পূর্বাঞ্চলের টার্ন আউট বিকল; রেল যাত্রায় বিলম্ব

রেলের ইঞ্জিনের টার্ন টেবিল বিকল থাকায় বিপাকে পড়েছে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল। বেশ কিছু দিন ধরে ঢাকা স্টেশনের টার্ন বন্ধ থাকায় ১৩২ কিলোমিটার দূরত্বে থাকতে চালকের আসন পরিবর্তন করতে হচ্ছে। রেলের যন্ত্র প্রকৌশল বিভাগকে কয়েক দফা চিঠি দেওয়ার পরও টার্ন টেবিল মেরামত না করায় কন্টেইনার, খাদ্যপণ্য ও জ্বালানিবাহী ট্রেন গন্তব্যে পৌঁছাতে দ্বিগুণ সময় লাগছে।

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, টার্ন আউট বা টার্ন ওভারের মাধ্যমে একমুখী ক্যাপ (চালকের বসার স্থান) যুক্ত ইঞ্জিনকে ঘুরিয়ে নেওয়া হয়। সাধারণত পুরোনো ইঞ্জিনে একমুখী ক্যাপ থাকায় বিভিন্ন বড় স্টেশনে ইঞ্জিন ক্যাপ পরিবর্তন করে চালকের আসন পরিবতন করতে হয়। রেলের ২২০০ ও ২৬০০ সিরিজের ইঞ্জিনগুলো একমুখী ক্যাপের কারণে টার্ন আউটের মাধ্যমে দিক পরিবর্তনের সুযোগ নেয়। মূলত পুরোনো ইঞ্জিনগুলো দিয়ে মালামালবাহী ট্রেন, কনটেইনার ট্রেন এবং খাদ্যশস্য বাহী ট্রেন পরিচালনা করা হয়। এতে গুডস ট্রেনের গন্তব্যে পৌঁছার সময় দ্বিগুণ হয়ে যাচ্ছে। ব্যবসায়ীরা চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ঢাকায় পণ্য নিয়ে যেতে ভোগান্তির মধ্যে পড়ছেন।

রেলওয়ে সংশ্লিষ্টরা জানান, গত ১৬ জুন ৯৯১ আপ ৮ ওয়াগন ফার্নেস অয়েলবাহী (জামালপুর) ট্রেনটি ২০২৩ ইঞ্জিন নিয়ে আখাউড়া পৌঁছালেও ২৪ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। অন্যদিকে এসও-১-আপ, ২-আপ, ৫-আপ কন্টটেইনারবাহী ট্রেনগুলো ১০ থেকে ১৩ ঘণ্টা পর্যন্ত আখাউড়া স্টেশনে ইঞ্জিন জটিলতায় আটকে থাকছে। ফলে প্রতিদিনই অধিকাংশ পণ্যবাহী ট্রেন বিভিন্ন সময়ে আখাউড়াসহ ঢাকা স্টেশনে বিলম্ব করছে শুধু টার্ন আউট নষ্ট থাকার কারণে। এতে নির্ধারিত সময়ে পণ্য সংগ্রহে ব্যবসায়ীদের বেগ পেতে হচ্ছে।

গত এক বছরে কয়েক দফা ঢাকা লোকোশেডের টার্ন আউট অকেজো হয়েছে। এর মধ্যে ২০১৬ সালের ১২ আগষ্ট থেকে প্রায় দুই মাস টার্ন আউটটি নষ্ট ছিল। এদিকে গত ছয় মাসের ব্যবধানে তৃতীয় বারের মতো টার্ন আউটটি বিকল হলে উল্টো অবস্থায় বসে চালকরা ট্রেন পরিচালনা করছেন। এতে ট্রেনের গতি কমে যাওয়া ছাড়াও ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে কন্টেইনারবাহী ট্রেনগুলো। ইঞ্জিন ক্যাপ উল্টো থাকায় দ্রুত পণ্য পরিবহনের প্রয়োজনে উল্টোদিকে চালক বসে পণ্য ও মালবাহী ট্রেনগুলো চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এতে যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঝুঁকিতে রয়েছে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের ট্রেনগুলো।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের কর্মকর্তারা জানান, এই বিষয়ে কয়েকবার রেলের প্রকৌশল বিভাগকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তবে যন্ত্রাংশ সংকটের কথা বলে ঢাকা রেল স্টেশনের টার্ন আউটটি মেরামত করা হয়নি। এছাড়া গত ছয় মাসের ব্যবধানে তিন দফায় টার্ন আউট বিকল হয়েছে। এতে রেলের যান্ত্রিক বিভাগের মেরামত কার্যক্রম নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী গোলাম মোস্তফা বলেন, টার্ন আউটের একটি বিয়ারিং নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। এটি বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। ঢাকা স্টেশনের টার্ন আউটটি ঠিক করতে ইতোমধ্যে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মেরামতের কাজ চলছে। আশা করি, দ্রুত ইঞ্জিন ক্যাপ পরিবর্তন করা সম্ভব হবে। তবে আপাতত ট্রায়াঙ্গুলার লাইন বা বিকল্প মাধ্যমে ইঞ্জিন ক্যাপ পরিবর্তন করা হচ্ছে।

প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের ১৫৫টি ইঞ্জিন থাকলেও নিয়মিত চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে ১০৫ থেকে ১১০টি ইঞ্জিন ট্রেন চলাচলের জন্য সরবরাহ দেওয়া হয়। এর মধ্যে ১০টি ইঞ্জিন দেওয়া হয়েছে মালামালবাহী ট্রেন পরিচালনার জন্য।

জানা গেছে, ঢাকা স্টেশন, আখাউড়া স্টেশন, পাহাড়তলী লোকোশেড, সিজিপিওয়াই, ময়মনসিংহ কেওয়াটখালী, ময়মনসিংহ স্টেশন ও সিলেট স্টেশনে টার্ন আউট পদ্ধতি রয়েছে। ঢাকা স্টেশনের টার্ন আউট নষ্ট থাকায় চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় যাওয়া ইঞ্জিনগুলো আখাউড়া এনে এরপর সেটি ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে সময়ের পাশাপাশি রেলের জ্বালানি খরচও বেড়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রেলের ঊর্দ্ধতন এক কর্মকর্তা বলেন, চট্টগ্রামে একমাত্র রেলের ট্রায়াঙ্গুলার লাইনের পাশাপাশি টার্ন আউট রয়েছে। ব্যবসায়ী ও বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো জ্বালানি পরিবহন করলেও টার্ন আউট জটিলতায় নির্ধারিত সময়ে পৌঁছাতে পারছে না। এই বিষয়ে একাধিক বার জানানো হলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি যান্ত্রিক বিভাগ। ফলে দুর্ঘটনা ঝুঁকির পাশাপাশি রেল যাত্রায় বিলম্ব হচ্ছে। রেলের জ্বালানি খরচও বেড়েছে।

আজকের বাজার: আরআর/ ১৭ জুলাই ২০১৭