‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি না বলেও বার্তা পৌঁছেছে: পোপ

ময়ানমার সফরে ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি এড়িয়ে গেলেও আলোচনার পথ বন্ধ না করে দেশটির সরকার ও সামরিক বাহিনীর কাছে আসল বার্তা পৌঁছেছে বলে মনে করছেন সদ্য এশিয়া সফর থেকে ফেরা পোপ ফ্রান্সিস।

পোপ বলেন, আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টা হল, বার্তাটি ঠিকভাবে পৌঁছে দেওয়া, একবারে একটি বিষয়ে কথা বলা এবং অন্যপক্ষের জবাব শোনা। তিন দিনের ঢাকা সফর শেষে গতকাল শনিবার ২ ডিসেম্বর রোমের পথে বাংলাদেশ ছাড়ার পর উড়োজাহাজে সফরসঙ্গী সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন। এসময় তিনি ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি উচ্চরণ না করার ব্যাখ্যা দেন।

মায়ানমারের সেনা নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকে রোহিঙ্গাদের মানবাধিকারের প্রতি সম্মান জানানোর বিষয়টি দৃঢ়তার সঙ্গেই তুলে ধরেছেন বলে ইঙ্গিত দেন রোমান ক্যাথলিকদের এ সর্বোচ্চ ধর্মগুরু। সূত্র রয়টার্স।

গত শুক্রবার সন্ধ্যায় ঢাকায় রোহিঙ্গাদের তিনটি পরিবারের কাছ থেকে তাদের দুর্দশার কথা শুনতে শুনতে চোখ ভিজে আসার কথাও তিনি সাংবাদিকদের বলেন। তিনি বলেন, আমি কাঁদছিলাম ও তা লুকাতে চেষ্টা করছিলাম। ওই অনুষ্ঠানেই পোপ এশিয়া সফরে প্রথমবারের মত রোহিঙ্গা শব্দটি উচ্চারণ করেন।

রোমের পথে পোপ সাংবাদিকদের বলেন, আমি যদি বক্তৃতায় ওই শব্দটি ব্যবহার করতাম, তারা হয়ত আলোচনার পথ আমার মুখের ওপরই বন্ধ করে দিত। প্রকাশ্যে বক্তৃতায় আমি পরিস্থিতিটা তুলে ধরেছি। অধিকারের বিষয়গুলো সামনে এনেছি, বলেছি। নাগরিকত্বের অধিকার থেকে কাউকেই বঞ্চিত করা উচিৎ নয়। এটা করতে হয়েছে, যাতে একান্ত বৈঠকে আমি আরও কিছু বলতে পারি।

মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনীর ব্যাপক দমন-পীড়নের মুখে সোয়া ছয় লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। এমন এক সময়ে পোপ ফ্রান্সিসের এশিয়া সফর ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে।

মায়ানমারে দেওয়া ভাষণে পোপ সম্প্রীতির ডাক দিয়ে প্রতিটি জাতিগোষ্ঠীকে সম্মান দেখানোর আহবান জানালেও ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি উচ্চারণ না করায় বিষয়টি গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়।

বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠের দেশ মায়ানমারের রোমান ক্যাথলিক চার্চ সফরের আগেই পোপকে অনুরোধ জানিয়েছিল, তিনি যেন তার বক্তৃতায় ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি ব্যবহার না করেন। তাদের আশঙ্কা ছিল, পোপের মুখ থেকে ওই শব্দটি এলে মিয়ানমারের খ্রিস্টান ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের ওপর নতুন করে সহিংসতা শুরু হতে পারে।

গত ২৮ নভেম্বর ইয়াংগুনে পৌঁছানোর পরপরই মায়ানমারের সেনাপ্রধানের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় পোপ ফ্রান্সিসের। ওই বৈঠকের বিষয়ে পোপ সাংবাদিকদের বলেন, মায়ানমারের সেনাবাহিনীর সঙ্গে তার ‘ভালো’ আলোচনা হয়েছে এবং সত্য প্রকাশে সমঝোতার কোনো সুযোগ নেই।

সেনাপ্রধানের সঙ্গে বৈঠকে রোহিঙ্গা শব্দটি উচ্চারণ করেছিলেন কি না এ প্রশ্নে পোপ ফ্রান্সিস বলেন, যে বার্তা আমি দিতে চেয়েছি সেজন্য প্রয়োজনীয় শব্দই আমি ব্যবহার করেছি। যখন বুঝলাম, আমার বার্তা তাদের কাছে পৌঁছেছে, তখন আমার যা যা বলার ছিল সবকিছুই বলার সাহস পেলাম।

রোহিঙ্গা নিপীড়ন বন্ধে দৃঢ় অবস্থান নিতে ব্যর্থ হওয়ায় মায়ানমারের নেত্রী অং সান সু চির অবস্থানকে পোপ ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখছেন। গত ২৮ নভেম্বর মায়ানমারে সু চির সঙ্গে বৈঠক প্রসঙ্গে পোপ বলেন, রূপান্তরের মধ্যে দিয়ে মায়ানমার রাজনৈতিকভাবে বিকাশের পর্যায়ে রয়েছে। সুতরাং সেই চোখ দিয়েই বিষয়গুলো দেখতে হবে। রাষ্ট্রগঠনের কাজ এগিয়ে নেওয়ার জন্য মায়ানমারকে ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখেই এগোতে হবে।

আজকের বাজার:এলকে/এলকে ৩ ডিসেম্বর ২০১৭