে যাচ্ছে।
বেশ কিছু তরুণ মুখ প্রথমবারের মতো নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, প্রতিষ্ঠিত দলগুলোর বিরুদ্ধে যাদেও নেতারা কয়েক দশক ধরে ক্ষমতার করিডোরে হেঁটেছেন।
যদিও বিশ্লেষকরা আশা করেন যে দেশের প্রবীণ রাজনীতিবিদরা আবার পরবর্তী বিধানসভায় আধিপত্য বিস্তার করবে, অনেক ভোটার স্থিতাবস্থায় বিশ্বাস হারিয়েছে এবং তাদের পরিবর্তনের আভাস স্পষ্ট।
অর্থনীতি ও বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত চিরঞ্জীব দাওয়াদি এই সপ্তাহে এএফপিকে বলেছেন, ‘প্রতিটি দল গত পাঁচ বছরের পালায় সরকারে থেকেছে এবং তারা কিছুই করেনি।’
তিনি বলেন, ‘আমার পরিবার এবার একটি নতুন দলকে ভোট দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, পুরানো দলগুলো কিছুই করেনি।’
নেপালে রক্তক্ষয়ী মাওবাদী বিদ্রোহের সমাপ্তির পর একটি নতুন রাজনৈতিক শৃঙ্খলার সূচনা করে ২০১৫ সালে একটি নতুন সংবিধান জারি হওয়ার পর আজ দ্বিতীয়বারের মতো নির্বাচন হচ্ছে।
গৃহযুদ্ধ ২০০৬ সালে শেষ হয়েছিল, এতে ১৭,০০০-এরও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে বলে দাবি করা হয় এবং এতে দেশের রাজতন্ত্রের বিলুপ্তি ঘটে, পাশাপাশি প্রাক্তন বিদ্রোহীদের সরকারি কার্যক্রমে যুক্ত করা হয়।
সেই থেকে প্রাক্তন গেরিলারা অন্যান্য কমিউনিস্ট পার্টি এবং প্রতিষ্ঠিত কংগ্রেসের সাথে বিভিন্ন জোটে ক্ষমতায় এসেছে।
কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা নেপালের সংসদের একটি পুনরাবৃত্তির বৈশিষ্ট্য হয়েছে এবং যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর থেকে কোনো প্রধানমন্ত্রী পূর্ণ মেয়াদে দায়িত্ব পালন করেননি।
নেপালের দুই প্রতিবেশী চীন ও ভারতের মধ্যে ঐতিহ্যগত প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে সমন্বয় করার জন্য বিভিন্ন ভাবে সরকারকে ভারসাম্যমূলক আইন তৈরিতে সংগ্রাম করতে হচ্ছে। অন্যদিকে দেশটিতে  চীনা অর্থায়নে মেগা-প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়ে পশ্চিমা উদ্বেগ বাড়ছে।
বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শের বাহাদুর দেউবা (৭৬) পঞ্চমবারের মতো দায়িত্ব পালন করছেন। দলের অন্য দুই প্রধান নেতার বয়স ৭০ এবং ৬৭, এবং দুজনেই দুইবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
এই তিনজনের প্রতি জনগণের অসন্তোষ এখনও তীব্র রয়েছে, মহামারী থেকে শুরু করে অর্থনীতি  মন্দার মধ্যে রয়েছে, যা অত্যাবশ্যক পর্যটন শিল্পকে ধ্বংস করেছে এবং বিদেশে কর্মরত বিপুল সংখ্যক নেপালির রেমিট্যান্স সরবরাহ কমে গেছে।
মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং সরকার তার ক্রমহ্রাসমান বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ানোর জন্য বিদেশী মদ এবং টেলিভিশন সেটসহ বেশ কিছু পণ্যের আমদানি নিষিদ্ধ করেছে।
বেশ কয়েকজন তরুণ প্রার্থী এই বছর ভোটের লড়াইয়ে নেমেছেন। তাদের মধ্যে এগিয়ে রয়েছেন ক্যারিশম্যাটিক প্রাক্তন টেলিভিশন উপস্থাপক, সাংবাদিক রবি লামিছনে (৪৮)।
তিনি সরকারি কর্মকর্তা এবং দুর্নীতিবাজ আমলাদের উপর গোপন ক্যামেরার স্টিং চালিয়েছেন, স্থানীয় দুর্নীতি নিয়ে জনসাধারণের হতাশা তুলে ধরেছেন।
তবে বিশ্লেষকরা বলেছেন, নেপালের সংসদীয় ব্যবস্থার প্রকৃতির অর্থ হল রোববারের ভোটের ফলে সম্ভবত বিশিষ্ট দলগুলোর আধিপত্যপূর্ণ সংসদ হবে।