পিলখানা হত্যা মামলা: মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত ১৫২ জনের আপিলের রায় রোববার

বহুল আলোচিত বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় করা হত্যা মামলায় ১৫২ আসামির ভাগ্য জানা যাবে কাল। আগামীকাল ২৬ নভেম্বর রোববার এইসব আসামিদের মৃত্যুদণ্ডের অনুমোদন (ডেথ রেফারেন্স) ও সাজা বাতিলে আসামিপক্ষের আপিলের রায় কাল ২৬ নভেম্বর ঘোষণার দিন ধার্য রয়েছে।

সুপ্রিমকোর্টের ওয়েবসাইটে দেখা গেছে, মামলাটি রায় ঘোষণার জন্যে আগামীকাল রোববারের আদালতের কার্যতালিকায় রাখা হয়েছে।

উল্লেখ, বিচারপতি মো. শওকত হোসেনের নেতৃত্বে বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী ও বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের একটি বিশেষ বেঞ্চে বিডিআর হত্যা মামলায় বিচার কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

একই আদালতে ডেথ রেফারেন্স ও সাজা বাতিলে আসামিপক্ষের আপিলের রায় ছাড়াও দণ্ডিতদের সাজা বৃদ্ধি এবং আসামীদের খালাসের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আপিলের রায় দেওয়া হবে।

রাজধানীর পিলখানায় বিডিআর সদর দপ্তরে সংগঠিত হত্যাকাণ্ডে আনা মামলায় দায়ের করা সকল ডেথ রেফারেন্স ও ফৌজদারি আপিলের ওপর যুক্তিতর্ক উপস্থাপন গত ১৩ এপ্রিল শেষ হয়। এর আগে বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালের ১৮ জানুয়ারি হাইকোর্টে শুনানি শুরু হয়। রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তিতর্ক পেশ করেন এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

এ বিষয়ে ডেপুটি এটর্নি জেনারেল কে এম জাহিদ সরোয়ার কাজল জানান, মোট ১২৪ কার্যদিবসে মামলায় পেপারবুক উপস্থাপন করা হয়। ৩৭০ কার্যদিবস মামলায় শুনানি হয়।

রাজধানীর পুরান ঢাকার উমেষ দত্ত রোডে আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামান ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর ইতিহাসের কলঙ্কজনক এবং সর্ববৃহৎ এ হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেন।

সেই রায়ে ১৫২ জনকে মৃত্যুদন্ড, ১৬০ জনকে যাবজ্জীবন, ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে (তিন বছর থেকে ১৭ বছর পর্যন্ত) কারাদন্ড এবং ২৭৮ জনকে খালাস এবং আর ৪ জন আসামি বিচার চলাকালে মারা যাওয়ায় মামলার দায় থেকে তারা অব্যাহতি পায়।

রায়ে খালাসপ্রাপ্ত আসামিদের সাজা চেয়ে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। অন্যদিকে দন্ডপ্রাপ্ত আসামিরা তাদের সাজা বাতিল চেয়ে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন। আপিল শুনানির জন্য সুপ্রিমকোর্টের বিশেষ ব্যবস্থায় সর্বমোট ৩৭ হাজার পৃষ্ঠার পেপারবুক প্রস্তুত করা হয়। এজন্য মোট ১২ লাখ ৯৫ হাজার পৃষ্ঠার ৩৫ কপি ও অতিরিক্ত দুই কপি পেপারবুক প্রস্তুত করা হয়।

২০০৯ সালের ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পিলখানায় বিডিআর সদর দপ্তরে বিদ্রোহের ঘটনায় ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন হত্যাকান্ডের শিকার হয়। এ ঘটনায় প্রথমে রাজধানীর লালবাগ থানায় হত্যা এবং বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা হয়। পরে এসব মামলা নিউমার্কেট থানায় স্থানান্তরিত হয়। মামলায় সিআইডি দীর্ঘ তদন্ত শেষে হত্যা মামলায় ২৩ বেসামরিক ব্যক্তিসহ প্রথমে ৮২৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করে। পরে সম্পূরক অভিযোগপত্রে আরও ২৬ জনের নাম অন্তর্ভুক্ত করায় আসামি দাঁড়ায় ৮৫০ জনে।

এছাড়া বিস্ফোরক আইনে করা মামলায় ৮০৮ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয় সিআইডি। পরে আরও ২৬ জনকে অভিযুক্ত করে মোট ৮৩৪ জনের বিরুদ্ধে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেয়া হয়। বিচার চলার সময়ে বিডিআরের ডিএডি রহিমসহ চার আসামির মৃত্যু হয়।

মামলায় আসামীদের মধ্যে বিএনপি নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টু ও স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা তোরাব আলীরও দন্ড হয়েছে। সাজা ভোগকালীন বিএনপি নেতা নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টু অসুস্থ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।

রক্তাক্ত ওই বিদ্রোহের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী এ বাহিনীর নাম পুনর্গঠন করা হয়। নাম বদলের পর এ বাহিনী এখন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) হিসেবে পরিচিত।

আজকের বাজার:এলকে/এলকে ২৫ নভেম্বর ২০১৭