পিছিয়ে পড়া দেশগুলোর জন্য এসডিজির রূপরেখা চান শেখ হাসিনা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বকে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা(এসডিজি)অর্জনে একটি সাহসী ও উচ্চাভিলাষী বৈশ্বিক রূপরেখা তৈরির প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন, যাতে কোন দেশ পিছিয়ে না থাকে। কারণ মহামারি অনেক দেশকে এসডিজির লক্ষ্যপূরণের যাত্রায় পিছনে ফেলে দিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘এসডিজির লক্ষ্যগুলো অনেক দেশের কাছে অনেক দূরের বলে মনে হচ্ছে। তার ওপর মহামারি তাদের আরও পিছনে ফেলে দিয়েছে। এসডিজি লক্ষ্যে তাদের ফিরিয়ে আনতে আমাদের একটি সাহসী এবং উচ্চাকাঙ্ক্ষী বৈশ্বিক রোডম্যাপ তৈরি করতে হবে।

সোমবার ভার্চুয়ালি টেকসই উন্নয়নের ওপর নবম বার্ষিক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে দেয়া বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। আর্থ ইনস্টিটিউট, কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটি, গ্লোবাল মাস্টার্স অব ডেভেলপমেন্ট প্র্যাকটিস এবং জাতিসংঘ সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট সলিউশন নেটওয়ার্ক এ সম্মেলনের আয়োজন করে।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘কোনো দেশ একা এসডিজি অর্জন করতে পারে না। এই এজেন্ডাকে এগিয়ে নিতে আমাদের বৈশ্বিক সহযোগিতা এবং সংহতি প্রয়োজন।’ সঠিক সময়ের মধ্যে এসডিজি অর্জনের পথে পিছিয়ে থাকা দেশগুলোকে সামনে টেনে আনতে শেখ হাসিনা সম্মেলনে পাঁচটি প্রস্তাব দেন।

প্রস্তাবগুলোর মধ্যে রয়েছে: সবার জন্য সব জায়গায় করোনার টিকা নিশ্চিত করা, ২০৩০ এজেন্ডা বাস্তবায়নে সম্পদের বিশাল ব্যবধান কমিয়ে আনা; বিশেষ করে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, সামাজিক সুরক্ষা ও নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে করোনার অভিঘাত মোকাবিলা করা, জলবায়ু পদক্ষেপের সঙ্গে সংগতি রেখে করোনা থেকে পুনরুদ্ধার কর্মসূচি তৈরি করা এবং এসডিজি বাস্তবায়নের জন্য পর্যবেক্ষণ বৃদ্ধি ও সহায়তা ব্যবস্থার ওপর জোর দেয়া।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতিসংঘের এক্ষেত্রে সমন্বয় বাড়ানো উচিত। জরুরি অবস্থা মোকাবিলা এবং পিছিয়ে পড়ার ধাক্কা এড়াতে পর্যাপ্ত এবং সময়মত সহায়তার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘মহামারি এবং অন্যান্য জরুরি অবস্থা মোকাবিলায় প্রস্তুতি বাড়াতে প্রতিটি স্তরে অগ্রাধিকার দিতে হবে। কারণ মহামারি পুরো বিশ্বকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে, অসংখ্য মানুষের জীবন কেড়ে নিচ্ছে এবং জীবিকার ওপর প্রভাব ফেলছে।’ প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) অর্জনকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে উল্লেখ করে বলেন, এটিকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ‘উন্নয়ন বিস্ময়’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এমডিজির সাফল্যের ওপর নির্ভর করেই আমাদের এসডিজি যাত্রা।’

জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন ও প্রশমন প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ এগিয়ে আছে এবং সম্প্রতি একটি উচ্চাকাঙ্ক্ষী ও হালনাগাদ এনডিসি (ন্যাশনালি ডিটারমাইন্ড কন্ট্রিবিউশনস) জমা দিয়েছে। প্রসঙ্গত, কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশিত সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট রিপোর্ট ২০২১ অনুযায়ী, এসডিজির অধিকাংশ সূচকে বাংলাদেশ অনেক ভালো করছে।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন বিশ্বের দ্রুত বর্ধনশীল পাঁচটি অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে একটি এবং জিডিপির দিক থেকে ৪১ তম স্থানে রয়েছে। জাতিসংঘ এ বছর বাংলাদেশকে এলডিসি(লিস্ট ডেভেলপড কান্ট্রি) ক্যাটাগরি থেকে উন্নীত করতে সুপারিশ করেছে।’ তিনি বলেন, ‘সরকার এসডিজির স্থানীয়করণে অতিরিক্ত মনোযোগ দিয়েছে। এসডিজি ট্র্যাকারও চালু করা হয়েছে।’

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘সরকার অবকাঠামোগত উন্নয়নে ব্যাপক বিনিয়োগ করেছে এবং পদ্মা সেতু, ঢাকা মেট্রো রেল, কর্ণফুলী টানেল এবং রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মতো মেগা প্রকল্প গ্রহণ করেছে। খবর-ইউএনবি

আজকের বাজার/আখনূর রহমান