ব্লু টুথ স্পিকারের জন্য যুবক খুন, আসামী ৪০ দিনের চিল্লায়

মাত্র দুইশ টাকা মূল্যের একটি ব্লু টুথ স্পিকার নিয়ে দ্বন্দ। সেই দ্বন্দের জের ধরেই ছুরিকাঘাতে যুবককে খুন। খুনের পরে আবার সিনেমাটিকভাবে নাম-পরিচয় গোপন করে ৪০ দিনের চিল্লায় আসামী।

ঘটনাটি ঘটেছে গত ২ মে রাজধানীর ভাটারায়। মাত্র ২০০ টাকা মূল্যের ব্লু টুথের স্পিকার নিয়ে দ্বন্দ্বের জের ধরে ছুরিকাঘাত করে গুলশানের কালাচাঁদপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী আশরাফুল আলম জাহিদকে হত্যা করা হয়।

ব্লু টুথ নিয়ে যার সঙ্গে জাহিদের বিরোধ সৃষ্টি হয়, তার নাম মোহাম্মদ উল্লাহ রাসেল ওরফে হৃদয়। সে ২০১৭ সালে আদমজী স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় পাস করে। গত ২ মে পরিকল্পিতভাবে জাহিদকে খুন করে নাম-পরিচয় গোপন করে ৪০ দিনের চিল্লায় চলে যায় হৃদয়।

গত শনিবার রাতে বাগেরহাট জেলার মোংলা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। জাহিদকে হত্যার কথা স্বীকার করে গতকাল রোববার আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে হৃদয়।

ঘটনাসূত্রে জানা গেছে, একটি ব্লু টুথের স্পিকার হৃদয়ের কাছ থেকে কিছুদিনের জন্য চেয়ে নেয় রিয়াজ নামের তার এক বন্ধু। তবে দীর্ঘদিন পার হলেও রিয়াজ সেটি ফেরত দেয়নি। শেষ পর্যন্ত ব্লু টুথ ফেরত দেওয়ার বদলে এক হাজার টাকা জরিমানা চায় সে। দেনদরবারের পর ৫০০ টাকায় রাজি হয় রিয়াজ। হৃদয় আরও ২০০ টাকা দাবি করে। তবে পুরো টাকা না দেওয়ার বদলে পুরনো ব্লু টুথ স্পিকার ফেরত দিতে গেলে গত ২ মে ভাটারা থানাধীন কুড়িল চৌরাস্তা এলাকায় রিয়াজ ও তার বন্ধু জাহিদ, হাসান ও বিপ্লবের সঙ্গে হৃদয় এবং তার মামাতো ভাই নুরুল ইসলামের প্রথমে বাকবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে রিয়াজকে মারধর করতে থাকে হৃদয় ও নুরুল। বাধা দিতে গেলে তার কাছে থাকা ছুরি দিয়ে রিয়াজের বন্ধু জাহিদকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করা হয়।

এ সময় জাহিদকে বাঁচাতে গেলে হাসান, রিয়াজ ও বিপ্লবকেও ছুরি দিয়ে উপর্যুপরি আঘাত করে গুরুতর আহত করে হৃদয়। পরে জাহিদকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উত্তর বিভাগের এডিসি গোলাম সাকলাইন বলেন, হত্যার পরপরই নির্মল নামে ছদ্মনাম ধারণ করে ৪০ দিনের চিল্লায় চলে যায় মূল হোতা হৃদয়। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে বিষয়টি জানার পর তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। হত্যার আলামত লুকানো থেকে শুরু করে নিজেকে বাঁচাতে একজন পেশাদার অপরাধীর মতো আচরণ করেছে সে।

জানা গেছে, হৃদয়ের বাবা একজন ঠিকাদার। ২০১৫ সালে আদমজী ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসিতে এ প্লাস পায় সে। এর পর ২০১৭ সালে একই প্রতিষ্ঠান থেকে এইচএসসি পাস করে। একসময় বখাটেদের সঙ্গে মিশে বখে যায়। এক বছর ধরে পড়াশোনা বন্ধ রাখে হৃদয়।

পুলিশ জানায়, জাহিদ হত্যার ঘটনায় ভাটারা থানায় তার বাবা বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। একমাত্র আসামি হৃদয়কে গ্রেফতারের পর কিশোর সংশোধনাগারে পাঠানো হয়েছে। তার দেওয়া তথ্যমতে, হত্যাকাণ্ডে ব্যবহূত ছুরিটি কাফরুলের পুলপাড় ব্রিজের কাছ থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ।

নিহতের বাবা আলমগীর হোসেন বলেন, এত সামান্য কারণে ছেলেকে খুন করার কথা বিশ্বাস করাই কঠিন ছিল। নিজের পরীক্ষার ফল জানার আগেই না-ফেরার দেশে চলে গেল ছেলেটা। হত্যায় জড়িত হৃদয় ও তার মামাতো ভাইয়ের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। সূ্ত্র: সমকাল

আজকের বাজার/ এমএইচ