বিএনপি-আওয়ামী লীগ,কারো কাছেই জনগণ নিরাপদ নয়

আওয়ামী লীগের হাতে বিএনপি নিরাপদ নয়, বিএনপির হাতে আওয়ামী লীগ নিরাপদ নয়। কিন্তু জাতীয় পার্টির হাতে সবাই নিরাপদ দাবি করে সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেন,এদের কারো কাছেই দেশের মানুষ নিরাপদ নয়। তাই জনগণ আবার জাতীয় পার্টিকে ক্ষমতায় দেখতে চায়।

মঙ্গলবার ৯ জানুয়ারি রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে দলের এক যৌথসভায় দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ-বিএনপির মুখোমুখি অবস্থানের সমালোচনা করে এরশাদ এসব কথা বলেন।

দেশের বর্তমান পরিস্থিতিকে হতাশাজনক দাবি করে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, হতাশার কারণেই তরুণরা ব্যাপকভাবে মাদকে ঝুঁকছে। আর এই পরিস্থিতিতে জাতীয় পার্টিই একমাত্র ভরশা হতে পারে বলে মনে করেন গণঅভ্যুত্থানে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা হারানো সেনাশাসক।

এরশাদ বলেন, এখন দোকানে দোকানে মাদক, ইয়াবা, গাঁজা সবই পাওয়া যায়। রুটির চেয়ে গাঁজাই পাওয়া যায় বেশি।

এই পরিস্থিতির কারণ কী- প্রশ্ন তুলে এরশাদ নিজেই তার জবাবে বলেন, কোনো কাজ নাই। তরুনরা হতাশাগ্রস্ত, মা-বাবার বোঝা, সমাজের বোঝা, লেখাপড়া শেষে নেই কোন ভবিষ্যত। তখন সে মাদকের আশ্রয় নেয়। দারিদ্র্যের দুঃখ ভুলে যেতে চায়। একমাত্র উপায় হিসেবে মাদককে বেছে নেয়।

দেশে শিক্ষিত যুবক-নারীর সংখ্যা কত এবং শিক্ষিত যুবকদের অবস্থা কী- সরকারের কাছে এই প্রশ্নেরও জবাব চান এরশাদ।

মধ্যম আয়ের দেশের সুবিধা কেবল ক্ষমতাসীন দল পাচ্ছে অভিযোগ করে এরশাদ বলেন,প্রতিদিন ঢাকায় হাজার হাজার মানুষ আসে কাজের জন্য। কোনো কাজ নাই। মানুষ ফুটপাতে শুয়ে থাকে। আমরা নাকি মধ্যম আয়ের দেশ। মধ্যম আয় শুধু আওয়ামী লীগের মধ্যে।

নারীদের জন্য বাংলাদেশ অনিরাপদ হয়ে উঠেছে বলেও মনে করেন এরশাদ। তিনি বলেন,কোনো মেয়েই আজকে নিরাপদ নয়। গ্রামেগঞ্জের বাবারা মেয়েকে ১৫ বছরের আগেই বিয়ে দিয়ে দেয়।

বাল্যবিবাহ বন্ধকরণসহ যত আইন করেন এটা বন্ধ করতে পারবেন না। কারণ এরা বড় হলেই বাবা-মার বিপদ। ধর্ষণের কথা প্রতিদিন তো শুনছেনই।

সামনে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে যাচ্ছে বলে পূর্বাভাসও দেন এরশাদ। তবে এর মধ্যে জাতীয় পার্টি আরও শক্তিশালী হবে বলেও মনে করেন তিনি।

সাবেক এই রাষ্ট্রপ্রধান বলেন, দুর্বলের সঙ্গে কেউ হাত মেলায় না। দেশের বর্তমান অবস্থা ভাল মনে হয় না। আমার মনে হয়, সামনে একটা অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি হতে যাচ্ছে। কিন্ত আমরা যদি শক্তিশালী হই, কিছুই ভয় করি না। নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে, দলকে শক্তিশালী করতে হবে। আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি আমরা দেখাতে চাই, আমরা শক্তিশালী দল।

