পশ্চিম এশিয়ায় আট ট্রিলিয়ন ডলার ব্যয় করেও আমেরিকার অর্জন শূন্য

২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর সন্ত্রাসী হামলার পর আমেরিকা সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলার অজুহাতে পশ্চিম এশিয়ায় ব্যাপক সেনা সমাবেশ ঘটায়। প্রথমে তারা আফগানিস্তান এবং এরপর ২০০৩ সালে ইরাক দখল করে। এ অজুহাতে তারা এ অঞ্চলে হাজার হাজার সেনা মোতায়েন করা ছাড়াও এ পর্যন্ত বিপুল অর্থ ব্যয় করেছে। এরপর আমেরিকা একই অজুহাতে পশ্চিম এশিয়ার আরো দেশ বিশেষ করে সিরিয়া দখলের দিকে মনোনিবেশ করে।

গত দুই দশক ধরে আমেরিকা পশ্চিম এশিয়ায় ব্যাপক সামরিক তৎপরতা চালালেও আজ পর্যন্ত কোনো সাফল্যই তারা অর্জন করতে পারেনি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচনী প্রচারকালে এবং ক্ষমতায় আসার পরও বহুবার পশ্চিম এশিয়ার ব্যাপারে মার্কিন নীতির সমালোচনা করেছেন এবং এও বলেছেন, এ অবস্থা বেশিদিন অব্যাহত রাখা সম্ভব নয়।

সর্বশেষ মন্তব্যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পশ্চিম এশিয়ায় আট ট্রিলিয়ন ডলার ব্যয়ের কথা উল্লেখ করে দাবি করেছেন, যেহেতু ওয়াশিংটন তার আরব মিত্রদেরকে নিরাপত্তা দিচ্ছে সে কারণে তাদেরকেই এ ব্যয় বহন করতে হবে। এর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট করোনা সংক্রান্ত এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, আমরা পশ্চিম এশিয়ায় আট ট্রিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছি এটা আমাদের বোকামির পরিচয়।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প হয়তো এটা ভুলে গেছেন যে, সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাবলু বুশ সন্ত্রাসবাদ দমনের অজুহাতে আফগানিস্তান ও ইরাকে যুদ্ধ শুরু করেছিলেন এবং এ যুদ্ধের ফলে ওই দুই দেশের লাখ লাখ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে এবং বহু অর্থনৈতিক অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে গেছে। একইসঙ্গে এ অঞ্চলে মার্কিন সেনা সমাবেশের ফলে আইএসের মতো সন্ত্রাসবাদেরও ভয়াবহ বিস্তার ঘটেছে যার ফলে ইরাক ও সিরিয়ায় বহু সাধারণ মানুষ নিহত হয়েছে সন্ত্রাসীদের হাতে।

কিছুদিন আগেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পশ্চিম এশিয়ার ব্যাপারে সাবেক সরকারগুলোর নীতির সমালোচনা করে বলেছেন ওই ভ্রান্ত নীতির কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক সংকটে আমেরিকার বহু শিল্প কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। গত বছর অক্টোবরে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করেছেন, পশ্চিম এশিয়ায় আমেরিকার উপস্থিতি অনেক বড় ভুল ছিল। তিনি বলেন, ‘আমরা ইরাক যুদ্ধে চার ট্রিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছি। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি পশ্চিম এশিয়ায় আগমন আমাদের বড় ভুল ছিল। আমরা এ পর্যন্ত আট ট্রিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছি এবং আমাদের হাজার হাজার সেনা নিহত হয়েছে।’

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এসব বক্তব্য থেকে বোঝা যায়, তিনি এ অঞ্চলে তার মিত্রদেরকে অপব্যবহার করছেন। এ কারণে তিনি বলেছেন, বিনামূল্যে কারো কাঁধে সওয়ার হওয়ার দিন শেষ হয়ে গেছে এবং নিরাপত্তা চাইলে তাদেরকেই এর ব্যয়ভারবহন করতে হবে। তবে আমেরিকার কাছে সৌদি আরবের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও গত আগস্টে বলেছেন, তারা সৌদি আরবে সামরিক উপস্থিতি বাড়াবে যাতে এ দেশগুলোকে নিরাপত্তা দেয়া যায়।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, আমেরিকা আসলে নানা অজুহাতে সৌদি আরবের কাছ থেকে তেল বেচা ডলার হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে। এ কাজে তারা ইরানভীতি ছড়ানোর চেষ্টা করছে।
সূত্র:পার্সটুডে