মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগ বন্ধ ঘোষণা

বিদেশে কর্মী প্রেরণে স্বচ্ছতা নির্ধারণের তাগিদ টিআইবি’র

মালয়েশিয়া সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে সেদেশে বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগ বন্ধের ঘোষণায় বিদেশে বাংলাদেশের শ্রমবাজারের বড় ধরনের ক্ষতি হওয়ার আশংকা প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

তবে এটিকে সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করে এই খাতকে সংশ্লিষ্ট সিন্ডিকেটের প্রভাবমুক্ত করে প্রয়োজনীয় সংস্কারের আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।

‘একটি সংঘবদ্ধ চক্রের অনৈতিক ব্যবসা পরিচালনার কারণে মালয়েশিয়া সরকার বাংলাদেশি শ্রমিক নিয়োগ বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে’- গণমাধ্যমে প্রকাশিত এমন সংবাদের সূত্র ধরে আজ রোববার এক বিবৃতিতে এ আহ্বান জানায় টিআইবি।

গণমাধ্যমে পাঠানো সংস্থাটির পরিচালক শেখ মনজুর-ই-আলম স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগ বন্ধের সিদ্ধান্তের সংবাদ যেমন একদিকে গভীর উদ্বিগ্নের, অন্যদিকে জনশক্তি রফতানিতে একচেটিয়া ও সিন্ডিকেটভিত্তিক অনৈতিক ব্যবসা বন্ধে মালয়েশিয়া সরকারের এ সিদ্ধান্ত ইতিবাচক হিসেবে দেখার জন্য সরকারের নিকট আহ্বান জানাই। কারণ এর মাধ্যমে মালয়েশিয়া সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে ইতিবাচক ও অংশগ্রহণমূলক আলোচনার মাধ্যমে পুনরায় বাংলাদেশি কর্মী প্রেরণের সুষম সুযোগ তৈরির পথ সুগম হয়েছে। তবে এটাও পরিস্কার যে, এ সুযোগ গ্রহণের পূর্বশর্ত হচ্ছে পুরো খাতকে সিন্ডিকেটের প্রভাবমুক্ত করা এবং যারা অবৈধ কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত তাদের জবাবদিহি নিশ্চিত করা।

‘আমরা ব্যবসাটিকে বাংলাদেশের সব এজেন্টদের জন্য খুলে দিতে চাই’- গণমাধ্যমে প্রকাশিত মালয়েশিয় প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের সূত্র ধরে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, যে প্রেক্ষাপটে মালয়েশিয়া সরকার বাংলাদেশের অভিবাসী কর্মী নিয়োগ বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা শ্রম অভিবাসন প্রক্রিয়ায় সুশাসন নিশ্চিত করার টিআইবি’র দাবির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে টিআইবি’র আশংকাই সত্য প্রতীয়মান হলো।

টিআইবি’র বিবৃতিতি আরো বলা হয়, ইতির্পূবে মালয়েশিয়াসহ অন্যান্য দেশে অভিবাসী কর্মী প্রেরণে একচেটিয়া ব্যবসার মাধ্যমে অতিরিক্ত মুনাফা অর্জন ও গ্রাহকদের শোষণ প্রক্রিয়া রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের সুপারিশ করে সরকারকে একটি পলিসি ব্রিফ করা হয়েছিল। যার আলোকে যথাসময়ে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গৃহিত হলে অভিবাসী কর্মী নিয়োগ বন্ধের মতো এ ধরনের অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না।

ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, কর্মী নিয়োগ বন্ধের এই সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে অবিলম্বে মালয়েশিয়া সরকারের সাথে কার্যকর আলোচনার মাধ্যমে স্বল্পতম সময়সীমার মধ্যে কর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়াকে সম্পূর্ণ সিন্ডিকেট মুক্ত করে উন্মুক্ত ও প্রতিযোগিতামূলক পদ্ধতিতে এবং স্বচ্ছতার ভিত্তিতে যৌক্তিক ও গ্রহণযোগ্য ব্যয় নির্ধারণ করে পুনরায় শ্রমিক প্রেরণের উদ্যোগ গ্রহণ করতে বাংলাদেশকেই উদ্যোগ নিতে হবে। অন্যথায় বিশাল এই শ্রমবাজার স্থায়ীভাবে বন্ধের ঝুঁকি সৃষ্টি হবে, যা ক্রমবর্ধিষ্ণু বেকারত্ব বৃদ্ধির পাশাপাশি দেশের অর্থনীতির জন্য সীমাহীন গুরুত্বপূর্ণ রেমিটেন্স অর্জন বাধাগ্রস্ত করবে।

টিআইবি’র বিবৃতি আরো উল্লেখ করা হয়, আমরা উদ্বিগ্ন এ কারণে যে, যে সিন্ডিকেটের কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে তার কর্ণধারগণ ও তাদের কার্যক্রম ও প্রভাব সম্পর্কে সরকারের অবগত না থাকার কথা নয়। অথচ দীর্ঘদিন তারা ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থাকতে পেরেছে। সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হাতে এখন সুযোগ এসেছে অভিবাসন খাতকে সিন্ডিকেট ও যোগসাজশের দুর্নীতির গ্রাস থেকে মুক্ত করার। তাই রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক স্বদিচ্ছা প্রমাণের এখনই সুযোগ বলে মনে করে টিআইবি।

আজকের বাজার/এমএইচ