ফাইনালে বাংলাদেশ

নাটকীয়তায় পূর্ণ সেমিফাইনালে পাকিস্তানকে হারিয়ে এশিয়া কাপের ফাইনালে উঠেছে বাংলাদেশ। আজ বুধবার দিবারাত্রির ম্যাচে পাকিস্তানকে ৩৭ রানে হারিয়েছে টাইগাররা। এ নিয়ে টানা দ্বিতীয়বার এবং এশিয়া কাপের চার আসরে তৃতীয়বারের মতো ফাইনালে উঠল তারা।
দুবাইয়ে টসে জিতে ব্যাটিং বেছে নেয় বাংলাদেশ। চরম উত্থান পতনের এই ইনিংসে ১০ উইকেটে ২৩৯ রান সংগ্রহ করে তারা। খেলতে সক্ষম হয় ৪৮ ওভার ৫ বল।
মামুলি লক্ষ্যমাত্রা তাড়া করতে গিয়েও শুরুতে বড়সড় হোঁচট খায় পাকিস্তান। পুরো ৫০ ওভার খেলে ৯ উইকেটে ২০২ রান সংগ্রহ করতে সক্ষম হয় তারা।

এবারের এশিয়া কাপ বাংলাদেশের জন্য উত্থান-পতনের এক টুর্নামেন্ট। এ টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচে শ্রীলংকাকে উড়িয়ে দিয়ে বড় জয় পেয়েছিল টাইগাররা। কিন্তু পরের ম্যাচেই আফগানিস্তানের কাছে হুড়মুড় করে ভেঙ্গে পড়েছিল। পরের ম্যাচে ভারতে কাছেও হেরেছিল বিশাল ব্যাবধানে। কিন্তু সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে এশিয়া কাপের ফাইনালে।
আজকের বাংলাদেশ-পাকিস্তান ম্যাচটিও ছিল উত্থান-পতনের উত্তেজনায় পূর্ণ।

বাংলাদেশে ফাইনালে ওঠার গল্পটা প্রথমে লিখল একটি জুটি। ১২ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলার পর চতুর্থ উইকেটে মুশফিক-মিঠুন ১৪৪ রান যোগ করলেন। এবারের আসরে উদ্বোধনী ম্যাচেও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশকে উদ্ধার করেছিল এই জুটি। কিন্তু সেদিনের মতো এবার শেষটা টেনে দিতে পারেননি মুশফিক। মুশফিক ৯৯ রানে ফিরেছেন এশিয়া কাপে নিজের তৃতীয় সেঞ্চুরি থেকে মাত্র ১ রান দূরে থাকতে। মিঠুন করেছেন ৬০। দুজনের গড়ে দেওয়া ভিত্তিটা ভালোভাবে কাজে লাগাতে পারেনি বাংলাদেশ। ৫ উইকেটে ১৯৭ তোলার পরও শেষটা ভালোভাবে টেনে দিতে পারেনি দল। মাহমুদউল্লাহ তবু ২৫ রানের ইনিংসে কিছুটা চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু শেষ ৫ ওভার বাংলাদেশের জন্য হতাশায় শেষ হয়। ১০ বলের মধ্যে শেষ তিন ব্যাটসম্যানের পতনের মধ্যে দিয়ে ইনিংসে ৭ বল বাকি থাকতেই ২৩৯ রানে অলআউট বাংলাদেশ। প্রত্যাশার চেয়ে অন্তত গোটা কুড়ি রান কম তো হয়েছেই।

উজ্জীবিত পাকিস্তানকে বাংলাদেশ আবারও মাটিতে টেনে আনে বোলিংয়ে। বিশেষ করে দুটি ক্যাচ দারুণভাবে ম্যাচে ফেরায় বাংলাদেশকে। এমনিতেই সাকিব আল হাসানকে ছাড়া খেলা মানে দুজন খেলোয়াড়কে হারানো। বাংলাদেশ খেলেছেও একজন বোলার কম নিয়ে। মাহমুদউল্লাহ-সৌম্যরা বোলিংয়ের শূন্যতা ভালোভাবেই পুষিয়ে দিয়েছেন। মাহমুদউল্লাহ তো পুরো ১০ ওভার বোলিং করে মাত্র ৩৮ রান দিয়ে নিয়েছেন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উইকেটটি। ইনিংস উদ্বোধন করতে নেমে সাত নম্বর ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হওয়া ইমাম (৮৩) তাঁর শিকার। ৪৩ রানে ৪ উইকেট নিয়ে মোস্তাফিজ সবচেয়ে সফল। কিন্তু উইকেটসংখ্যায় পিছিয়ে থাকলেও ১০ ওভারে মাত্র ২৮ রানে ২ উইকেট নিয়ে বড় ভূমিকা রেখেছেন মিরাজ।

