মুস্তাফিজের বিধ্বংসী বোলিংয়ে রেকর্ড জয়ে হোয়াইটওয়াশ এড়ালো বাংলাদেশ

পেসার মুস্তাফিজুর রহমানের ক্যারিয়ার সেরা বোলিং নৈপুন্যে স্বাগতিক যুক্তরাষ্ট্রের কাছে তিন ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজে হোয়াইটওয়াশের লজ্জা এড়ালো সফরকারী বাংলাদেশ।
আজ সিরিজের তৃতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ ১০ উইকেটের বড় ব্যবধানে হারিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রকে। নিজেদের টি-টোয়েন্টি ইতিহাসে এই প্রথম কোন দলকে ১০ উইকেটে হারালো টাইগাররা। সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচ যথাক্রমে- ৫ উইকেট ও ৬ রানে হেরেছিলো বাংলাদেশ। শেষ ম্যাচ হারলেও ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতলো যুক্তরাষ্ট্র।
এ ম্যাচে টস হেরে প্রথমে ব্যাট করে মুস্তাফিজের তোপে ২০ ওভারে ৯ উইকেটে ১০৪ রান করে যুক্তরাষ্ট্র। ৪ ওভার বল করে মাত্র ১০ রানে ৬ উইকেট নেন মুস্তাফিজ। ৯৬ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে এটিই সেরা বোলিং ফিগার ফিজের। জবাবে ১১ দশমিক ৪ ওভারে বিনা উইকেটে ১০৮ রান করে বাংলাদেশ।
হিউস্টনের প্রেইরি ভিউ ক্রিকেট কমপ্লেক্সে টস জিতে প্রথমে ফিল্ডিংয়ের সিদ্বান্ত নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। ব্যাটিংয়ে নেমে ৪ দশমিক ৫ ওভারে ৪৬ রান তুলেন যুক্তরাষ্ট্রের দুই ওপেনার শায়ান জাহাঙ্গীর ও অ্যান্ড্রিস গাউস। পেসার তানজিম হাসান সাকিবের করা চতুর্থ ওভারে ৪টি চারে ১৭ রান নেন গাউস।
পঞ্চম ওভারে প্রথম বল করতে এসে ১টি করে চার-ছক্কা হজম করেন সাকিব আল হাসান। তবে ওভারের শেষ বলে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বোধনী ভাঙ্গেন সাকিবই। ৫টি চার ও ১টি ছক্কায় ১৫ বলে ২৭ রান করা গাউসকে শিকার করেন তিনি। এই শিকারের মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তিন ফরম্যাট মিলিয়ে ৭শ উইকেট পূর্ণ করেন সাকিব।
সাকিবের ব্রেক-থ্রুর পর যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাটারদের চেপে ধরে বাংলাদেশের অন্য বোলাররা। ১৪ রানের ব্যবধানে পরের ৪ উইকেট তুলে নেন মুস্তাফিজ, রিশাদ ও তানজিম।
জাহাঙ্গীরকে ১৮ ও নীতীশ কুমারকে ৩ রানে আউট করেন মুস্তাফিজ। ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক অ্যারন জোন্সকে ২ রানে বিদায় দেন তানজিম। মিলিন্দ কুমারকে ৭ রানে থামিয়ে দেন রিশাদ।
৪৬ রানের সূচনার পর ৬০ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যুক্তরাষ্ট্র। ষষ্ঠ উইকেটে ৩১ বলে ৩২ রানের জুটি গড়ে যুক্তরাষ্ট্রকে লড়াইয়ে ফেরান নিউজিল্যান্ডের সাবেক ক্রিকেটার কোরি অ্যান্ডারসন ও শ্যাডলি ভ্যান শালকউইক।
১৮তম ওভারে জোড়া উইকেট তুলে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের লড়াকু সংগ্রহের সম্ভাবনা শেষ করে দেন মুস্তাফিজ। শ্যাডলিকে ১২ রানে এবং অ্যান্ডারসনকে ১৮ রানে বোল্ড করেন ফিজ।
