রমজানে নিত্যপণ্যের মূল্য ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার আহ্বান এফবিসিসিআইয়ের

রমজানে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক ও মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্যবসায়ী সমাজের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে দেশের শীর্ষ বাণিজ্য সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন (এফবিসিসিআই)।
আসন্ন রমজানে নিত্যপণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক ও দাম স্থিতিশীল রাখার বিষয়ে এক মতবিনিময় সভায় এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম ব্যবসায়ীদের প্রতি এই আহ্বান জানান।
মাহবুবুল আলম বলেন, ব্যবসায়ীরা দেশের প্রাণ। ব্যবসায়ীরা কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছে, তাই দেশ এত দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। একটি ইন্ডাস্ট্রি গড়ে তোলার জন্য ৪৩টি সংস্থা থেকে লাইসেন্স নিতে হয়, তারপরেও ব্যবসায়ীরা দেশের জন্য, রাষ্ট্রের জন্য ব্যবসার কার্যক্রম পরিচালনা করে।

তিনি বলেন, দু’একজন ব্যবসায়ীর অসততার কারণে পুরো ব্যবসায়ী সমাজের বদনাম হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, ‘যারা অনৈতিকভাবে বাজারে সংকট তৈরি করবে আমরা তাদের সঙ্গে নেই। ব্যবসায়ীদের কেউ অসাধু বলুক, সিন্ডিকেট করা হচ্ছে এমন কোনো কথা উঠুক, তা আমরা শুনতে চাই না। আমরা চাই ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করুক। কোনো সমস্যা হলে সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হবে। কিন্তু আমাদের কোনো বদনাম হোক তা আমরা চাই না।’

এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, ‘আমরা ব্যবসায়ীদের কথা শুনেছি। এলসি খোলা নিয়ে জটিলতা আছে। এটা নিয়ে আমরা কথা বলছি। প্রয়োজনে আরও কথা বলব। যেসব মন্ত্রণালয় বাজারের সঙ্গে সম্পর্কিত তাদের মধ্যে সমন্বয় হওয়াটা বেশি জরুরি।’
এসময় খেজুরসহ ফলমূল নিয়ে ভ্যাট-ট্যাক্সজনিত সমস্যা সমাধানে এফবিসিসিআই আন্তরিকভাবে কাজ করছে বলেও জানান তিনি। বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনায় জেলা প্রশাসকের সাথে সমন্বয় করে কাজ করতে জেলা চেম্বারগুলোর প্রতি আহ্বানও জানান তিনি।

সমাপনী বক্তব্যে এফবিসিসিআইয়ের সিনিয়র সহসভাপতি মো. আমিন হেলালী বলেন, ভবিষ্যতে আরো বেশি স্টেকহোল্ডার নিয়ে এ ধরনের মতবিনিময় সভা করবে এফবিসিসিআই। প্রয়োজনে সেমিনারের আয়োজন করা হবে। নিত্যপণ্যের মূল্য ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে সবাইকে দায়িত্বশীল হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
এর আগে সভায় উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে নিজ নিজ অবস্থানের কথা তুলে ধরেন মিল মালিক, আড়তদার, পাইকারি ও খুচরা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা।
কাঁচামাল আড়তদার মালিক সমিতির সভাপতি ইমরান মাস্টার বলেন, সুষ্ঠু বিপণন ব্যবস্থার অভাবে বাজারে এ ধরনের অস্থিতিশীল অবস্থার সৃষ্টি হয়। খুচরা ব্যবসায়ীদের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখার জন্য তার সমিতির কাছে জবাবদিহিতার বিধান চান তিনি। তবে আগামী রমজান শীত মৌসুমে হওয়ায় বাজারে শাকসবজির সংকট সৃষ্টি হবে না বলে মনে করেন তিনি।

বাংলাদেশ লবণ মিল মালিক সমিতির সভাপতি নূরুল কবির জানান, কুয়াশা ও ঠান্ডাজনিত কারণে লবণ উৎপাদন একটু ব্যাঘাত ঘটলেও বড় কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে বাজারে লবণের সরবরাহ স্বাভাবিক থাকবে।
খাদ্য নিরাপত্তার অজুহাতে বাজারে খোলা তেল বিক্রির চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ করেন বাংলাদেশ পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোলাম মাওলা। খোলা বা লুজ তেল দীর্ঘদিন ধরে চললেও হঠাৎ এখন কেন তা বন্ধের আলোচনা চলছে সে বিষয়ে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।

এলসি খুলতে পারা এবং ফিডের দাম না বাড়লে ব্রয়লার মুরগির দাম বাড়ার সম্ভাবনা নেই বলে জানায় বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন। শতভাগ মার্জিন দিয়ে হলেও এলসি খুলতে চান তারা।
সভায় ভোগ্যপণ্যের জন্য আলাদা মন্ত্রণালয় গঠনের প্রয়োজন বলে জানান বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন।

সভায় উপস্থিত থেকে আসন্ন রমজানে নিত্যপণ্যের সরবরাহ ঠিক রাখতে ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল জব্বার মন্ডল।
মতবিনিময় সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআইয়ের সিনিয়র সহসভাপতি মো. আমিন হেলালী, সহ-সভাপতি খায়রুল হুদা চপল, পরিচালকবৃন্দসহ বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ। (বাসস)