শুরুটাও করেছিলেন মিরাজ। পাকিস্তানের ইনিংসের পঞ্চম বলেই ফখর জামানকে রুবেলের ক্যাচ বানান। অবশ্য মিডঅনে রুবেল যেভাবে ক্যাচটা ধরেছেন, লেখা উচিত: ফখরকে মিরাজের উইকেট বানিয়েছেন রুবেল। পরের ওভারে বাবর আজমকে এলবিডব্লুর ফাঁদে ফেলেন মোস্তাফিজ। ৩ বলের মধ্যে দুই ব্যাটসম্যান নেই পাকিস্তানের। দলের বিপদ দেখে ওপরে ব্যাট করতে নেমেছিলেন সরফরাজ। নিজের দ্বিতীয় ও ইনিংসের চতুর্থ ওভারে তাঁকে মুশফিকের ক্যাচ বানান মোস্তাফিজ। ১৮ রানে ৩ উইকেট নেই, বাংলাদেশের বিপক্ষে এতটা বাজে শুরু আগে কখনো করেনি পাকিস্তান।

সেখান থেকে ৬৭ রানের জুটি গড়ে ভয়ই দেখাচ্ছিলেন ইমাম ও শোয়েব মালিক। মিডউইকেটে বাজপাখি হয়ে ওঠা মাশরাফির দুর্দান্ত এক ক্যাচের শিকার হয়ে ফেরেন শোয়েব (৩০)। এবার বোলারের ভূমিকায় রুবেল। এশিয়া কাপে নিজের সেরা ছন্দে ছিলেন শোয়েব মালিক। তাঁকে ফেরানো বাংলাদেশের জন্য ছিল বড় সুখবর। কিছুক্ষণ পর সৌম্যের বাউন্সারে শাদাব উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিলে ১০০ থেকে ৬ রান দূরে থাকতে পঞ্চম উইকেট হারায় পাকিস্তান।

তবু গলার কাঁটা হয়ে ছিলেন ইমাম-উল হক। ষষ্ঠ উইকেটে আসিফ আলীকে সঙ্গে নিয়ে ৭১ রানের জুটি গড়েন ইমাম। আসিফ ব্যক্তিগত ২২ রানে মোস্তাফিজের বলে সহজ ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন পেছনে। কিন্তু চোট নিয়ে বেরিয়ে যাওয়া মুশফিকের বদলে কিপিং করা লিটন এক হাতে ক্যাচটি ধরতে গিয়ে গ্লাভসবন্দী করতে পারেননি। সেই জুটিটাই ধীরে ধীরে বিপদের কারণ হয়ে দেখা দিচ্ছিল। লিটন পরে প্রায়শ্চিত্ত করেছেন দুটি দারুণ স্টাম্পিং করে। প্রথমে মিরাজের বলে আসিফকে (৩১), এরপর মাহমুদউল্লাহর বলে ইমামকেও (৮৩)। পরপর দুই ওভারে এই দুজনের বিদায়ে নিশ্চিত হয়ে যায় পাকিস্তানের পরাজয়। ১৬৭ রানে পাকিস্তান হারায় ৭ উইকেট।

পাকিস্তানের লেজটা মুড়ে দেন মোস্তাফিজ। বাংলাদেশের বিপক্ষে টানা চতুর্থ পরাজয় বরণ করে নিতে হয় পাকিস্তানকে। সর্বশেষ মুখোমুখি লড়াইয়ে ৩ ম্যাচের সিরিজে বাংলাওয়াশ হয়েছিল পাকিস্তান। বাংলাদেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে সোনালি সেই সময়টা যদি আবার ফিরে আসে, তবে ফাইনালেও ভারত সহজে পার পাবে না।