বায়ু দূষণ রোধে শিগগিরই জাতীয় বায়ুমান সূচক চালু করা হবে

বায়ু দূষণের মাত্রা সনাক্ত করতে এবং দূষিত বাতাস সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের প্রধান শহরগুলিতে শিগগিরই জাতীয় বায়ুমান সূচক (একিউআই) চালু করা হবে।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. মনিরুজ্জামান বাসসকে বলেন, ‘একটি জাতীয় বায়ুমান সূচক চালু করার প্রক্রিয়া এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে। আমরা শিগগিরই আনুষ্ঠানিকভাবে এটি চালু করব।’
বায়ুমান সূচক যে কোন শহর বা দেশের দৈনিক বায়ুর মান জানার একটি উত্তম প্রক্রিয়া। এটির মাধ্যমে জানা যায় যে বায়ু কতটা পরিষ্কার বা দূষিত। আর বায়ু যদি দুষিত হয় তা জনস্বাস্থ্যের জন্য কতটা উদ্বেগের কারণ।
বায়ুমান সূচক স্বাস্থ্য ঝুঁকিগুলির উপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়। দূষিত বায়ুতে শ্বাস নেয়ার কয়েক ঘন্টা বা দিনের মধ্যে ওইসব স্বাস্থ্য ঝুঁকিগুলো মানুষ বুঝতে পারে।
মনিরুজ্জামান বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তর তার নির্মল বায়ু ও টেকসই পরিবেশ (সিএএসই) প্রকল্পের আওতায় দেশের বিভিন্ন শহরে ১৬টি স্টেশন থেকে তাৎক্ষণিকভাবে বায়ুমানের তথ্য পাচ্ছে এবং আরও ১৫ টি স্টেশন থেকে একদিন পর পর তথ্য সংগ্রহ করছে।
তিনি বলেন, ‘অবশ্যই, আমাদের একটি বায়ুুমান সূচক চালু করতে হবে এবং আমাদের বায়ুর গুণগত মান এবং এর দূষণ সম্পর্কে জানতে আমরা এটি করব।’
বিশ্বব্যাপী, জনগণের সচেতনতা এবং দূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য এবং প্রতিদিনের শীর্ষস্থানীয় দূষণের মাত্রা হ্রাসে বায়ুমান সূচক একটি কার্যকর টুল হিসাবে ব্যবহৃত হয়।
পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক মো. জিয়াউল হক বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তর দেশে একটি জাতীয় বায়ুমান সূচক চালু করার বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করছে যাতে মানুষ বায়ুর গুণগত মান সম্পর্কে অবগত হতে পারে এবং তারা দুষিত বায়ুর ক্ষতিকর প্রভাব থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারে।
তিনি বলেন, ‘বায়ুমান সূচক চালু করার জন্য আমরা মন্ত্রণালয়ের ছাড়পত্রের অপেক্ষায় আছি। সরকার সিদ্ধান্ত দিলে আমরা তা শিগগিরই চালু করব এবং আমরা তা করার জন্য প্রস্তুত।’
তিনি আরও জানান, জাতীয় বায়ুমান সূচক চালু করার জন্য একটি সফ্টওয়্যার ইনস্টল করতে হবে এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের কাছে তা রয়েছে। বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় পরিবেশ অধিদপ্তর সিএএসই প্রকল্পের আওতায় বায়ুমান সূচকের একটি খসড়া তৈরি করেছে।
পরিবেশ বিশেষজ্ঞ ও পরিবেশবাদীদের মতে, বায়ুমান সূচক প্রতিদিনের বায়ুর মান এবং জনস্বাস্থ্যের পরিণতি সম্পর্কে মানুষকে জানাতে ব্যবহার করা হয়।
তাদের মতে, একটি সমন্বিত বায়ুমান সূচক চালু করা গেলে, বায়ু দুষণের ফলে সম্ভাব্য জনস্বাস্থ্যের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে মানুষকে সতর্ক করা সম্ভব হবে। এটি জনসচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি জনসাধারণের মাঝে দূষণবিরোধী মনোভাব সৃষ্টিতে সহায়তা করবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষও পরিষ্কার বায়ু নিশ্চিত করতে কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।
পরিবেশন বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) চেয়ারম্যান আবু নাসের খান বলেন, উন্নয়নমূলক কাজ এবং রাস্তায় চলাচলকারী পুরাতন যানবাহনসহ বিভিন্ন কারণে দেশে বায়ু দূষণ দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। জনস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনায় নিয়ে অবিলম্বে বায়ু দূষণ রোধে জোরালো পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।
তিনি বলেন, বায়ু দূষণ রোধের প্রচেষ্টা হিসেবে, পর্যবেক্ষণ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবং বায়ুমান নিরীক্ষণে বায়ুমান সূচক চালু একটি সর্বোত্তম উপায়।
নাসের খান বলেন, যদি বায়ুমান সূচক চালু করা হয় তা বায়ুর মানের উপাত্ত বিবেচনায় নিয়ে কার্যকর নীতিমালা গ্রহণে সরকারকে সহায়তা করবে। পাশাপাশি সরকার ও সাধারণ জনগণ উভয়ই উপকৃত হবে।
আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী বায়ু দূষণের মাত্রাগুলিকে ছয়টি ভাগে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়েছে। বিভিন্ন রঙের কোডের মাধ্যমে বায়ু দূষণের মাত্রা বুঝানো হয়ে থাকে। দূষণের মাত্রা নিয়ামক মানের কমপক্ষে ৫০ শতাংশের নীচে থাকলে বায়ুর গুণগত মান ভাল বিবেচনা করা হয়।

সূত্র – বাসস