রাজস্ব আহরণে গতি আনবে সম্মাননা

ট্যাক্স কার্ডপ্রাপ্তদের দেওয়া সম্মাননা এনবিআর ও করদাতা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দূরত্ব কমবে এবং রাজস্ব বাড়াতে গতি আনবে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনর ফজলে কবির।

মঙ্গলবার ২১ নভেম্বর দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচার ২য় ১২ তলা সরকারী ভবনে এলটিইউ এর সম্মেলন কক্ষে বৃহৎ করদাতা ইউনিট (এলটিইউ) ট্যাক্স কার্ডপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের সম্মাননা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।

অনুষ্ঠানে এলটিইউ এর আওতাধীন ব্যাংকিং, নন-ব্যাংকিং খাতে ২০১৬-১৭ করবর্ষে ট্যাক্স কার্ড প্রাপ্ত ১০টি প্রতিষ্ঠানকে সম্মাননা প্রদান করা হয়।

প্রথমবারের মতো দেশের বড় করদাতাদের এমন সম্মাননা প্রদান করায় এলটিইউ এর প্রশংসা করেন গর্ভনর বলেন, ব্যাংকিং এবং নন-ব্যাংকিং খাতের ট্যাক্স কার্ডপ্রাপ্ত এমন প্রতিষ্ঠানকে সর্বোচ্চ রাজস্ব প্রদানের জন্য বিরল এ সম্মাননা প্রদান করায় আমি খুবই আনন্দিত। ব্যাংকিং, নন-ব্যাংকিং খাতের জন্য এটি একটি বড় অর্জন। অর্থনেতিক উন্নয়নে এনবিআর-বাংলাদেশ ব্যাংক পার্টনারশিপ হিসেবে কাজ করছে। ব্যাংকিং খাত আয়কর খাতে ৪৯ শতাংশ,এবং নন-ব্যাংকিং খাত ২৫ শতাংশ অবদান রাখছে জেনে খুবই ভালো লাগছে। দেশের অর্থনীতির সাথে সাথে প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি পাচ্ছে। আগামী বছর প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশ হবে। ২০২১ সালের মধ্যে আমরা মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবো। আগামী অর্থবছর বাজেটের আকার হবে প্রায় ৪ লাখ কোটি টাকা। আমাদের অর্থনীতির আকার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। উন্নয়ন আর মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে হলে আমাদের রাজস্ব প্রয়োজন। দেশে ৫৭টি ব্যাংক, ৩২টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ ইন্স্যুরেন্স খাতকে রাজস্ব আহরণে আরো বেশি ভূমিকা রাখতে হবে। জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৪ অর্জন করতে সকলকে সহযোগিতা করতে হবে। কর আহরণে এনবিআরের সক্ষমতা আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। এলটিইউ এর এমন বিরল সম্মাননার ফলে এলটিইউ-বড় করদাতাদের মধ্যে দূরত্ব কমবে, রাজস্ব বাড়বে।

সম্মাননাপ্রাপ্তদের পক্ষ থেকে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবদুল হামিদ মিঞা ট্যাক্স কার্ডপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানকে প্রথমবার এমন সম্মাননা প্রদান করায় ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ইসলামী ব্যাংক চেষ্টা করছে ব্যাংকিং খাতে আরো ভালো করার। ব্যাংক ভালো করলে স্বাভাবিকভাবেই রাজস্ব বাড়বে। ইসলামী ব্যাংকের মুনাফা বেশি। সেজন্য প্রতিবছর বেশি পরিমাণ রাজস্ব প্রদান করছে। রাজস্ব আহরণ এবং প্রদানের ক্ষেত্রে এ ব্যাংক সব সময় এনবিআরকে সহযোগিতা করেছে, আগামীতেও করবে। এনবিআর এ সম্মাননার মাধ্যমে যে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে ভবিষ্যতে আরো বেশি সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।

সম্মাননাপ্রাপ্তদের অভিনন্দন এবং অতিথিদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে সভাপতির বক্তব্যে কমিশনার মো. আলমগীর হোসেন বলেন, এনবিআর চেয়ারম্যানের নির্দেশে করদাতা এবং এলটিইউ এর মধ্যে আস্থার সর্ম্পক এবং রাজস্ববান্ধব পরিবেশ তৈরির অংশ হিসেবে এলটিইউ প্রথমবারের মতো করদাতাদের এমন সম্মাননা প্রদান করছে। এলটিইউ কর সংস্কৃতির উন্নয়ন এবং করদাতাদের সর্বোচ্চ সেবা প্রদান করে যাচ্ছেন।

ফাংশনাল পদ্ধতির মাধ্যমে কর ব্যবস্থাপনা আধুনিকায়নের অংশ হিসেবে ২০০৩ সালের নভেম্বরে এলটিইউ আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে। প্রতিষ্ঠার সময় এলটিইউ এর অধিক্ষেত্রাধীন করদাতার সংখ্যা ছিল ৯৩৯। যার মধ্যে কোম্পানি করদাতা ২৫১টি ও ব্যক্তি করদাতা ৬৮৮জন। প্রতিষ্ঠার ১৪ বছর পর বর্তমানে এর মোট করদাতার সংখ্যা ১ হাজার ১৭৭। এরমধ্যে কোম্পানি করদাতা ৪১৮। যার মধ্যে ৬০টি ব্যাংক, ২৯টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান (লীজিং এন্ড ইনভেস্টমেন্ট), ৬৮টি মার্চেন্ট ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান, ৭৪টি ম্যানুফ্যাকচারিং প্রতিষ্ঠান, ২৯টি জীবন বীমা, ৪৮টি সাধারণ বীমা, ৬টি মোবাইল অপারেটর, ৬টি ফুড এন্ড বেভারেজ, ১৪টি গার্মেন্ট কোম্পানি, ২৭টি টেক্সটাইল কোম্পানি, ৯টি মাল্টিপল প্রোডাক্টস, ১২টি ফার্মাসিউটিক্যালস ও অন্যান্য ৩৬টি প্রতিষ্ঠান। এছাড়া ব্যক্তি করদাতার সংখ্যা ৭৫৯ জন। বিদায়ী অর্থবছর এলটিইউ ১৪ হাজার ৯০০ কোটি টাকার রাজস্ব আহরণ করে। চলতি অর্থবছর এলটিইউ এর রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ১৮ হাজার ২০০ কোটি টাকা।

আজকের বাজার: আরআর/ ২১ নভেম্বর ২০১৭