পাকিস্তানে বিমান হামলায় ২০০ থেকে ৩০০ জঙ্গি নিহত: ভারত

পুলওয়ামায় আত্মঘাতী জঙ্গি হামলার জবাব দিয়েছে ভারত। মঙ্গলবার ভোররাতে নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে জইশ-ই-মহম্মদের সবচেয়ে বড় জঙ্গি প্রশিক্ষণ শিবির ধ্বংস করে দিয়েছে বলে দাবি ভারতীয় বিমানবাহিনীর। এদিকে ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয় সূত্র জানিয়েছে, এই অভিযানে নিহতের সংখ্যা ২০০ থেকে ৩০০। তার মধ্যে রয়েছে জইশের শীর্ষ কয়েক জন নেতাও। খবর আনন্দবাজার।

মঙ্গলবার ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিজয় কেশব গোখেল সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বলেন, সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা সূত্রের উপর ভিত্তি করে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে হামলা চালানো হয়েছে। যেখানে জইশ কয়েকশো জঙ্গির আত্মঘাতী হামলার প্রশিক্ষণ শিবির তৈরি করেছিল, বালাকোটের ঠিক সেখানেই হানা দেওয়া হয়েছে। এই হানাতে বড় সংখ্যায় জইশ জঙ্গি, তাদের প্রশিক্ষক এবং জইশের প্রথম সারির কমান্ডারদের মেরে ফেলা হয়েছে।

এদিকে ভারতীয় বিমানবাহিনী জানান, পাকিস্তানের গভীরে ঢুকে একাধিক জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংস করেছে তাদের ১২টি মিরাজ-২০০০ যুদ্ধবিমান। তাদের দাবি, নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে পাক অধিকৃত কাশ্মীরের আকাশপথে ঢোকার পর এফ-১৬ যুদ্ধবিমান নিয়ে এগিয়ে আসে পাকিস্তান। তবে সে সময় তাদের জানা ছিল না যে মিরাজ ২০০০-এর মতো শক্তিশালী যুদ্ধবিমান নিয়ে হাজির হয়েছে ভারত। মিরাজের প্রতিরোধ ক্ষমতার কথা মাথায় রেখেই পাকিস্তানি বিমানগুলি ফিরে যায়।

ভারতীয় বিমানবাহিনীর আরও দাবি, বালাকোট, চাকোটি এবং মুজফ্‌ফরাবাদে অভিযান চালিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে জইশ-ই-মহম্মদ, হিজবুল মুজাহিদিন এবং লস্কর-ই-তৈবার যৌথ জঙ্গি প্রশিক্ষণ শিবির। প্রতিটি এলাকাতেই জঙ্গি ঘাঁটি লক্ষ্য করে বোমাবর্ষণ করে ভারতীয় বিমানবাহিনীদের যুদ্ধবিমান।

তবে পররাষ্ট্র সচিব বিজয় কেশব গোখেল জানান, এই হানা কেবল মাত্র জঙ্গি ঘাঁটি লক্ষ্য করে। পাকিস্তানের কোনও সামরিক ঘাঁটি বা আসামরিক জায়গায় হামলা চালানো হয়নি। তিনি বলেন, পাহাড়ের উপরে ঘন জঙ্গলের মধ্যে থাকা জঙ্গি শিবিরে হামলা চালানো হয়েছে।

দেশটির স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, মঙ্গলবার ভোররাতে প্রথমে একটা বিস্ফোরণের আওয়াজ শোনেন তিনি। এর কয়েক সেকেন্ড পরে আরও এক বার বিস্ফোরণ হয়। এর কয়েক সেকেন্ড পর পর ফের একই ধরনের আওয়াজ আসে। তাতে শঙ্কিত হয়ে পড়েন গ্রামবাসীরা। পাকিস্তানের যুদ্ধবিমানও আকাশে দেখা যায়। তবে কিছু ক্ষণ পর ভারতের যুদ্ধবিমানগুলি কোথায় গেল, আর সেগুলির দেখা মেলেনি।

পররাষ্ট্র সচিব বিজয় গোখেল জানিয়েছেন, ওই শিবিরের দায়িত্বে ছিল মৌলানা মাসুদ আজাহারের শ্যালক মৌলানা ইউসুফ আজাহার। বিমানহানায় ওই জইশ নেতার মৃত্যু হয়েছে কি না স্পষ্ট নয়।

এদিকে এই হামলায় পাকিস্তানের বিশেষ কোন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি বলে দাবি করছেন দেশটির সেনাবাহিনীর মুখপাত্র মেজর জেনারেল আসিফ গফুর। তাঁর দাবি, পাকিস্তানের পাল্টা প্রতিরোধের মুখে পড়ে ভারতীয় যুদ্ধবিমানগুলি ফিরে যায়। মুজফ্‌ফরাবাদ থেকে ভারতীয় বিমানগুলি প্রবেশ করে। পরে পাকিস্তানের জবাবে বালাকোটে বোমা ফেলেই চলে যায় ভারতীয় বিমানগুলি। তবে এ হামলায় কোন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।

মঙ্গলবার ওই বিমান হামলার ঘটনার পর সকালেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে এই অভিযানের পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট জমা দিয়েছেন ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর উপদেষ্টা অজিত ডোভাল। এর পর নিজের বাসভবনে ক্যাবিনেট কমিটি অন সিকিউরিটি-র বৈঠক ডাকেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তাতে উপস্থিত ছিলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী নির্মলা সীতারমন, বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ, অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি-সহ আরও অনেকে।

এই অভিযানের খবর প্রকাশ্যে আসার পর ভারতীয় বিমানবাহিনীকে অভিনন্দন জানিয়ে টুইট করেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধী। তিনি লিখেছেন, “ভারতীয় বিমানবাহিনীর পাইলটদের সেলাম জানাই।” অভিনন্দন জানান দেশের একাধিক শীর্ষ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব।

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছেন, “আইএএফ-এর একটা অন্য অর্থও রয়েছে, তা হল ইন্ডিয়াজ অ্যামেজিং ফাইটার্স। জয় হিন্দ।”

অন্য দিকে ভারতের এই অভিযানের যোগ্য জবাব দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে পাকিস্তান। একটি সাংবাদিক সম্মেলন করে পাকিস্তানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ভারত যা করেছে, তা নিয়ন্ত্রণরেখার লঙ্ঘন। পাকিস্তান এর যোগ্য জবাব দেবে বলেও হুমকি দিয়েছেন তিনি।

উল্লেখ্য, ১৪ ফেব্রুয়ারি পুলওয়ামায় সিআরপিএফ গাড়িবহরে আত্মঘাতী হামলায় ৪০ জন জওয়ানের মৃত্যু হয়। এর জবাব দিতেই ভারত এ হামলা চালিয়েছে।

আজকের বাজার/এমএইচ