রসিকে প্রচার শেষ, ভোটের অপেক্ষা

রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রার্থীদের প্রচার শেষ হয়েছে মঙ্গলবার মধ্যরাতে। ভোটগ্রহণ বৃহস্পতিবার। মঙ্গলবার প্রচারের শেষ দিন সিটি করপোরেশনের মেয়র ও কাউন্সিলর পদপ্রার্থীরা ব্যস্ত সময় কাটান। সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত তাঁরা নগরের অলিগলি চষে বেড়ান। তাঁদের পক্ষে নেতাকর্মী সমর্থকরাও চালান প্রচারণা।

২১ ডিসেম্বরের নির্বাচনে কে হবেন রংপুর সিটির দ্বিতীয়বার নগরপিতা এ নিয়ে ভোটারদের মধ্যে এখন চলছে অঙ্কের হিসাব। নয় বছর পর নৌকা-লাঙ্গল-ধানের শীষের সরাসরি লড়াই দেখতে যাচ্ছে নগরবাসী। একাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এই ভোট শুধু রংপুরের নতুন মেয়র হিসেবেই নয়, জাতীয় রাজনীতির হিসাব-নিকাশেও প্রভাব ফেলবে বলে মনে করেন করছেন অনেকে।

স্থানীয়রা জানান, সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নির্বাচনে মূল প্রতিদ্বন্দ্বী হবে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির প্রার্থীর মধ্যে। বিএনপির পক্ষ থেকে নানা অভিযোগ তোলা হলেও মাঠের পরিস্থিতি ভিন্ন। এখানে অনেকটা স্বাচ্ছন্দ্যে নির্বাচনী কাজে অংশ নিতে পারছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা।

এদিকে নির্বাচন গ্রহণের জন্য ইতোমধ্যে সব প্রস্তুতি শেষ করেছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে চার স্তরের নিরাপত্তাসহ নগরজুড়ে নেয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা। ভোটগ্রহণ সুষ্ঠু করতে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসীদের খুঁজছে পুলিশ। ভোটাররা যাতে ভোটকেন্দ্রে যেতে পারে, সে জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন। এরইমধ্যে বহিরাগত নেতৃবৃন্দ নির্বাচনী এলাকা ছাড়তে শুরু করেছেন।

নির্বাচনী এলাকার বাইরে থেকে আসা মানুষকে এলাকা ছাড়তে বলা হয়েছে। হোটেল-মোটেলগুলোতে কাউকে কক্ষ ভাড়া না দেয়ার নির্দেশনা আরোপ করা হয়েছে। নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ বা ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত কেন্দ্রগুলোতে সুষ্ঠু ভোটের পরিবেশ নিশ্চিত করতে নিরাপত্তার কড়াকড়ি করা হয়েছে। তবে ভোটের পরিবেশ নিয়ে নানা অভিযোগ করে আসছেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা।

নির্বাচনে ৩৩টি ওয়ার্ডে মোট ১৯৩টি কেন্দ্রে নেয়া হবে ভোট। এর মধ্যে অধিক গুরুত্বপূর্ণ বা ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে ১০৮টি কেন্দ্র। সেসব কেন্দ্রের আশপাশে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।

ঝুঁকিপূর্ণ প্রতিটি কেন্দ্রে ১০ জন করে পুলিশ ও ১৪ জন করে আনসার সদস্য থাকবে। আর সাধারণ কেন্দ্রে আট জন পুলিশ ও ১৪ জন আনসার সদস্য থাকবে। এ ছাড়া প্রতি ওয়ার্ডে থাকবে র‌্যাবের একটি করে দল।

পুলিশ এবং নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, ভোটে প্রতিটি ওয়ার্ডে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট থাকবেন। আরও ছয় জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়ে ছয়টি স্ট্রাইকিং ফোর্স কাজ করবে। বিজিবি থাকবে ২১ প্লাটুন।

বহিরাগতদের অবস্থান নিষিদ্ধ করে জারি করা নির্দেশনা তথ্য অধিদপ্তর থেকে মাইকে প্রচারও করা হচ্ছে। হোটেল-মোটেলসহ বিভিন্ন আবাসিক হোটেলগুলোতে বহিরাগত না তুলতে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে চিঠি।

পুলিশের রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক জানান, নির্বাচন সুষ্ঠু করতে নগরীতে চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠু হবে এতে কোন সন্দেহ নেই। কোন প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটনার শঙ্কা নেই।

উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠেয় রংপুর সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে সাত জন, ৩৩টি ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২১১ জন ও সংরক্ষিত ১১টি ওয়ার্ডে ৬৫ জন নারী কাউন্সিলর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। মেয়র পদে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হলেও, কাউন্সিলর পদে নির্দলীয় প্রতীকে ভোট হবে।

১৯৬টি ভোট কেন্দ্রে ১১৭৭টি ভোটকক্ষ রয়েছে। মোট ভোটার ৩ লাখ ৯৩ হাজার ৯৯৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৯৬ হাজার ৩৫৬ এবং নারী ১ লাখ ৯৭ হাজার ৬৩৮ জন।

২০১২ সালের ২০ ডিসেম্বর প্রথমবারের মতো রংপুর সিটি করপোরেশনে ভোট হয়েছিল। সে নির্বাচনে শরফুদ্দিন আহমেদ ঝণ্টু,প্রায় ২০ হাজারেরও বেশি ভোটের ব্যবধানে মোস্তাফিজার রহমান মোস্তাকে হারিয়ে রংপুরের নগরীর প্রথম মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন।

আজকের বাজার: এলকে/ ২০ ডিসেম্বর ২০১৭