ইনিংসের শেষ ওভারে মুস্তাফিজ আরও ২ উইকেট শিকার করলে শেষ পর্যন্ত  ২০ ওভারে ৯ উইকেটে ১০৪ রানে যুক্তরাষ্ট্রের ইনিংস।
বাংলাদেশের মুস্তাফিজ ১০ রানে ৬ উইকেট নেন। টি-টোয়েন্টিতে এটিই তার ক্যারিয়ার সেরা বোলিং। তার আগের সেরা বোলিং ছিলো ২০১৬ সালে ভারতের মাটিতে অনুষ্ঠিত টি-টোয়েন্টি বিশ^কাপে। ঐ আসরে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ২২ রানে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন ফিজ।
এছাড়াও কিপ্টে বোলিং করেছেন রিশাদ হোসেন । ৪ ওভার বোলিং করে মাত্র ৭ রানে নেন ১ উইকেট।
মুস্তাফিজের আগুন বোলিংয়ের ম্যাচে বাংলাদেশের হয়ে তানজিম, সাকিব ১টি করে  উইকেট নেন।
হোয়াইটওয়াশ এড়াতে ১০৫ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে ব্যাট হাতে ঝড় তোলন বাংলাদেশের দুই ওপেনার তানজিদ হাসান ও সৌম্য সরকার। পাওয়ার প্লেতে ৪৮ রান যোগ করেন দু’জনে।
১১তম ওভারে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের তৃতীয় হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ন করেন তানজিদ। এজন্য ৩৮ বল খেলেছেন তিনি।
এরপর ১১তম ওভারের চতুর্থ বলেই বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত করেন তানজিদ ও সৌম্য। ৫টি চার ও ৩টি ছক্কায় তানজিদ ৪২ বলে অপরাজিত ৫৮ এবং ৪টি চার ও ২টি ছক্কায় ২৮ বলে অনবদ্য ৪৩ রান করেন সৌম্য।
আগামী ২৮ মে ডালাসে বিশ^কাপের অফিসিয়াল প্রস্তুতিমূলক ম্যাচে আবারও দেখা হবে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের।
স্কোর কার্ড
যুক্তরাষ্ট্র ইনিংস :
জাহাঙ্গীর ক তানজিম ব মুস্তাফিজুর ১৮
গাউস ক সৌম্য ব সাকিব ২৭
নীতীশ ক লিটন ব মুস্তাফিজুর ৩
মিলিন্দ ক তানজিদ ব রিশাদ ৭
জোন্স ক রিশাদ ব তানজিম ২
অ্যান্ডারসন ব মুস্তাফিজুর ১৮
শ্যাডলি ব মুস্তাফিজুর ১২
জসদীপ ব মুস্তাফিজুর ৬
প্যাটেল ক রিশাদ ব মুস্তাফিজুর ২
কেনজিগে অপরাজিত  ১
অতিরিক্ত (লে বা-২, ও-৬) ৮
মোট (২০ ওভার, ৯ উইকেট) ১০৪
উইকেট পতন : ১-৪৬ (গাউস), ২-৪৬ (জাহাঙ্গীর), ৩-৫৬ (নীতীশ), ৪-৬০ (জোন্স), ৫- ৬০ (মিলিন্দ), ৬-৯২ (শ্যাডলি), ৭-৯৪ (অ্যান্ডারসন), ৮-১০৩ (জসদীপ), ৯-১০৪ (নিসর্গ)
বাংলাদেশ বোলিং :
তানজিম : ৪-১-৩২-১ (ও-১),
হাসান : ৩-০-১৯-০ (ও-১),
সাকিব : ৩-০-২৩-১,
মুস্তাফিজুর : ৪-১-১০-৬ (ও-৪),
রিশাদ : ৪-১-৭-১,
মাহমুদুল্লাহ : ২-০-১১-০।
বাংলাদেশ ইনিংস :
তানজিদ অপরাজিত ৫৮
সৌম্য অপরাজিত ৪৩
অতিরিক্ত (লে বা-৪, ও-৩) ৭
মোট (১১.৪ ওভার, বিনা উইকেট) ১০৮
যুক্তরাষ্ট্র বোলিং :
নেত্রাভালকার : ২-০-২৫-০ (ও-১),
জসদীপ : ২-০-১০-০,
শ্যাডলি : ১-০-১৪-০,
মিলিন্দ : ৪-০-২৫-০,
নীতীশ : ১-০-১১-০,
কেনজিগে : ১-০-১৩-০ (ও-১),
নিসর্গ : ০.৪-০-৬-০।
ফল : বাংলাদেশ ১০ উইকেটে জয়ী।

ম্যাচ সেরা : মুস্তাফিজুর রহমান (বাংলাদেশ)
সিরিজ : তিন ম্যাচ সিরিজ ২-১ ব্যবধানে জিতলো যুক্তরাষ্ট্র। (বাসস)