বাড়ছে না আমানতের সুদ, ব্যাংকবিমুখ সঞ্চয়কারীরা

ব্যাংক আমানতের সুদ হার ৫ শতাংশের নিচেই থাকছে। কোনোভাবেই বাড়ছে না আমানতের সুদ হার। তাই ব্যাংকে আমানত রাখতে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন সঞ্চয়কারী ও বিনিয়োগকারীরা। যাদের অনেকেই সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগে ঝুঁকছেন। ফলে লক্ষ্যমাত্রাকেও ছাড়িয়েছে সঞ্চয়পত্র বিক্রি। সদ্য সমাপ্ত ২০১৬-১৭ অর্থবছরেই ৫২ হাজার কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। এ থেকে আরও জানা গেছে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরের শেষ মাস অর্থাৎ জুন পর্যন্ত ব্যাংকিং খাতে আমানতের গড় সুদের হার ৪ দশমিক ৮৪ শতাংশে নেমে এসেছে। আর এর আগের বছর ২০১৫-১৬ অর্থবছরের শেষে ব্যাংক আমানতের গড় সুদ হার ছিল ৫ দশমিক ৫৪ শতাংশ। ২০১৪-১৫ অর্থবছর শেষে ব্যাংকিং খাতে আমানতের গড় সুদের হার ছিল ৬ দশমিক ৮ শতাংশ। ২০১৩-১৪ অর্থবছর শেষে ব্যাংক আমানতের গড় সুদ হার ছিল ৭ দশমিক ৭৯ শতাংশ।

গত কয়েক বছর ধরে আমানতের সুদের হার কমার পাশাপাশি ঋণের সুদ হারও কমিয়েছে ব্যাংকগুলো। তবে ব্যাংক আমানত এবং ঋণের সুদ হারের ব্যবধান এখনও অনেক বেশি।

এই প্রসঙ্গে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বর্তমানে আমানতের সুদহার মূল্যস্ফীতির থেকেও নিচে নেমে গেছে। যা ব্যাংকিং খাতের জন্য অশনি সংকেত। আমানতের সুদহার কমে যাওয়ায় ব্যাংকবিমুখ হবে মানুষ; যা দেশের অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকারক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকগুলোতে আমানতের গড় সুদ হার ৪ দশমিক ৪৭ শতাংশ। বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোতে আমানতের সুদ হার ৫ দশমিক ৯৮ শতাংশ। বেসরকারি খাতের ব্যাংকে আমানতের গড় সুদ ৫ দশমিক ১৫ শতাংশ। বিদেশি ব্যাংকগুলোতে আমানতের গড় সুদ হার মাত্র ১ দশমিক ৬৬ শতাংশ।

এদিকে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা সত্বেও ঋণ ও আমানতের সুদহারের ব্যবধান (স্প্রেড) কমায়নি দেশি-বিদেশি ১৩ ব্যাংক। সদ্য সমাপ্ত (২০১৬-১৭) অর্থবছর শেষে ৫টি বিদেশি ও ৮টি বেসরকারি ব্যাংকের স্প্রেড ৫ শতাংশীয় পয়েন্টের বেশি ছিল।

ধারাবাহিকভাবে ব্যাংকের আমানতের সুদহার কমার ফলে সঞ্চয়পত্রের দিকে ঝুঁকছেন সাধারণ মানুষ। কেননা, সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করে এখনও ১১ শতাংশ সুদ পাওয়া যাচ্ছে। সদ্য সমাপ্ত ২০১৬-১৭ অর্থবছর শেষে ৫২ হাজার ৩২৭ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। গত জুন মাসেই বিক্রি হয়েছে ৫ হাজার ৬৫৮ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র।

ব্যাংকিং খাতের বিশ্লেষকরা বলছেন, ব্যাংকিং খাতে আমানতের সুদের হার কমার ফলে অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এই পরিস্থিতির উন্নতি না হলে বাড়ি-ঘর কেনার মতো জায়গায় বিনিয়োগ করবে জনসাধারণ; কেউ ব্যাংকে আমানত রাখবে না। অন্যদিকে সঞ্চয়পত্রের উচ্চ মুনাফার হার সরকারের সুদ ব্যয়ভার বাড়াবে। তাই সঞ্চয়কারীদের ব্যাংকেই ফিরিয়ে আনা দরকার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, বর্তমানে বিনিয়োগ কমে যাওয়ায় ব্যাংকগুলোতে এর প্রভাব তেমন একটা পড়ছে না। তবে একটা সময় আমনতকারীরা তাদের টাকা ব্যাংক থেকে তুলে অন্য জায়গায় বিনিয়োগ করবে। তখন আমানত কমে যাবে। ফলে ব্যাংকগুলো ঋণ দিতে পারবে না; ব্যবসাও কমে যাবে। ব্যাংকগুলো এখন হয়তো আমানতের সুদ কমিয়ে লাভ করছে। কিন্তু, ভবিষ্যতে এটা সম্ভব হবে না।

সূ্ত্র:অর্থসূচক

আজকের বাজার: এলকে/এলকে ০৮ আগস্ট ২০১৬