বেলজিয়ামকে হারিয়ে ফাইনালে ফ্রান্স

সেন্ট পিটার্সবার্গ স্টেডিয়ামে ফরাসি বিপ্লবই ঘটিয়ে দিলো ফ্রান্স। এর মাধ্যমে বেলজিয়ামের রূপকথার আবারো সমাপ্তি ঘটলো সেমিফাইনালে। দীর্ঘ ২৮ বছর পর সেমিফাইনালে ওঠে বেলজিয়াম। স্বপ্ন ছিল বিশ্বকাপ ছোঁয়ার কিন্তু সে স্বপ্ন ধুলিস্মাৎ করে দিলেন এক উমতিতি। যার গোলেই তৃতীয়বারের মতো বিশ্বকাপের ফাইনালে ফ্রান্স। দ্বিতীয় শিরোপা থেকে এখন মাত্র এক ম্যাচ দূরে ফ্রান্স।

এর আগে ১৯৯৮ এবং ২০০৬ সালে বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলে লস ব্লুজরা। ১৯৯৮ সালে নিজ দেশের শিরোপা নিজেরাই রেখে দেয়। কিন্তু ২০০৬ সালে ফাইনালে অধিনায়ক জিদানের এক ভুলে শিরোপা ক্ষুণ্ন হয় তারা। এ জয়ে আগামী ১৫ জুলাই লুঝনিকি স্টেডিয়ামে তাদের প্রতিপক্ষ হবে ইংল্যান্ড অথবা ক্রোয়েশিয়ার যে কোন একদল।

এবারের আসরে তরুণ তারকা সমৃদ্ধ একটি দল নিয়ে গিয়েছিলেন ১৯৯৮ সালের বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়ক দিদিয়ে দেশম। কিলিয়ান এমবাপ্পে, আঁতোয়ান গ্রিজমান, পল পগবাদের সমন্বয়ে গঠিত দলটি এবারের বিশ্বকাপের অন্যতম ফেভারিট দল। এদিন প্রতিটি বিভাগেই নিজেদের সেরাটা খেলেছে ফ্রান্স। গ্রিজমানের একের পর এক সুযোগ সৃষ্টি, এমবাপের গতি, কিংবা মধ্যমাঠে পগবার দীপ্ত পদচারণায় মুখরিত ছিল সেন্ট পিটার্সবার্গের মাঠ।

বল দখলের লড়াইয়ে অবশ্য বেলজিয়াম এগিয়ে ছিল। পুরো ম্যাচে তারা ৬৪ শতাংশ সময় ধরে বল দখলে রেখেছিল। অন্যদিকে, ফ্রান্স বল দখলে রেখছিল ৩৬ শতাংশ সময় ধরে। বেলজিয়াম টার্গেটে শট নিয়েছে তিনটি। আর ফ্রান্স টার্গেটে শট নিয়েছে পাঁচটি।

যদিও এদিন শুরুতেই গোলের সুযোগও পেয়েছিল বেলজিয়াম আগে। দলটি হয়ে প্রথম গোলের সুযোগ তৈরি করেন কেভিন ডি ব্রুইন। ১৫তম মিনিটে ডি ব্রুইনের পাসে ডি-বক্স থেকে ইডেন হ্যাজার্ডের কোনাকুনি শট দূরের পোস্টের বাইরে দিয়ে যায়।

এর পরের মিনিটে আবারও ডি-বক্স থেকে জোরালো শট নিয়েছিলেন হ্যাজার্ড। ফরাসি ডিফেন্ডার রাফায়েল ভারানের মাথায় লেগে বল ক্রসবারের উপর দিয়ে যায়। ফ্রান্স তিনটি শট নেয় বেলজিয়ামের গোলমুখে। অন্য দিকে বেলজিয়াম গোটা দুয়েক শট নেয় ফ্রান্সের গোল সীমানায়। দুর্দান্ত খেলেছেন দুই দলের গোল রক্ষক। বলতে গেলে প্রথম ৪৫ মিনিটে নায়ক তারাই।

২২তম মিনিটে টবি অ্যালডারউইয়ারল্ডে শট ঠেকিয়ে দিয়ে ফ্রান্সকে রক্ষা করেন হুগো লরিস। বেলজিয়ামের গোলকিপার থিবাত কর্তোয়াও এদিন ফরাসিতে সামনে দেয়াল হয়ে দাঁড়ান। ৩১তম মিনিটে জিরুড ঠিকঠাক হেড নিতে পারলে এগিয়ে যেতে পারত ফ্রান্স। ৩৪ মিনিটে এমবাপে দারুণ একটা বল দিয়েছিলেন জিরুডকে। কিন্তু সুযোগটা এবারও কাজে লাগাতে পারেননি তিনি। বলে টোকা মারতে পারলেই গোল পেতে পারত ফ্রান্স।

বিরতির ৬ মিনিট আগে দারুণ এক সুযোগ পায় ফ্রান্স। ৩৯ মিনিটে এমবাপের পাস থেকে পাভার্দ লক্ষ্যে শট নিয়েছিলেন, কিন্তু কোর্তোয়ার বাড়িয়ে দেওয়া পা ব্যর্থ করে দেয় তাকে।

যোগ করা সময়ের প্রথম মিনিটে ডি ব্রুইনের দুর্দান্ত ক্রস থেকে গোল করার সুবর্ণ সুযোগ নষ্ট করেন রোমেলু লুকাকু। গোলমুখের সামনে দাঁড়ানো এ স্ট্রাইকারের গায়ে বল লাগায় লক্ষ্যভেদ করতে পারেননি।

প্রথমার্ধে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা সত্ত্বেও কোনো দল গোল করতে পারেনি। তাই গোলশূন্য সমতায় থেকে বিরতিতে যায় ফ্রান্স ও বেলজিয়াম। বিরতি থেকে ফিরেই ১-০ গোলে এগিয়ে যায় ফ্রান্স। ৫১তম মিনিটে কর্নার কিক থেকে উড়ে আসা বল হেড করে জালে পাঠান স্যামুয়েল উমতিতি।

এরপর বেলজিয়াম ম্যাচে ফেরার চেষ্টা করেছে। বারবার আক্রমণে গিয়েছে। কিন্তু গোল করতে পারেনি। ৬৫তম মিনিটে ম্যাচে সমতা আনতে পারতো বেলজিয়াম। মের্টেন্সের ক্রস থেকে হেড করেন ফেলাইনি। কিন্তু বল চলে যায় সাইডবারের সামান্য বাইরে দিয়ে। সমতা ফেরাতে মরিয়া বেলজিয়াম বক্সের মধ্যে জায়গা খুঁজছিল হন্যে হয়ে। ৭৩ মিনিটে ডি ব্রুইনের ক্রস বক্সের মধ্যে বিপদ ডাকার আগেই পল পগবা হেড করে মুক্ত করেন।

৮১তম মিনিটে আবারও সুযোগ আসে বেলজিয়ামের সামনে। এবারও গোলরক্ষকের দক্ষতায় গোল হজম করতে হয়নি ফ্রান্স। উইটসেলের রকেট গতির শট সেভ করেন হুগো লরিস।

টানা ২৪ ম্যাচ অপরাজিত থাকার পর হারের স্বাদ পেল বেলজিয়াম। ‘সোনালী প্রজম্মরা’ পেল না প্রথম ফাইনালের স্বাদ।

আগামী শনিবার সেন্ট পিটার্সবার্গ স্টেডিয়ামে হবে তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচ।

আরএম/