বয়স ‘কমে যাচ্ছে’ এরশাদের

জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীর সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে মন্তব্য করে দলের চেয়ারম্যান বলেন, বিভিন্ন কর্মসূচিতে মানুষের উপস্থিতি দেখে এখন নিজেকে ৪০ বছর বয়সীর মতো শক্তিশালী মনে হয়।

‘আমি মনে করি আমার বয়স চল্লিশ বছর। যখন আমি দেখি আমার জনসভায় লোক বেশি তখন আমার বয়স কমে যায়। আর যদি লোক কম দেখি তখন আমার বয়স বাড়ে।’

রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন ও সুন্দরগঞ্জ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির জনসভায় লাখ লাখ লোক দেখে আমার বয়স কমে গেছে।

রংপুরের ভোটে বিজয়ের মাধ্যমে জাতীয় পার্টির মনে প্রাণ সঞ্চার হয়েছে বলেও মনে করেন এরশাদ। তিনি বলেন, দেশের প্রতিটি আসনে এখন প্রার্থী দেয়ার মতো পরিস্থিতি হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘জাতীয় পার্টি কোনও খেলনা না। আমাদের ছাড়া আগামী নির্বাচনে কোনও দল ক্ষমতায় যেতে পারবে না।’

আগামী সংসদ নির্বাচনে ভোট বিপ্লবের মাধ্যমে জাতীয় পার্টিকে ক্ষমতায় দেখেই মরতে চান এরশাদ।

দুই প্রধান দল আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির প্রতি মানুষ বীতশ্রত বলেও দাবি করেন এরশাদ। তিনি বলেন,গ্রামে গঞ্জের মানুষ এখন আওয়ামী লীগ-বিএনপির কথা বলে না। মনে করে জাতীয় পার্টির কথা। তারা মনে করে, আকেরবার যদি এরশাদ আসতেন, তাহলে ভালো হয়।

এরশাদ বলেন,আজকে আওয়ামী লীগের কাছে বিএনপি নিরাপদ নয়, আবার বিএনপির কাছে আওয়ামী লীগ নিরাপদ নয়। কিন্তু আমাদের কাছে সবাই নিরাপদ। তার মানে কি,এদের কাছে কেউই নিরাপদ নয় বলে দাবি করেন সাবেক এই রাষ্ট্রপতি।

৩০০ আসনে জাতীয় পার্টি নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত জানিয়ে এরশাদ বলেন, কেউ কেউ বলছে, জাতীয় পার্টি নাকি ৩০০ আসনে প্রার্থী দিতে পারবে না। ৩০০ নয়, আমরা ৯০০ আসনে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। কারণ একেক আসনে আমাদের ৩/৪ জন করে প্রার্থী রয়েছে। আগামী নির্বাচনে জাতীয় পার্টিই সরকার গঠন করবে।

খালেদার বিরুদ্ধে ৩৭ মামলা, আবার বিরুদ্ধে ৪২

এরশাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি বা অন্য কোনো অভিযোগ নিয়ে বেশি কথা না বলতে, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে পরামর্শ দেন এরশাদ। তিনি বলেন,খালেদার বিরুদ্ধে তো ৩৭ টা মামলা রয়েছে। আর আমার বিরুদ্ধে ৪২ টা। আরো পাঁচাটা বাকি আছে। সেটাই মনে করিয়ে দিলাম।

৯০ এর গণ-অভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের বিরুদ্ধে মোট ৪২টি মামলা হয়। কারাগারেও পাঠানো হয় তাকে। কয়েকটি মামলা এখনো বিচারাধীন। এসব মামলার বেশির ভাগই হয় বিএনপির আমলে।

সভায় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদের, দলের মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, বন ও পরিবেশমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ, জিয়াউদ্দিন বাবলু, শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গা, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জাতীয় পার্টির সভাপতি ও সাংসদ সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা ও ফখরুল ইমামসহ দলের শীর্ষ নেতারা।

আজকের বাজার:এলকে/ ৯ জানুয়ারি ২০১৮