পদ ৯০ হাজার, আবেদন আড়াই কোটি

ভারতে রেলওয়ের ৯০ হাজার খালি পদের বিপরীতে আবেদন পড়েছে আড়াই কোটিরও বেশি। এই সংখ্যা অস্ট্রেলিয়ার জনসংখ্যার চেয়েও বেশি। এ খবর দিয়েছে আল জাজিরা। খবরে বলা হয়, ২০১৯ সালের নির্বাচনকে সামনে রেখে ১০ কোটি চাকরি সংস্থানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। কিন্তু এই লক্ষ্য অর্জন কতটা চ্যালেঞ্জিং সেটাই যেন বিজ্ঞপ্তিতে সাড়া দেওয়া মানুষের সংখ্যাতে ফুটে উঠলো।

২০১৪ সালে এশিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির এই দেশটির ক্ষমতায় আসেন মোদি। তার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল দেশের প্রবৃদ্ধির গতি বাড়ানো ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। দেশের ২ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতিতে উৎপাদন খাতের অবদান ১৭ শতাংশ থেকে ২৫ শতাংশে উন্নীত করা ও ২০২২ সাল নাগাদ ১০ কোটি কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে তিনি নিয়েছিলেন ‘মেইক ইন ইন্ডিয়া’ উদ্যোগ। কিন্তু ওই উদ্যোগকে এখন পর্যন্ত ব্যর্থই বলা চলে।

বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম রেল নেটওয়ার্ক পরিচালনার দায়িত্বে থাকা ভারতের রেলওয়েতে চাকরি করে ১৩ লাখ মানুষ। সংস্থাটি সম্প্রতি ইঞ্জিন চালক, টেকনেশিয়ান, কার্পেন্টার, রেলপথ পরিদর্শক কর্মীসহ নানা পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে।

রেলওয়ে বোর্ডের চেয়ারম্যান অশ্বনি লোহানি বলেন, গত কয়েক বছর ধরে আমরা কাউকে নিয়োগ করিনি। তাই এখন আমাদের লোকবল প্রয়োজন।

জানা গেছে, গত মাসে এই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে রেলওয়ে নিয়োগ অধিদপ্তর। এরপর থেকে অনলাইনের মাধ্যমে দেশজুড়ে আড়াই কোটি আবেদন জমা পড়েছে। শনিবার আবেদন করার শেষ তারিখ।

৪ বছর আগে মোদি ক্ষমতায় আসার পর থেকে এত বিপুল পরিমাণ লোক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেনি কোনো সরকারী প্রতিষ্ঠান। কিন্তু আবেদনের হিড়িক দেখে বোঝা যায়, এটিও যথেষ্ট নয়। ভারতে প্রতি মাসে প্রায় ১ লাখ যুবক প্রবেশ করছে শ্রমবাজারে। এই বিপুল পরিমাণ মানুষের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে সরকার যে হিমশিম খাচ্ছে, তা বলাই বাহুল্য।

ভারতের একটি অর্থনীতি বিষয়ক থিংক-ট্যাং সিএমআইই’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মহেশ ভ্যাস বলেন, এই বিপুল সংখ্যাক আবেদন থেকে বোঝা যায় চাপের মাত্রা কতখানি। এ থেকে বোঝা যায়, দেশে কর্মসংস্থানের সংকট চলছে। আরেকটি বিষয় হলো, এটি ইঙ্গিত দেয়, সরকারী চাকরি ভারতীয়রা কতটা পছন্দ করে। এই প্রবণতা আমাদের পরিহার করা প্রয়োজন।

ভারতে এককভাবে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষ চাকরি করে রেলওয়েতে। রেলওয়ের আধুনিকায়নের জন্য ১৩০০০ কোটি ডলারের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। চাকরির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ১৫টি ভাষায় লিখিত পরীক্ষা দিতে পারবেন আবেদনকারীরা। এছাড়া শারীরিক সক্ষমতা পরীক্ষা সহ পুরুষ ও নারী প্রার্থীদের জন্য নানাবিধ মানদণ্ডের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

লোহানি বলেন, আড়াই কোটি আবেদনকারীর মধ্য থেকে উপযুক্ত প্রার্থী বাছাই করা কঠিন কাজ। তবে রেলওয়ে তা পারবে। এছাড়া উন্মুক্ত বিজ্ঞপ্তি ব্যতিত নিয়োগের কোনো নিয়মও নেই। থিংক-ট্যাংক সিএমআইই বলছে, ফেব্রুয়ারিতে ভারতের বেকারত্বের হার ছিল ৬.১ শতাংশ, যা ১৫ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ।

যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল গ্রোথ সেন্টারের কান্ট্রি ডিরেক্টর প্রণব সেন মনে করেন, নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পরও নতুন কর্মীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করাও রেলওয়ের জন্য চ্যালেঞ্জিং হবে। তার ভাষ্য, এক ধাপে ৯০ হাজার মানুষকে নিলেও, এত লোককে একসঙ্গে প্রশিক্ষণ দেওয়ার সুবিধা নেই।

এস/