রোহিঙ্গাদের জন্য ‘সেফ জোন’ গঠন সম্ভব নয়: মিয়ানমার

মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলরের কার্যালয়ের ইউনিয়ন মন্ত্রী চিয়াও তিন্ত সোয়ে বলেছেন, মিয়ানমারের উপর চাপ সৃষ্টি করার ক্রমাগত আহ্বান করছে বাংলাদেশ। মিয়ানমারের ভেতরে সেইফ জোন বা নিরাপদ অঞ্চল তৈরির চাপ রয়েছে। কিন্তু এ ব্যাপারে কোন নিশ্চয়তা দেয়া যাবে না এবং এটি বাস্তবসম্মতও নয়।

যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে মিয়ানমারের পক্ষে দেয়া ভাষণে তিনি একথা বলেন।

মিয়ানমারের মন্ত্রী বলেন, নির্বিঘ্ন এবং সফল প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে প্রকৃত রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও উদ্যোগের পাশাপাশি এ বিষয়ে সই করা চুক্তির শর্তও কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে। বাংলাদেশের সাথে যে প্রত্যাবাসন চুক্তি সই হয়েছে সেই চুক্তি অনুযায়ীই রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে আগ্রহী মিয়ানমার সরকার।

প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় নতুন কোন শর্ত অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করা হলে তা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

তিনি বলেন, ওই চুক্তির যথাযথ প্রয়োগ রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের একমাত্র উপায়। আর তাই দ্বিপক্ষীয় চুক্তি কঠোরভাবে মেনে চলতে ভাষণে বাংলাদেশের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

চিয়াও তিন্ত সোয়ে বলেন, প্রত্যাবাসন কর্মসূচী বাস্তবায়ন বাঁধাগ্রস্ত করতে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে ধ্বংসাত্মক আন্দোলনসহ যা সৃষ্টি করা হচ্ছে সে সম্পর্কে মিয়ানমার অবগত রয়েছে।

এর আগে জাতিসংঘ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে তুলে ধরেন ৪ দফা প্রস্তাব।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, রোহিঙ্গাদের টেকসই প্রত্যাবসন ও আত্মীকরণে মিয়ানমারকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে ও রাজনৈতিক স্বদিচ্ছাপূর্ণ প্রতিফলন দেখাতে হবে। বৈষম্যমুলক আইন ও রীতি বিলোপ করে মিয়ানমারের প্রতি রোহিঙ্গাদের আস্থা তৈরি করতে হবে এবং রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদের উক্ত রাখাইন সফরের আয়োজন করতে হবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় হতে বেসামরিক পর্যবেক্ষক মোতায়নের মাধ্যমে মিয়ানমার কর্তৃক রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চয়তা প্রদান করতে হবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় অবশ্যই রোহিঙ্গা সমস্যার মুল কারণসমুহ বিবেচনায় আনতে হবে। এবং মানবধিকার লঙ্গন ও অন্যান্য নৃশংসতার দায়বদ্দতা নিশ্চিত কতে হবে।

রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন চুক্তি অনুযায়ী, প্রত্যাবাসনে যোগ্যদেরকে পরিচয়পত্র দেয়া হবে এবং মিয়ানমারের নাগরিকত্বের আইন অনুযায়ী যোগ্যদেরকে নাগরিকত্ব কার্ড দেয়া হবে। বাকিরা ন্যাশনাল ভেরিকেশন কার্ডের আওতাভুক্ত হবে। এই কার্ড জাতিসংঘের অনুমোদিত অভিবাসীদের জন্য দেয়া গ্রিন কার্ডের মতো হবে।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনে মিয়ানমারের সামরিক অভিযানের পর বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা। জাতিসংঘ একে জাতিগত নির্মূল কর্মকাণ্ডের ‘টেক্সটবুক’ উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেছে। তবে নিজেদের বাহিনীর হাতে বড় মাত্রায় হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ নাকচ করেছে মিয়ানমার। মিয়ানমার, মূলত বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ একটি দেশ, সেনাবাহিনীর হাতে জাতিগত দমন এবং গণহত্যার অভিযোগ ধারাবাহিকভাবে অস্বীকার করে আসছে। তবে এখন তারা বলছে যে, তারা কিছু পরিমাণ শরণার্থী ফিরিয়ে নিতে প্রস্তুত। এ পর্যন্ত জাতিসংঘ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার চাপের মুখে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমার রাজি হলেও দুই দফায় প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নিয়েও একজন রোহিঙ্গাকেও স্বেচ্ছায় রাখাইনে ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি। মূলত নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে ওই দুই দফায় স্বেচ্ছায় মিয়ানমারে ফিরতে চায়নি কোন রোহিঙ্গা। ২০১৭ সালে সংঘটিত নিপীড়নের জন্য কোন জবাবদিহিতা নেই এবং নিজেদের চলাফেরায় স্বাধীনতা ও নাগরিকত্ব পাওয়া নিয়েও কোন নিশ্চয়তা নেই।

আজকের বাজার/এমএইচ