ভ্যাটের কারণে বিদ্যুতে ভোক্তার খরচ ও সরকারের ভর্তুকি কমবে

নতুন ভ্যাট আইনের আওতায় বিদ্যুতের ভোক্তা পর্যায়ে দাম হ্রাস বা বৃদ্ধি না করেও বিদ্যুত বিভাগকে সামগ্রিকভাবে কম পরিমাণ ভ্যাট বা মূসক পরিশোধ করতে হবে। ফলে সরকারকে বিদ্যুতে আগের চেয়ে সাবসিডি (ভর্তুক্তি) কম দিতে হবে বলে জানিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়িত হলে ভ্যাটের কারণে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি পাবে ভোক্তা ও বিভিন্ন মহলের এমন আশঙ্কার ফলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে এমন ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে। সম্প্রতি এনবিআরের সদস্য (মূসকনীতি) ব্যারিস্টার জাহাঙ্গীর স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত চিঠি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

চিঠিতে বলা হয়, ১ জুলাই থেকে মূসক আইন বাস্তবায়িত হলে বিদ্যুৎ বিভাগসহ যেসব সরকারি প্রতিষ্ঠান মূসক আরোপ কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে কিছুটা পরিবর্তন আনতে হবে। নিত্য প্রয়োজনীয় ভোগ্য পণ্যের মধ্যে বিদ্যুৎ গুরুত্বপূর্ণ। সরকার সেবার মানসিকতা নিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। সরকার ২০২৫ সালের মধ্যে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে কাজ করছে।

আরো বলা হয়, বিদ্যুৎ বিভাগ সরকারি রাজস্ব আহরণের অন্যতম খাত। নতুন মূসক আইন বাস্তবায়িত হলে বিদ্যুৎ বিভাগ আগের চেয়ে অনেক বেশি লাভবান হবে। যেহেতু বিদ্যুৎ বিভাগ সাবসিডি মূল্যে বিদ্যুৎ বিক্রি করে থাকে সেহেতু তার উৎপাদন খরচ অনেক বেশি। উৎপাদনে ব্যবহৃত সকল উপকরণে ১৫% হারে মূসক পরিশোধ করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। উৎপাদন পর্যায়ে অব্যাহতি এবং বিতরণ পর্যায়ে ৫% হারে সংকুচিত ভিত্তিমূল্যভিত্তিক মূসক প্রদানের ফলে উৎপাদন পর্যায়ে গ্যাস, তেল, কয়লা ইত্যাদিসহ সকল উপকরণে পরিশোধিত ১৫% মূসক ফেরত পাওয়া যায় না।

বলা হয়, ভোক্তা প্রত্যক্ষভাবে ৫% ও পরোক্ষভাবে ১৫% মূসক পরিশোধ করছেন। বিদ্যুৎ বিভাগ ভোক্তা থেকে এ মূসক আদায় করে সরকারকে পরিশোধ করে। ১৯৯১ সালের মূসক আইনের বিচ্যুতির কারণে এমনটি হচ্ছে। নতুন আইনে এ ধরণের সকল বিচ্যুতি দূর করা হয়েছে। নতুন আইনের আওতায় বিদ্যুতের ভোক্তা পর্যায়ে দাম দাম হ্রাস বা বৃদ্ধি না করেও বিদ্যুৎ বিভাগকে সামগ্রিকভাবে কম মূসক পরিশোধ করবে। এতে সাবসিডির পরিমাণ কমে আসবে।

নতুন ভ্যাট আইনে পণ্য বা সেবা সরবরাহে মূল্যায়ন পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনা হয়েছে উল্লেখ করে বলা হয়, ১৯৯১ সালের আইনের আওতায় মূসকসহ (VAT Inclusive) এবং মূসক ব্যতীত (VAT Exclusive) উভয় প্রকারের মূল্যায়ন পদ্ধতি প্রচলিত ছিল। করদাতা যেকোনো একটি পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারতেন। নতুন আইনে শুধু মূসকসহ (VAT Inclusive) মূল্য রাখা হয়েছে। করদাতাকে সকল মূল্যের মধ্যেই মূসক হিসাব করতে হবে।

বিদ্যুতের উদাহরণ দিয়ে বলা হয়, ১৯৯১ সালের ভ্যাট আইন অনুযায়ী এক ইউনিট বিদ্যুতে গ্রাহক পর‌্যায়ে মূসক ব্যতীত বিক্রয়মূল্য ৯ টাকা হলে বিতরণ পর‌্যায়ে প্রযোজ্য মূসক ৫% হারে মূসকের পরিমাণ হয় ০.৪৫ টাকা। ফলে গ্রাহককে মূসকসহ মোট পরিশোধ করতে হয় ৯+০.৪৫=৯.৪৫ টাকা। নতুন আইনে যদি গ্রাহকের পরিশোধিত বিদ্যুতের মূল্য অভিন্ন রাখা হয় তাহলে পরিশোধিত মোট মূল্য অর্থাৎ ৯.৪৫ টাকায় অন্তভূর্ক্ত মূসকের পরিমাণ ১.২৩ টাকা (৯.৪৫ গুণ ১৫/১১৫)। বিদ্যুৎ উৎপাদনের সময় ক্রয়কৃত উপকরণের ক্রয়মূল্য বা উৎপাদন মূল্য বাস্তবিক অর্থে ৯ টাকার চেয়ে বেশি বিধায় বিদ্যুৎ বিভাগকে বিদ্যুৎ ক্রয়ের সময় পরিশোধিত মূসকের পরিমাণও বেশি হবে। পরিশোধিত মূসক গ্রাহকের কাছ থেকে আদায় করা মূসক অর্থাৎ ১.২৩ টাকার চেয়ে বেশি হলে বিভাগ এ মূসকের অর্থ রিফান্ড হিসেবে ফেরত পাবে। একইভাবে উপকরণ আমদানি পর‌্যায়ে পরিশোধিত মূসক পদি উৎপাদন ও বিতরণ পর‌্যায়ের পরিশোধিত মোট মূসক অপেক্ষা বেশি হয় সেক্ষেত্রে বিদ্যুৎ বিভাগকে অতিরিক্ত কোন মূসক নাও পরিশোধ করতে হতে পারে।

এ বিষয়ে ভ্যাট অনলাইন প্রকল্পের উপ পরিচালক মুহম্মদ জাকির হোসেন অর্থসূচককে বলেন, নতুন আইনে ভ্যাটের কারণে ভোক্তা পর‌্যায়ে কোন মতে বিদ্যুতে খরচ বাড়বে না। আগের আইনে কিছুটা বিদ্যুৎ থাকায় ভোক্তা পর‌্যায়ে ভ্যাটের পরিমাণ কিছুটা বেশি পড়তো। সরকার প্রচুর পরিমাণে সাবসিডি দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। নতুন আইনে সাবসিডি কম দিতে হবে।

আজকের বাজার:এলকে/এলকে/ ১ জুন ২০১৭