‘বঙ্গবন্ধু চেয়ার’ পদের জন্য ভিজিটিং প্রফেসর পেতে বিজ্ঞাপন দিবে দিল্লী বিশ্ববিদ্যালয়

বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সম্মানে দিল্লী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠিত ‘বঙ্গবন্ধু চেয়ার’ পদের জন্য একজন ভিজিটিং প্রফেসর নিয়োগ দিতে শিগগির বিজ্ঞাপন দেয়া হবে। সোমবার দিল্লী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর পি সি যোশি বলেন, ‘আমরা ২০২১-২২ শিক্ষা বর্ষ থেকে বঙ্গবন্ধু চেয়ারের জন্য প্রথম ‘ভিজিটিং প্রফেসর’ পেতে একটি বিজ্ঞাপন দিতে যাচ্ছি।’

এ ব্যাপারে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরের পর বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থাকে (বাসস) দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ভিসি বলেন, চুক্তির ৫ ধারায় বর্ণিত বাছাই পদ্ধতি অনুসরণ করে এই নিয়োগ দেয়া হবে। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর কালচারাল রিলেশনস (আইসিসিআর)’র মহাপরিচালক দীনেশ কে. পাটনায়েক বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থাকে বলেন, আইসিসিআর ও হাইকমিশন অব ইন্ডিয়া এ ব্যাপারে বিজ্ঞাপন দিবে।

এদিকে, ভারতে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সম্মানে দিল্লী বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘বঙ্গবন্ধু চেয়ার’ প্রতিষ্ঠার জন্য আইসিসিআর ও দিল্লী বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।

আইসিসিআর সভাপতি বিনয় সহ্স্রবুদ্ধে ও ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশ হাইকমিশনার মুহাম্মদ ইমরান এই চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী বঙ্গবন্ধু চেয়ার পদে একজন বিদেশী নাগরিক থাকবেন, এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের নাগরিক অগ্রাধিকার পাবেন। তিনি প্রতি শিক্ষাবর্ষের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাসূচির শর্ত অনুযায়ী বাংলাদেশ বিষয়ক একজন বিশেষজ্ঞ হবেন।

আইসিসিআর এর পাঠানো একটি প্যানেল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় এই ভিজিটিং প্রফেসর নির্বাচন করবে। এই প্যানেলে তিনজন প্রার্থী থাকবেন। এদের ডক্টরেট বা সমমানের ডিগ্রী থাকতে হবে অথবা সংশ্লিষ্ট বিষয়ের উপর ৮ থেকে ১০ বছর কারিগরি বা কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। আইসিসিআর চেয়ারের মেয়াদ হবে ৫ বছর এবং পারস্পারিক সমঝোতা ও অনুমোদনের মাধ্যমে মেয়াদ বৃদ্ধি করা যাবে।

এই সমঝোতা স্মারকটি স্বাক্ষরের দিন থেকেই কার্যকর হবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী পাঁচটি শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। সমঝোতা স্মারকের মেয়াদ অবসান বা অব্যাহত রাখার বিষয়টি পারস্পারিক ঐকমত্যের মাধ্যমে নির্ধারণ করা হবে। চুক্তিতে বলা হয়েছে, আইসিসিআর ভিজিটিং প্রফেসরের ব্যয় বহন করবে। এর মধ্যে ইউজিসি’র মানদ-অনুযায়ী মাসিক বেতন, আসা-যাওয়ার বিজনেস ক্লাস বিমান ভাড়া, ভিসা ফিসহ সকল ভাতা অন্তর্ভূক্ত রয়েছে।

পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় ভিজিটিং প্রফেসরের গবেষণা ও উন্নয়ন কর্মকা-ের জন্য ভ্রমণ ব্যয়, স্বাস্থ্যবীমা, চিকিৎসা সেবা, উপযুক্ত অফিস, সাচিবিক সহায়তা ও পরিবহন খরচ বহন করবে। পক্ষান্তরে, ভিজিটিং প্রফেসরকে বিশ্ববিদ্যায়ের সাথে পরামর্শ করে কারিকুলাম চূড়ান্ত করা, বিশ্ববিদ্যালয়ের চাহিদা অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের পাঠদান ছাড়াও সেমিনার, কনফারেন্স ও ফ্যাকাল্টি মিটিংয়ে অংশ নিতে হবে।

ভিজিটিং প্রফেসরকে প্রতি সেমিস্টারে অন্তত একটি পাবলিক লেকচার দিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় এই লেকচারের আয়োজন করবে। তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালা, এইচআর ও অন্যান্য নিয়ম মেনে চলতে হবে। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী এবং দেশটির জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শত-বার্ষিকী ও ভারত-বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে এই চেয়ার প্রতিষ্ঠা করা হল।

আইসিসিআর এক বিবৃতিতে জানায়, নৃতত্ত্ব, বৌদ্ধ শিক্ষা, ভূগোল, ইতিহাস, সঙ্গীত, চারুকলা ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের মতো বিষয়গুলোর মাধ্যমে বাংলাদেশ ও ভারতের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য তুলে ধরা এই চেয়ার প্রতিষ্ঠার মূল লক্ষ্য। ২০২১ সালের মার্চ মাসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরকালে একটি সমঝোতার ফলে দিল্লী বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘বঙ্গবন্ধু চেয়ার’ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। তথ্য-বাসস

আজকের বাজার/আখনূর রহমান