মৌলভীবাজার এখন আতঙ্কের শহর

মৌলভীবাজারের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি দিন দিন কেবলই অবনতির দিকে যাচ্ছে। শহরের বিভিন্ন স্থানে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, হামলা ও লুটপাটের মতো ঘটনা নৈমিত্তিক হয়ে উঠেছে। দোকানের সাটার কেটে চুরি, মুক্তিযোদ্ধা, ব্যবসায়ী ও সরকারি অফিসেও হামলার ঘটনাও ঘটছে।
এ অবস্থায় জানমালের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক নেতা থেকে বিভিন্ন পেশার সাধারণ মানুষ। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মৌলভীবাজার শহরে চলতি মাসে একাধিক চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি ও সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটলেও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অপরাধীদের শনাক্ত করতে পারেনি। গত ১৬ নভেম্বর বিকেলে মৌলভীবাজার সাব-রেজিষ্ট্রার কার্যালয়ে কনকপুর ইউনিয়নের আক্কাছ মিয়ার ছেলে রুবেল আহমদ ও রিপন আহমদ তাদের নিজ নামীয় জমি বিক্রি করেন প্রবাসী মাহমুদুর রহমানের কাছে। কিন্তু এক প্রভাবশালী দলিল লেখকের ছেলে রুমান ও দলিল লেখক ফয়সল চাদাঁ দাবি করলে চাদাঁর টাকা না দেয়ায় কথা কাটাকাটি হয় এক পর্যায়ে সংর্ষের ঘটনা ঘটে এই ঘটনায় মধ্যস্থতাকারী রাসেল, সুমন ও আফজলসহ ৪ দলিল লেখক আহত হন।
এ সময় জমি বিক্রেতা ও দলিল লেখকের মাইক্রোবাস ও কারসহ ২ চালকে আটক করে পুলিশ। গত ১৪ নভেম্বর মঙ্গলবার রাত ৮টায় শহরের চৌমুহনা এলাকায় পূর্ব শত্রুতার জেরে মৌলভীবাজার সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আনসার আলীকে কুপিয়ে জখম করে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। এই অভিযোগে সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি বশির আলীকে আটক করে পুলিশ। গত ৮ নভেম্বর বুধবার রাত ১০টার দিকে দোকান বন্ধ করে প্রায় ৭ লাখ টাকা নিয়ে বের হবার সময় নিজ দোকানের সামনেই সন্ত্রাসী হামলার স্বীকার হন শহরের সমশেরনগর রোডের নাইন্টি নাইন দোকানের মালিক ও বালু মহালদার মুহিবুর রহমান মুহিব।
গত ১৭ নভেম্বর রাতে শহরের লেইক রোড ও কলাপাড়া তিনটি দোকানের সাটার ভেঙে নগদ টাকা ও মালামাল চুরি হয়। ১ নভেম্বর দুপুরে শহরের কাশিনাথ রোডে অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা ডা: মো: ইয়াজ উদ্দিনের স্ত্রী ছালেহা চৌধুরীকে অজ্ঞান করে নগদ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে পালিয়ে যায় কাজের মহিলা। গেল মাসের ২৮ অক্টোবর মৌলভীবাজার পৌরসভার কার্যালয় ও মেয়রের কক্ষ সহ শহরের কয়েকটি স্থানে হামলা ও ভাঙচুর করে সন্ত্রাসীরা। ২৯ অক্টোবর শহরের সৈয়ারপুর এলাকা থেকে নিপা দাশ নামের এক ব্রাক কর্মীর ১লাখ ৮৪ হাজার টাকা ছিনতাই করে দুর্বৃত্তরা। এছাড়াও বিভিন্ন সময় ছোট বড় হামলা ও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে।
ভুক্তভোগীরা বলছেন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিয়মিত নজরদারির অভাব রয়েছে। এ ছাড়া ঘটনা ঘটার পর অপরাধীদের শনাক্ত করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এতে অপরাধীরা ক্রমেই বেপরোয়া হয়ে একের পর এক অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে।
মৌলভীবাজার বিজনেস ফেরামের সভাপতি বিশিষ্ট ব্যবসায়ী নুরুল ইসলাম বলেন, আমরা ব্যবসায়ীরা আতঙ্কে আছি। এই অবস্থা চলতে থাকলে আর ব্যবসা করা সম্ভব হবে না। অপরাধীরা শনাক্ত না হওয়ায় এ ধরনের ঘটনা দিন দিন বাড়ছে। কেউ আর এখন নিরাপদ নই। আমরা চাই পুলিশ দ্রুত অপরাধীদের শনাক্ত করুক।
এ বিষয়ে মৌলভীবাজার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাহজালাল জানান, অপরাধীদের আটক করতে পুলিশ তৎপর রয়েছে এবং আটক করা হচ্ছে।
এ অবস্থায় বর্তমানে সারা শহরে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
আজকের বাজার: সালি / ২১ নভেম্বর ২০১৭