রোনালদোকে তার বোনের খোলা চিঠি!

ক্যারিয়ারে যখনই দুঃসময়ের মুখোমুখি হয়েছেন ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো, অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন তার বোন। প্রিয় ছোট ভাইটির কাঁধে হাত রেখে নানাভাবে অনুপ্রাণিত করেছেন, নব উদ্যোমে ঝাপিয়ে পড়ার শক্তি জুগিয়েছেন। ঢেলে দিয়েছেন সেরা রূপে ফেরার সঞ্জিবনী। এবারও রিয়াল মাদ্রিদের পর্তুগিজ সুপারস্টারের দুঃসময়ে অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে পাশে দাঁড়ালেন তার সেই বোন কাতিয়া অ্যাভেইরো। এবার আর মুখের কথায় নয়, অনুপ্রাণিত করতে কাতিয়া অ্যাভেইরো ছোট ভাইকে লিখেছেন আবেগঘন এক চিঠি।

বোঝাই যাচ্ছে, কাতিয়া এবার একটু বিশদভাবেই ছোটভাইকে অনুপ্রাণিত করার চেষ্টা করেছেন। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করা সেই চিঠিতে কাতিয়া ছোট ভাইকে মনে করিয়ে দিয়েছেন ক্যারিয়ারের নানা বাঁকের কথা।

গত মৌসুমের অবিশ্বাস্য পারফরম্যান্সের সুবাদে ২০১৭ সালে বিশ্ব ফুটবলের ব্যক্তিগত সব বড় পুরস্কারই নিজের পকেটে তুলেছেন রোনালদো। সেই রোনালদোই এই মৌসুমে যেন গোল করা ভুলে গেছেন! বিশেষ করে স্প্যানিশ লা লিগায় রোনালদো হয়ে উঠেছেন হতাশার প্রতীক। লিগে ১৪ ম্যাচে করেছেন মাত্র ৪টি গোল।

রোনালদোর এই ব্যর্থতায় তার দল রিয়াল মাদ্রিদের অবস্থা করুণ। লিগ শিরোপা স্বপ্ন তো শেষ হয়ে গেছেই, রিয়াল শীর্ষ চারে থেকে আগামী মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে জায়গা করে নিতে পারবে কিনা, দেখা দিয়েছে সেই শঙ্কা! স্বাভাবিকভাবেই রিয়াল সমর্থকরা রোনালদোর উপর খুব হতাশ।

নিন্দুকেরা ফোটাতে শুরু করেছে সমালোচনার তীর। কেউ কেউ তো ৩২ বছর বয়সী রোনালদোর ক্যারিয়ারের শেষই দেখতে শুরু করেছেন। এমনকি, গত ৯ বছরে যে ক্লাবকে দুহাত ভরে দিয়েছেন, সেই রিয়ালকে নাকি তাকে বিক্রি করে দেওয়ার পরিকল্পনা এঁটে ফেলেছে!

দীর্ঘ ক্যারিয়ারে এর আগেও দুঃসময়ের মুখোমুখি হয়েছেন রোনালদো। তবে স্থায়ীত্বের দিক থেকে সবচেয়ে কঠিন সময়টা পার করছেন এবারই। প্রিয় ভাইয়ের কঠিন এই সময়টায় তাই আর চুপ থাকতে পারলেন না কাতিয়া অ্যাভেইরো। ভাইকে অনুপ্রেরণার পাশাপাশি কাতিয়া দীর্ঘ চিঠিতে একহাত নিয়েছেন নিন্দুকদেরও।

রোনালদোকে লেখা কাতিয়ার সেই চিঠিটি এমন:

‘ক্রিস্তিয়ানো, আমি শুধু তোমাকে এই কথাগুলোই বলতে চাই। মাত্র ১২ বছর বয়সে তুমি যখন কান্নাভেজা চোখে লিবসনে পাড়ি জমাও, তুমি শুধু নিজেকে ম্যাদেইরার একজন শিশু ভাবলেও তোমার চোখে-মুখে মুখে ছিল আশা।

এরপর ধারাবাহিকভাবে কাতিয়া লিখে যান, ‘এরপর ৫ বছরের কম সময় পর তুমি যখন লিসবনের মূল দলের হয়ে খেলা শুরু করলে, তারা (সমালোচক) বলত তুমি স্রেফ খামখেয়ালিতেই দক্ষ। কিন্তু নিন্দুকদের মুখে ছাই দিয়ে এর কয়েক মাস পরই তুমি ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে যোগ দিলে।

যখন তুমি ইংল্যান্ডে এলে, তারা বলত, তুমি শুধু ভবিষ্যতের একজন। কিন্তু ৬ মৌসুমেই তুমি ইউনাইটেডের হয়ে ১১৮টি গোল করেছ।

এরপর রিয়াল মাদ্রিদ যখন তোমাকে কিনে আনল, তারা বলত, তুমি শুধু জার্সি বিক্রির উৎস। কিন্তু ২০০৯ সাল থেকে এরই মধ্যে তুমি এই ক্লাবের হয়ে ৪১৮ ম্যাচে ৪২২ গোল করে ফেলেছ! এরই মধ্যে তুমি ব্যক্তিগত সব রেকর্ড অর্জন করে ফেলেছে এবং ক্লাব রিয়ালের সব রেকর্ডই ভেঙে চুরমার করে দিয়েছ।

২০০৮ সালে যখন তুমি প্রথম ব্যালন ডি’অর জিতলে, তারা বলেছিল, এই একটি ব্যালন ডি’অর জিতেই সন্তুষ্ট থাকতে হবে তোমাকে। তুমি আর জিতবে পারবে না। কিন্তু তুমি এরপর আরও ৪টি ব্যালন ডি’অর জিতেছ।

তুমি যখন পর্তুগাল জাতীয় দলের অধিনায়ক হলে, তারা বলত তুমি কারিশমাহীন, নেতৃত্বের চেতনাহীন অধিনায়ক। কিন্তু ২০১৬ সালে পর্তুগালের প্রথম অধিনায়ক হিসেবে ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা উঁচিয়ে ধরেছ তুমিই।

এখন, তুমি গত দুই-তিন মাস ধরে আগের মতো গোলের ফুল ফোটাতে পারছ না। তাতেই তারা বলতে শুরু করেছে তোমার ক্যারিয়ার শেষের দিকে। তুমি শেষ! ঠিক যেন বাকা কথার সাজানো গল্প। দুশ্চিন্তা করো না।

তুমি আবার যখন ট্রফি হাতে হাসিমুখে আইফেল টাওয়ারে দাঁড়াবে, কিংবা তুমি যখন গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে জয় নির্ধারক গোল করবে, কিংবা তুমি যখন আরেকটি রেকর্ড অর্জন করবে, তখনই তুমি তাদের দেখিয়ে দিতে পারবে।

অবশ্যই তারা তখন করতালি দেবে, তোমার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হবে। কারণ তোমাকে নিয়ে এটা করাটাই তাদের এখন বাকি।’

বড় বোনের এমন সঞ্জিবনী সুধা মেশানো চিঠি রোনালদো নিশ্চয় জেগে উঠবেন!

আজকের বাজার: সালি / ১৬ জানুয়ারি ২০১৮