পেঁয়াজের দাম বাড়ল কেন?

এ বছরের মে মাস থেকে পেঁয়াজের দামে ঊর্ধ্বগতি লক্ষ্য করা গিয়েছে। এর কারণ মূলত দুটি। ভারতে নতুন ফসল উঠেছে দেরিতে এবং ভারতের মূল পেঁয়াজ উৎপাদনকারী রাজ্য মহারাষ্ট্র, কর্নাটক এবং মধ্য প্রদেশে পেঁয়াজ চাষে ক্ষতি হয়েছে।

অন্যতম পেঁয়াজ উৎপাদনকারী রাজ্য মহারাষ্ট্রে পেঁয়াজের ক্ষেতের পরিমাণ কমে যাওয়ায় পাইকারি বাজারে পেঁয়াজ এসেছে কম। মহারাষ্ট্রে লাসালগাঁওয়ের পাইকারি বাজারে জানুয়ারি মাসের শুরুতে যেখানে ছিল কুইন্টাল প্রতি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা, সেখানে মে মাসের পর সে দাম বেড়ে যায় ১০০০ টাকার উপরে। নাসিক জেলার লাসালগাঁও ভারতের সর্ববৃহৎ পেঁয়াজ বাজার। লাসালগাঁওতে পেঁয়াজের দাম বাড়লে সারা ভারতে পেঁয়াজের দাম বাড়ে, সেখানে দাম কমলে সারা ভারতে পেঁয়াজের দাম কমে। এখন ভারতের প্রায় সব শহরেই পেঁয়াজের দাম ৭০ থেকে ৮০ টাকার মধ্যে।

তখনই রবি শস্যে খামতির কারণে সরবরাহ কমে গিয়েছিল। নাসিক, আমেদাবাদ সহ মহারাষ্ট্রের পেঁয়াজ উৎপাদনকারী এলাকার কৃষকরা রবি শস্যের চাষ করেন এপ্রিলের পর। এই ফসলে আর্দ্রতা কম থাকে বলে তা মজুত করার পক্ষে সুবিধাজনক। মাটির সংস্পর্শে এসে আর্দ্রতার কারণে যাতে পচে না যায় বা অঙ্কুর না বেরিয়ে যায়, সে কারণে কৃষকরা একটু উঁচু মাচা তৈরি করে এই পেঁয়াজ সংরক্ষণ করেন। একে বলে কান্দা চাওল। অক্টোবরের পর নতুন শস্য আসে। ততদিন পর্যন্ত এই মজুত পেঁয়াজই বিক্রি করতে থাকেন কৃষকরা।

বাজারে সারা বছরের খাদ্য জোগায় রবি, প্রথম সিজন (অক্টোবরের পর চাষ হয়) ও দ্বিতীয় সিজন (জানুয়ারি-মার্চে চাষ হয়) শস্য। ২০১৮ সালের খরার দরুন এ বছরের রবি শস্য মার খেয়েছিল। বর্ষা দেরিতে আসায় প্রথম সিজন ও অক্টোবরে অতিবৃষ্টির জন্য দ্বিতীয় সিজনের ফসল উঠতেও দেরি হয়েছিল। এপ্রিলে, মরশুমের শুরুতে কৃষকদের মজুত করা ২২ লক্ষ টন পেঁয়াজের মধ্যে মাত্র ৫-৬ শতাংশ অবশিষ্ট ছিল।ভারতিয় কৃষিমন্ত্রীর দেওয়া তথ্য অনুসারে সিজন শস্য চাষের জমির পরিমাণ ২০১৮-১৯ সালে যেখানে ছিল ২.৯৭ লক্ষ হেক্টর, সেখানে এ বছরে হয়েছে ২.৫৮ লক্ষ হেক্টর। এই হ্রাস মূলত ঘটেছে পেঁয়াজ উৎপাদনকারী মহারাষ্ট্রে, যেখানে দেরিতে আসা বর্ষার দরুণ পেঁয়াজ চাষ প্রায় হয়ইনি।

একই ভারতের সঙ্গে মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান এবং গুজরাটে সেপ্টেম্বর মাসের অসময়ের ব্যাপক বৃষ্টিপাতের জন্য ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়, যা মূল্যবৃদ্ধির একটি কারণও বটে। মহারাষ্ট্র সারা দেশের মোট পেঁয়াজের ৩৫ শতাংশ উৎপাদিত হয়, সেখানে রবি ও সিজন শস্যে ফলন কমে।

জুন মাস থেকে রাজনৈতিক কারণেই ভারতের সরকার পেঁয়াজের দামের দিকে নজর রেখে চলেছে। তাদের প্রথম সিদ্ধান্ত আসে জুন মাসে। দেশের বাইরে পেঁয়াজ রফতানিতে যে ১০ শতাংশ ভূর্তুকি দেওয়া হত, তা তুলে নেওয়া হয়।

এর পর আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়। ১৩ সেপ্টেম্বর পেঁয়াজের ন্যূনতম রফতানিমূল্য বাড়িয়ে টন প্রতি ৮৫০ ডলার করা হয়।

এর কয়েক সপ্তাহ পরেই পেঁয়াজের রফতানি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয় এবং কতটা পেঁয়াজ মজুত করা যাবে, তার পরিমাণও নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। এই পরিমাণ পাইকারি ক্ষেত্রে ৫০০ কুইন্টাল এবং খুচরো ক্ষেত্রে ১০০ কুইন্টাল।

মজুতের নির্ধারিত পরিমাণ মানা হচ্ছে না সন্দেহে গত ১১ নভেম্বর আয়কর দফতর ব্যবসায়ীদের মজুতের পরিমাণ ও তাঁদের খাতাপত্র পরীক্ষা শুরু করেন। তাঁরা নাসিকের ১৫ জন ব্যবসায়ীর অফিস ও মজুতস্থল পরিদর্শন করেন। সে রিপোর্ট এখনও প্রকাশ্যে আসেনি। ব্যবসায়ীদের সূত্র জানিয়েছে, দাম নিয়ন্ত্রণের জন্যই এই হানাদারি। তল্লাশির কয়েকদিন পরেই জেলা জুড়ে পেঁয়াজের দাম মোটামুটি ঠিক হয়ে যায়। বেশ কিছু বড় ব্যবসায়ী সরকারের ভয়ে পাইকারি বাজার থেকে দূরে থাকেন।

দাম নিয়ন্ত্রণের জন্য এক লক্ষ টন পেঁয়াজ আমদানির সিদ্ধান্ত সরকারের সাম্প্রতিকতম পদক্ষেপ।

এই সিদ্ধান্তে কী বদল হল?

এ সিদ্ধান্তের ফলে ভারত পেঁয়াজ রফতানিকারক থেকে পেঁয়াজ আমদানিকারী দেশে রূপান্তরিত হল। বাংলাদেশের পেঁয়াজ আমদানি ভারতের উপর ৭৫ শতাংশ নির্ভরশীল। ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্দ করায় এবং বাংলাদেশ সাথে সাথে প্রয়জনীয় ব্যবস্তা গ্রহন করতে না পারায় বাংলাদেশে অস্বাভাবিক ভাবে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধিপায়।

সূত্র:আইইবি

আজকের বাজার/লুৎফর রহমান